ভাসমান কৃষি, পানির ওপর শস্যখনি

স্থানীয়ভাবে তৈরি বিশেষ এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব এবং সাশ্রয়ী

সংরক্ষিত ছবি

ফিচার

ভাসমান কৃষি, পানির ওপর শস্যখনি

  • প্রকাশিত ১৮ জুলাই, ২০১৮

কমপক্ষে ২০০ বছর আগে থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জলমগ্ন পরিবেশে কৃষকরা স্থানীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে উদ্ভাবিত ভাসমান কৃষিপদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করে আসছে। জলবায়ু-সহিষ্ণু নিজস্ব এ উদ্ভাবনী দেশের জলমগ্ন অন্য এলাকায়ও ছড়িয়ে দিতে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, জলাশয়ে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে দেশের চাহিদার দ্বিগুণের বেশি উৎপাদন সম্ভব হবে। এ নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন- নাহিদ বিন রফিক

বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই কৃষক, যারা কেবল চাষাবাদের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতি বর্ষা মৌসুমে এদেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলে প্রায়ই বন্যা দেখা দেয়। কোথাও কোথাও বছরের ৫-৬ মাস বা তারও বেশি সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এতে শস্যহানি কিংবা উৎপাদন ব্যাহত হয়। এই সময়ে ফসল আবাদ না থাকায় কৃষকরা অলস সময় কাটান। ফসল আবাদহীন এমন অলস সময় থেকে উত্তরণের প্রচেষ্টা হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের বেশ ক’টি গ্রামের কৃষক নিজেদের উদ্যোগে উদ্ভাবন করেছেন ভাসমান কৃষির লাগসই প্রযুক্তি। স্থানীয়ভাবে তৈরি বিশেষ এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব এবং সাশ্রয়ী। এই পদ্ধতির চাষাবাদ ঠিক কখন থেকে শুরু হয়েছে সঠিক সময়টি কেউ না বলতে পারলেও ধারণা করা হয়, কমপক্ষে দেড়শ’ থেকে দুইশ’ বছর আগে শুরু হয়। স্থানীয়দের অভিমত, পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরের চাষিদের হাত ধরেই ভাসমান কৃষির এই পদ্ধতির যাত্রা শুরু। তারপর এই পদ্ধতি বরিশালের বানারিপাড়া ও পিরোজপুরের নেছারাবাদে সম্প্রসারিত হয়। পরবর্তীতে বরিশালের আগৈলঝাড়া, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়ায় এবং তারও পরে ছড়িয়ে পড়ে সিলেট, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মিয়ানমার, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, নেদারল্যান্ডস, মেক্সিকো এবং পেরুতে এ পদ্ধতির প্রচলন আছে।

ভাসমান কৃষি পানিবন্দি কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। এ প্রযুক্তিতে চাষাবাদ করে চাষিরা স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাদের জীবনমানও হয়েছে উন্নত। পানিতে ভাসমান অবস্থায় চাষ করা হয় বলেই এর নাম ভাসমান কৃষি। এই পদ্ধতিতে প্রথমে পানির ওপর বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ যেমন- কচুরিপানা, দুরালিলতা, কলমিলতা এবং এ জাতীয় জলজ আগাছা স্তরে স্তরে সাজিয়ে এক ধরনের বেড তৈরি করা হয়। এর ওপর পচানো ক্ষুদ্র জলজ উদ্ভিদ যেমন- টোপাপানা, সোনা শেওলা, সেই সঙ্গে নারিকেলের ছোবড়ার গুঁড়া সমান করে বিছিয়ে দেওয়া হয়। ভাসমান বেডকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ধাপ। বেড সাধারণত ১২০ হাত (১৮০ ফুট) দৈর্ঘ্য, ৩ হাত (৪.৫ ফুট) প্রস্থ এবং ২ হাত (৩ ফুট) উচ্চতা হয়ে থাকে। এর নাম এক রশি। আবার প্রতি ৬ হাত দৈর্ঘ্যকে বলে এক নল। কারো কারো ধাপ ৬০ হাত (৯০ ফুট) লম্বা হয়। জমির পরিমাণ অনুযায়ী ছোট-বড় হতে পারে। তবে এক রশির চেয়ে বেশি নয়। দৈর্ঘ্য কম বেশি হলেও প্রস্থ এবং উচ্চতা নির্দিষ্ট পরিমাণই রাখতে হয়। ধাপে সরাসরি বীজ বপন সম্ভব নয়। তাই বিশেষ পদ্ধতিতে বীজ গজিয়ে পরে বেডে স্থানান্তর করতে হয়। এই কাজটি মহিলারা করে থাকেন। টোপাপানা, শেওলা জাতীয় লতাগুলো হাতের তালুর একমুঠ পরিমাণ নিয়ে দুরালিলতা দিয়ে পেঁচিয়ে বলের মতো তৈরি করা হয়। এর স্থানীয় নাম দৌল্যা। কেউ কেউ মেদাও বলে। কেউ বলে মেন্দ। দৌল্যার মধ্যে বাঁশের কঞ্চি ঢুকিয়ে ফসলের অঙ্কুরিত বীজ বসিয়ে দেওয়া হয়। পরে মাটিতে রেখে দেওয়া হয় এভাবে ৭-৮ দিন। একজন নারী গৃহস্থালির কাজ শেষে দৈনিক প্রায় ১৫০০ মেদা বানাতে পারেন। আর এ জন্য পারিশ্রমিক পান হাজারে ১০০ টাকা।

নাজিরপুর উপজেলার দেউলবাড়ি, বিলডুমুরিয়া, পদ্মডুবি, মনোহরপুর, গাওখালী, মালিখালী, খলনি, পাকুরিয়া, উত্তর কলারদোয়ানিয়া, মুগারঝোর, বেলুয়া মুগারঝোর, পোনাখালী, মিঠারকুল, সাচিয়া; নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া, গগন; বানারিপাড়া উপজেলার উমারের পাড়, মলুহার, কদমবাড়ি, বিশালকান্দি; কোটালীপাড়ার বাইগ্যারবিল এবং টুঙ্গিপাড়ার চান্দারবিল ও বর্ণীর বিলের কৃষকরা ভাসমান কৃষির নিপুণ কারিগর। ধাপে প্রায় ২৫ ধরনের শাকসবজি ও মসলা জাতীয় ফসল এবং চারা উৎপাদন হয়। এসবের মধ্যে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে, শিম, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, পুঁইশাক, করলা, শসা, বরবটি এবং মরিচ অন্যতম। ভাসমান বেডে আমন ও বোরো ধানের বীজতলাও তৈরি করা যায়। বেডে উৎপাদিত সবজির চারা ধরন অনুযায়ী কম-বেশি হয়। যেমন- লাউ ও বেগুনের চারা ৯ ইঞ্চি অন্তর। সে হিসেবে এক রশি ধাপে ২৫০০ চারা বসানো যায়। টমেটো, শিমের দূরত্ব ৫-৬ ইঞ্চি। চারা বসে চার হাজার। তবে পেঁপে, মরিচ ও করলার ক্ষেত্রে ৮ ইঞ্চি। চারার সংখ্যা ৬ হাজার। দৌল্যায় জন্মানো চারা ধাপে রাখার ৭-৮ দিন পর পচা কচুরিপানা বা এর শিকড় দিয়ে পেঁচিয়ে দেওয়া হয়। এ কাজকে স্থানীয় ভাষায় লাতা বলে। এতে চারার বাড়বাড়তি ভালো হয়। অতিবৃষ্টির কারণে ছত্রাকজনিত রোগ যেমন- চারার কাণ্ড পচা, পাতায় ফোঁটা দাগ এবং পাতা পোড়া এসব রোগ দেখা দিতে পারে। প্রতিকারের জন্য যেকোনো ছত্রাকনাশক অনুমোদিত মাত্রায় সাত দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। চারার গোড়া যেন শুকিয়ে না যায়, তাই প্রতিদিন হালকা সেচ দিতে হয়। ধাপ পানিতে ভেসে যেতে পারে। সেজন্য খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা প্রয়োজন। বন্যা যতই হোক, কোনো অসুবিধা নেই। অতি বৃষ্টি ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে এর প্রতিরোধ ব্যবস্থাও আছে। বাঁশের খুঁটির সাহায্যে বেডের ওপর ছাউনি দিলেই নিরাপদ। যত্নআত্তি ঠিকমতো হলে ২৫ দিনে চারা বাজারজাতকরণের উপযুক্ত হয়। চাষিরা ৪ মাসে ৫ বার চারা উৎপাদন করতে পারেন। বাংলা আষাঢ় থেকে আশ্বিন মাস। বাকি সময় কেউ শাকসবজি, কেউ আবার বোরো ধান আবাদ করেন। এক রশি ধাপ তৈরিতে খরচ হয় ১২ হাজার টাকা। প্রতিবার সবজির চারা উৎপাদনের জন্য ৪ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচবারের খরচ ২০ হাজার টাকা। মোট ব্যয় ৩২ হাজার টাকা। চারা বিক্রি করে পাওয়া যায় ৫০-৫২ হাজার টাকা। এ ছাড়াও অকেজো ধাপ দুই হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। এগুলো জৈবসারের চমৎকার উৎস। এ প্রসঙ্গে কথা হয়, বানারিপাড়ার উমারেরপাড়ের বেশ কয়েকজন ধাপচাষির সঙ্গে। সুলতান হাওলাদার, বয়স আনুমানিক ৫০ বছর। বাবার হাত ধরে এ পেশায় প্রায় ৪০ বছর চলছে। দীর্ঘদিনের শ্রম ও মেধার বিনিময়ে নিজেকে তৈরি করে নিয়েছেন একজন সফল চাষিরূপে। আগের মতো সংসারে অভাব নেই। বাবার রেখে যাওয়া সম্পদ বেড়েছে কয়েক গুণ।

লেখক : টেকনিক্যাল পার্টিসিপেন্ট, কৃষি তথ্য সার্ভিস ও পরিচালক, কৃষিবিষয়ক আঞ্চলিক অনুষ্ঠান, বাংলাদেশ বেতার, বরিশাল;

ই-মেইল : pnahid@gmail.com

 

 

বিশেষজ্ঞ মতামত

dr. jahanggir

ভাসমান চাষ পদ্ধতি কৃষির জন্য আশীর্বাদ

-ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে ক্ষতির সম্ভাবনা আছে তা ভাসমান চাষ পদ্ধতি দিয়েই অনেকটা মোকাবেলা করা সম্ভব। আশার খবর হচ্ছে, যদি ভাসমান চাষাবাদ পদ্ধতি ও কৌশল দেশের উপযুক্ত স্থানে গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে ফল আসতে বেশি সময় লাগবে না। বাংলাদেশের যেসব এলাকায় অবারিত জলসীমানা ৫ থেকে ৬ মাস খালি পড়ে থাকে, সেসব স্থানে পরিবেশবান্ধব ভাসমান সবজির বীজতলা তৈরি ও সবজি উৎপাদন পদ্ধতি অনায়াসেই অনুসরণ করা যায়। ভাসমান চাষ পদ্ধতিকে আরো ফলপ্রসূ করতে যেসব কাজ করতে হবে- ১. মানসম্মত বীজ ব্যবহার ও চাহিদাভিত্তিক বীজের জোগান নিশ্চিত করা। ২. বীজ, সার, বালাইনাশক উপকরণের গুণগতমান ও সহজপ্রাপ্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা। ৩. চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পুঁজি ও সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করা। ৪. উৎপাদিত চারা এবং সবজির সুষ্ঠু বাজারজাত নিশ্চিতকরণ। ৫. প্রয়োজনীয় উপকরণ ও উৎপাদিত পণ্য পরিবহনে উন্নত ব্যবস্থা করা। ৬. এলাকায় প্রয়োজনীয় হিমাগার স্থাপন করা। ৭. কচুরিপানা চাষাবাদ করার কৌশল উদ্ভাবন। ৮. সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রয়োজনীয় সহায়তা বা পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপন করা। ৯. শুষ্ক মৌসুমে জলাশয়ের পরিবর্তে খালে বা পতিত জলসীমায় এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে উৎসাহিত করা। ১০. প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এ কাজগুলো যথাযথভাবে করতে পারলে ভাসমান শাকসবজি চাষ আমাদের অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। ১১. দেশের অন্যান্য উপযোগী স্থানে এই প্রযুক্তি বিস্তৃত করা।

— কৃষিবিদ ও অতিরিক্ত পরিচালক, ক্রপস উইং, খামারবাড়ি, ঢাকা।

 

pqtwary

সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক ভাসমান চাষ

-মো. সাইফুল ইসলাম পাটোয়ারি

জলাশয়কে কাজে লাগিয়ে ভাসমান পদ্ধতিতে চাষ করে দেশের চাহিদার চেয়ে দ্বিগুণ সবজি উৎপাদন সম্ভব। বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সরকার ভাসমান সবজি ও মসলা চাষ জনপ্রিয় করতে উদ্যোগ নিয়েছে। যার ফলে কৃষকদের নিজস্ব উদ্ভাবনী এ পদ্ধতিতে সারা বছরই ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। এ পদ্ধতির চাষাবাদে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার হয় না। চাষের জন্য বাড়তি জমির প্রয়োজন পড়ে না। ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি ও মসলা চাষে ইতোমধ্যে সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)। উদ্ভাবিত জাত এখন মাঠপর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষের অপেক্ষায়। এজন্য আলাদা প্রকল্প হাতে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। গবেষণা চালানোর পাশাপাশি এখন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। আশাবাদের ব্যাপার হচ্ছে, ভাসমান ধাপ পদ্ধতির ফসল উৎপাদন এলাকা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূল উদ্ভাবন ক্ষেত্র বরিশাল, পিরোজপুর ও গোপালগঞ্জের বিভিন্ন বিল এলাকার পাশাপাশি এটা ছড়িয়ে পড়ছে যশোর ও খুলনার জলাবদ্ধ এলাকায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাই হ্রদেও তা পরীক্ষামূলকভাবে চাষের প্রচেষ্টা চলছে। দেশে নিচু জলাশয়ের পরিমাণ প্রায় ৩০ লাখ হেক্টর। জলাশয়ে ভাসমান পদ্ধতিতে এই ৩০ লাখ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা  গেলে ২৪.৮৬ মিলিয়ন টন উৎপাদন করা যাবে, যা দেশের চাহিদার অর্ধেক। আগামীতে এ প্রকল্প সারা দেশের জলাবদ্ধ এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে, এই প্রত্যাশা নিয়েই আমরা কাজ করছি।

—প্রকল্প পরিচালক, ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা

সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্প, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা।

 

Dr Wohab

উন্নত ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা জরুরি

-ড. মো. আবদুল ওহাব

দক্ষিণাঞ্চলে ও সিলেটের হাওরাঞ্চলে ভাসমান সবজি চাষ সম্প্রসারণের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার ফলে দেশের বন্যাপ্লাবিত বা জলমগ্ন অবস্থায় ভাসমান কৃষির মাধ্যমে শাকসবজি ও মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ শীর্ষক একটি সমন্বিত প্রকল্প (২০১৭-২২) বাস্তবায়নের কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ভাসমান কৃষিভিত্তিক আধুনিক লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে পাঁচটি বিভাগে ১৩টি জেলায় ২৫টি উপজেলায় প্রয়োজনীয় গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। অন্যদিকে বাংলাদেশে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার উন্নয়নের লক্ষ্যে শাকসবজি ও মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, বিএআরআই কর্তৃক উদ্ভাবিত ভাসমান কৃষির লাগসই প্রযুক্তিসমূহ ৮টি বিভাগে ২৪টি জেলায় ৪৬টি উপজেলায় কৃষকদের মধ্যে সম্প্রসারণ করবে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রায় ৩০ লাখ হেক্টর মধ্যম নিচু থেকে অতি নিচু জমি রয়েছে। গবেষণার মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য ভাসমান কৃষির স্থানভিত্তিক উন্নত ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা এখন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। 

— মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং প্রকল্প পরিচালক, ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা

সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্প, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, বরিশাল।

 

Alimur

খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার উন্নয়নে সহায়ক হবে

-ড. মো. আলিমুর রহমান

বরিশালের বিএআরআই আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্রের প্রচলিত ভাসমান কৃষি পদ্ধতির উন্নয়নে বিজ্ঞানীরা ২০১৪ সাল থেকে সমন্বিতভাবে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। গবেষণা কাজের মধ্যে রয়েছে প্রচলিত ভাসমান বেডের উন্নয়ন, বেডে উৎপাদিত ফসলের বহুমুখীকরণ, সবজি/মসলা ফসলের মানসম্পন্ন চারা উৎপাদন, কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, সার ব্যবস্থাপনা, ভাসমান বেডের উপযোগী ফসল বিন্যাস উদ্ভাবন এবং রোগবালাই ও পোকামাকড়ের সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন। লতা জাতীয় সবজি গাছের যথাযথ বৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য প্রচলিত ভাসমান বেডের ওপর প্রয়োজনীয় জায়গা না থাকায় গবেষণার মাধ্যমে ভাসমান বেড ও মাচা পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে, যা কম জোয়ারভাটা বা জোয়ারভাটাবিহীন এলাকার জন্য উপযোগী। এ প্রযুক্তিতে লতা জাতীয় সবজি যেমন- শসা, লাউ, কুমড়া, চিচিঙ্গা, বরবটি, করলার ভালো ফলন পাওয়া গেছে। আন্তঃফসল হিসেবে লালশাক, ধনেপাতা, মরিচ প্রভৃতি চাষ করা যাবে।  কারণ এতে প্রচলিত ভাসমান পদ্ধতির চেয়ে ফসলের উৎপাদন ও নিবিড়তা বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভাসমান বেড তৈরিতে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে এই পদ্ধতিতে ৫০-৬০ শতাংশ কচুরিপানা কম লাগে। সীমিত পরিমাণ কচুরিপানার ভাসমান বেড উদ্ভাবন পদ্ধতির আওতায় প্লাস্টিক ড্রাম ও পিভিসি পাইপভিত্তিক ভাসমান বেডে লতা জাতীয় সবজির সঙ্গে সমন্বিতভাবে মাছ চাষের ওপরও গবেষণা চলছে।

— ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (কৃষিতত্ত্ব), আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, বরিশাল।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads