ব্যাডমিন্টনের গ্ল্যামার গার্ল

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

ব্যাডমিন্টনের গ্ল্যামার গার্ল

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ২১ মার্চ, ২০২১

-কেমন আছেন?

এলিনা সুলতানা : আছি ভালোই।

-ব্যাডমিন্টনের হাতেখড়ি কবে থেকে শুরু?

এলিনা সুলতানা : ২০০১ সালে খুলনা থেকে শুরু পরিবারের সমর্থনে। আমার পরিবারের সবাই খেলা পছন্দ করে। আমি যখন ব্যাডমিন্টন খেলতে চাইলাম বাবা-মা আমাকে আরো বেশি করে অনুপ্রেরণা দিলেন। তো এইভাবে শুরু।

-তারপর এগিয়ে যাওয়ার পালা?

এলিনা সুলতানা : এরপর সাফল্যের সাথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। ২০০৮ থেকে ব্যাডমিন্টনে আমার হাতেখড়ি। ২০১০-এ প্রথম জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হই। একই বছর এসএ গেমসে অর্জন করি ব্রোঞ্জ। সেই বছর আসে ইন্দোবাংলা ব্যাডমিন্টনের রৌপ্য। দুবার অর্জন করি নেপাল চ্যালেঞ্জের ব্রোঞ্জ। জাতীয় পর্যায়ে সব মিলে এককে দুবার আর দ্বৈতে চারবার সেরার মুকুট পেয়েছি। আছে সামার ওপেনের শ্রেষ্ঠত্বও।

-বাংলাদশে ব্যাডমিন্টনের কোন কোন পর্যায়ে খেলা অনুষ্ঠিত হয়?

এলিনা সুলতানা : আমাদের দেশে জাতীয় পর্যায়ে খেলা হয় ফার্স্ট ডিভিশন, সেকেন্ড ডিভিশন, সামার ওপেন। আর আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশে খেলা হয়। এই সামনের ডিসেম্বর মাসে খেলা হবে। একটি সিনিয়র ওপেন ইন্টারন্যাশনাল আর একটি জুনিয়র ওপেন ইন্টারন্যাশনাল। সিনিয়র ওপেন ইন্টারন্যাশনালে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে যারা তারা অংগ্রহণ করেন। জুনিয়র ওপেন ইন্টারন্যাশনালে ১৮ বছরের নিচে যারা তারা অংশগ্রহণ করেন।

-ব্যাডমিন্টনে দেশের নারীদের অবস্থান কোথায়?

এলিনা সুলতানা : আমরা যারা মেয়ে শাটলার আছি, আমাদের দেশের ব্যাডমিন্টনে সাফল্য আমরাই নিয়ে এসেছি। আমরা যখন এসএ গেমসে অংশ নিই ২০১০ সালে, সেবার ব্রোঞ্জ পদক লাভ করি। ২০১৬ সালে ব্রোঞ্জ অর্থাৎ ২০১৬তে নেপালে আমি আর শাপলা ডাবলসে ব্রোঞ্জ পাই, মিকসড ডাবলসেও ব্রোঞ্জ পাই, মোট তিনটা ২০১৬তে। ২০১৭তে একই আমি আর শাপলা ডাবলসে ব্রোঞ্জ মেডেলিস্ট। আপনার হচ্ছে এরকম বড় আসরে আলাদা ও দ্বৈতভাবে জেতা। কিন্তু খুবই কঠিন যা এদেশে মেয়েরাই এনে দিয়েছে।

-তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন, এদেশের ব্যাডমিন্টনে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের অবস্থান ভালো?

এলিনা সুলতানা : অন্যান্য দেশের তুলনায় ব্যাডমিন্টনে বাংলাদেশের ছেলেরা অনেক এগিয়ে। তারা সব সময় আলোচিত থাকেন দেশে-বিদেশে। সে অনুসারে তাদের যে ফলাফল এনে দেওয়ার কথা তারা কিন্তু তা এনে দিতে পারেনি। সেই হিসেবে আমরা নারী শাটলাররাই আন্তর্জাতিক সম্মান এনে দিয়েছি। এত কিছু সত্ত্বেও ছেলেরা যেমন গ্রহণযোগ্যতা পায় মেয়েরা সে অনুসারে পায় না।

-আমাদের দেশে ব্যাডমিন্টনে কি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা আছে?

এলিনা সুলতানা : আমাদের যদি সুদূরপ্রসারী প্ল্যান থাকত যে আমরা ২০২০ সালের মধ্যে এরকম একটা ফলাফল করব, তাহলে একটা না একটা ফলাফল পাওয়া যেত। এক বছরের পরিকল্পনা করে কতটুকুই বা আউটপুট বের করা যায়। সে জন্য লং টার্ম অর্থাৎ ৫ বছর বা ১০ বছরের পরিকল্পনা করলে ভালো হবে।

-তাহলে কি শুধু পরিকল্পনা না থাকার কারণে দেশীয় ব্যাডমিন্টনে খেলায় ঈপ্সিত উন্নতি হচ্ছে না?

এলিনা সুলতানা : আসলেও তাই। আমাদের কোনো পরিকল্পনা না থাকার কারণে আমারা ব্যাডমিন্টনে পিছিয়ে আছি। যেহেতু কোনো পরিকল্পনা থাকে না, তাই যে-কোনো টুর্নামেন্টে দায়সারাভাবে চলে যায়। মূল সমস্যা হচ্ছে যথার্থ পরিকল্পনার অভাব।

-তবে কি শুধু পরিকল্পনার কারণেই আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি, না অন্য কোনো কারণও আছে?

এলিনা সুলতানা : আমি যখন এশিয়া গেমসে ওমেন্স কোঅর্ডিনেটর হিসেবে যাই সেখানেও আমাকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। আসলে আমাদের দেশে অশিক্ষিতের হার বেশি। অধিকাংশ পরিবারই কিন্তু অশিক্ষিত। দেখা যাচ্ছে, মেয়েটি গরিব পরিবার থেকে আসে, সে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলা চালিয়ে যেতে পারে না।

-কেন? দুটো একসাথে চালিয়ে যেতে অসুবিধা কোথায়?

এলিনা সুলতানা : যেমন আমার কথা দিয়েই না হয় বোঝাই। আমি তো ২০১৬তে মাস্টার্স করেছি। ২ মাস খেলা বাদ দিয়ে পুরো পড়াশোনায় ধ্যান দিয়েছি। তারপর আবার খেলায় যোগ দিয়েছি। আমার মতো সব পরিবারে এক অবস্থা নেই। অনেক পরিবারে মেয়েরা খেলার জন্য পড়াশোনাকে বিসর্জন দেয়। কারণ পড়াশোনা চালিয়ে গেলে পরীক্ষাসংক্রান্ত কারণে খেলা বন্ধ রাখলে আয়ের উৎসও বন্ধ হয়ে যায়।

-ঘরের বাইরে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা?

এলিনা সুলতানা : ঘরের বাইরে অবশ্যই প্রতিবন্ধকতা আছে বইকি। শহরে তেমন একটা না হলেও গ্রামের কোনো মেয়ে যখন খেলোয়াড়ের পোশাকে বের হয় তখন অনেককেই খোঁটা শুনতে হয়। গ্রামের উচ্ছৃঙ্খল ছেলেরা পেছন থেকে বাজে বাজে মন্তব্য করে। ফলে সামাজিকভাবে নারী খেলোয়াড়রা হেনস্তা হচ্ছে। এর সমাধানে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

-কেন? আমরা তো সব সময় আপনাদের পাশে আছি?

এলিনা সুলতানা : আমাদের দেশে ক্রিকেট খেলাকে যে পরিমাণ হাইলাইটস করা হয়, সে অনুসারে আমরা কখনোই লাইমলাইটে আসতে পারি না। অথচ আমরা বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছি।

-কোচ-কোঅর্ডিনেটর হিসেবে কীভাবে এগিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা আপনার?

এলিনা সুলতানা : সাউথ এশিয়ান রিজিয়নে বাংলাদেশ থেকে প্রথম নারী শাটলার হিসেবে আমি লেভেল ওয়ান কোচেস কোর্স করেছি। এটা করেছি আমাদের দেশের মেয়েদের জন্য। তাদের খেলায় এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য। কোচ, কোঅর্ডিনেটর দুটো কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। কোচের লাইন আলাদা আর কোঅর্ডিনেটরের লাইন আলাদা।

-যেমন?

এলিনা সুলতানা : কোচ হিসেবে আমি কাজ শুরু করেছি। তবে এত বড়ভাবে শুরু করিনি। অল্প কজন স্টুডেন্ট নিয়ে কোচিং শুরু করেছি। আর কোঅর্ডিনেটরের কাজ হচ্ছে যখন আমি বাংলাদেশের মেয়েদের উন্নয়নের জন্য নতুন কিছু বের করব, তাদের নিরাপত্তার জন্য চিন্তা করব, বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে বিদেশে নিজেকে উপস্থাপন করব, মূল কথা সার্বিক সমন্বয়ই হচ্ছে কোঅর্ডিনেশন।

-স্বামী এনায়েত উল্লাহ খানকে সব বিষয়ে তো পাশে পেয়েছেন?

এলিনা সুলতানা : আমি এনায়েতকে পেয়েছি বন্ধু-কোচ-স্বামীরূপে। আমার চেষ্টার সঙ্গে এনায়েতের সার্বিক সহযোগিতার কারণে আজকের আমি। ও দেশকে, ব্যাডমিন্টনকে খুব ভালোবাসে। আমাকে তাই সব সময় এ নিয়েই কাজ করতে বলে। শুধু ও নয়, আমিও স্বপ্ন দেখি ব্যাডমিন্টনে বাংলাদেশের মেয়েরা অনেক দূর যাবে।

-ব্যাডমিন্টনই তো আপনার ধ্যানজ্ঞান সব তাই না?

এলিনা সুলতানা : ব্যাডমিন্টনই তো আমার ধ্যানজ্ঞান সব। আমি চাই আমার মতো ব্যাডমিন্টনে মেয়েরা এগিয়ে আসুক। এটা আমার রক্তের সাথে মিশে আছে। এদেশকে আমি প্রচণ্ড ভালোবাসি। আর এই দেশপ্রেমের প্রতিদানে দেশকে কিছু দিতে চাই। দেশকে আরো গৌরব, সম্মান এনে দিতে চাই।

-কোর্টে ফিরবেন কবে?

-সামনে আমাদের বাংলাদেশ গেমস আছে। আমি আর আমার পার্টনার খেলেছি এক যুগ ধরে। এবার আমাদের নতুন চ্যাম্পিয়ন আসছে। তাদের স্বাগত জানাই। তাদের জন্য দোয়া করি। অবশ্যই ইচ্ছে আছে আমি ফিরব। ১ বছর পর যে যে টুর্নামেন্ট আছে সেখানে অংশগ্রহণ করব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads