ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশকেও পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র

ছবি : সংগৃহীত

বিদেশ

ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশকেও পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র

  • আহমদ আতিক
  • প্রকাশিত ২৫ নভেম্বর, ২০১৮

এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য নিজেদের ঘোষিত ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে বাংলাদেশকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র। মূলত চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের প্রতিক্রিয়াই হলো যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক কৌশল। এ জন্য গত বছরের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া মিলে ফিলিপিন্সের ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত আসিয়ান জোটের শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি এক বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক নামে একটি জোট গঠনে মতৈক্যে পৌঁছেন। শুধু তাই নয়, ভারতের জন্য মার্কিন-প্যাসিফিক কমান্ডের নাম পরিবর্তন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই কৌশলের মূল লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক এবং সামরিকসহ সব ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকে চাপে রাখা। বাংলাদেশকে এ কৌশলে যুক্ত রাখতে ঢাকা সফর করেছেন একাধিক মার্কিন কর্মকর্তা।

ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি পুরনো উদ্বেগের নতুন পরিভাষা। মূলত এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব খর্ব করতে ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ স্ট্র্যাটেজি রচনা করছে। ভারত এখন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদার। অনেক আগে থেকেই প্রভাব বলয় বিস্তারের রাজনীতিতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এই দ্বন্দ্বে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত। চীনের সঙ্গে ভারতের দ্বন্দ্বকেও কাজে লাগাতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড কর্মসূচি এ অঞ্চলে নতুন করে এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম দিয়েছে। তাই একুশ শতকে এসে সোভিয়েত ইউনিয়নের বদলে চীন এখন যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেট। চীনের বিরুদ্ধে মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভারতকে ব্যবহার করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড কর্মসূচির ব্যাপারে ভারতেরও আপত্তি রয়েছে। যদিও বাংলাদেশ এ প্রকল্পকে ভালো চোখেই দেখে।

এ ব্যাপারে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস জানিয়েছেন, ইউএস প্যাসিফিক কমান্ডকে এখন থেকে ইউএস-ইন্দো প্যাসিফিক-কমান্ড নামে ডাকা হবে। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে বাড়তে থাকা সংযোগের স্বীকৃতি দিতেই ইউএস প্যাসিফিক কমান্ডের নাম পরিবর্তন করে ইউএস ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড করা হলো।

এ কৌশলের অংশ হিসেবে গত মার্চে বিষয়টি নিয়ে হোয়াইট হাউজের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা লিজা কার্টিস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকী ও পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন। মূল বৈঠকটি হয় পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির বিষয়টি উত্থাপন করা হলে বাংলাদেশ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চায়। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনো এ বিষয়ে কোনো কনসেপ্ট নোট দেয়নি।

কূটনৈতিক সূত্রমতে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার হলো জ্বালানি সরবরাহ, বাণিজ্য উন্নয়ন ও মেরিটাইমের নিরাপত্তা সহযোগিতা। বাংলাদেশেরও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ভারত মহাসাগরে মেরিটাইম ডোমেইন ফিউশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ভারত মহাসাগরে উপস্থিতি বাড়ানো। এ সেন্টারে যোগ দিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এরই মধ্যে বাংলাদেশকে প্রস্তাবও দিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ড্যানিয়েল এন রোজেনব্লুম বাংলাদেশ সফরকালে এ প্রস্তাব দেন। এ ছাড়া বাংলাদেশকে সামরিক লজিস্টিক চুক্তির প্রস্তাবও দেয় দেশটি।

পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক জানান, প্রায় দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান মিলে একটি ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল ঘোষণা করে। বাংলাদেশ প্রথম থেকেই এ আলোচনায় যুক্ত ছিল। বিষয়টির হালনাগাদ তথ্যও আমাদের জানিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানও জানতে চায় তারা। আমরা চিন্তাভাবনা করছি বলে জানিয়েছি।

বাংলাদেশ এখন একটা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র মন্তব্য করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সেজন্য সবাই অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে আলাদা চোখে দেখে।

এদিকে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের অধীনে বাংলাদেশকে ৪ কোটি ডলার দেবে যুক্তরাষ্ট্র। গত ২০ আগস্ট ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপসহকারী সচিব এলিস জি ওয়েলস এই তথ্য জানান।

ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বিষয়ে ঢাকায় সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট তার বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই স্ট্র্যাটেজির লক্ষ্য হচ্ছে— ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সমৃদ্ধির স্বার্থে নিজেদের সম্পদ কাজে লাগানো। এটি কোনোভাবেই চীনের পাল্টা উদ্যোগ নয়। পৃথিবীর মোট অর্থনীতি এবং মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশির উপস্থিতি ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। এই অঞ্চলে নৌ চলাচল যদি অবাধ না হয়, তবে বাংলাদেশের প্রধান রফতানিজাত পণ্যের পরিবহন কীভাবে হবে? তাই ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির মূল কথা— আমরা সবাই অভিন্ন নীতি মেনে চলব, যার সুফল আমরা সবাই পাব। শুধু একটি দেশ এর সুফল ভোগ করবে না।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলাদেশ কোনো বিশেষ ক্যাম্পে যোগ দেওয়াটা যুক্তিসঙ্গত হবে না। প্রতিযোগিতার সম্পর্ক থেকে সহযোগিতার সম্পর্কের ওপর জোর দিলে সব পক্ষ লাভবান হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads