সপ্তাহের ব্যবধানে আবারো চালের দাম বেড়েছে। বাজারে প্রতিকেজি চাল ৩ থেকে ৫ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া দাম বেড়েছে চিনি ও ভোজ্যতেলের। দাম কমেছে সবজি, নতুন আলু ও পেঁয়াজের। অন্যদিকে, অপরিবর্তিত রয়েছে ডিম, গরু ও খাসির মাংসসহ অন্যান্য পণ্যের দাম।
গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর মিরপুর, কারওয়ানবাজার, মোহাম্মদপুর, মালিবাগ, রামপুরা বাজার ঘুরে এসব চিত্র লক্ষ করা গেছে। এসব বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে পাঁচ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত দাম কমে প্রতিকেজি মুলা বিক্রি হয় ১০ থেকে ১৫ টাকা, শালগম বিক্রি হয় ১০ টাকা, গাঁজর ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বেগুন ২০ থেকে ৩০ টাকা, করলা ৩০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পাকা টমেটো ৪০ টাকা, কাঁচা টমেটো বিক্রি হয় ২০ থেকে ২৫ টাকা, বরবটি ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। প্রতি পিস লাউ আকারভেদে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়, বাঁধাকপি ও ফুলকপিতে ১০ টাকা কমে বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা, ফুলকপি ১৫ থেকে ২০ টাকার মধ্যে।
হালিতে ৫ টাকা কমে কলা বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ টাকায়, জালি কুমড়া ৩০ টাকা, ছোট মিষ্টি কুমড়া প্রতি পিস ১৫ থেকে ২০ টাকার মধ্যে। দাম কমেছে নতুন আলু ও পেঁয়াজের। কেজিতে ২০ টাকা কমে নতুন আলু বিক্রি হয় ২৫ টাকায়, নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। ১০ টাকা দাম কমে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয় ৮০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া আদা প্রতিকেজি ৮০ টাকা, রসুনের কেজি ১২০ টাকা বিক্রি হয়।
বাজারে প্রতিকেজি চিনিতে ৫ টাকা দাম বেড়ে বিক্রি হয় ৬৫ টাকায়। প্রতিকেজি চালে ৩ থেকে ৫ টাকা দাম বেড়ে আটাশ চাল বিক্রি হয় ৫৫ টাকা, পায়জাম ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, মিনিকেট ৬৫ টাকা, নাজির ৬৫ টাকা, পোলাওয়ের চাল ১০০ টাকা। খোলা ভোজ্যতেল লিটারে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ১২৫ টাকায়।
অপরিবর্তিত থাকে ডিমের দাম। এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হয় ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, হাঁসের ডিম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৬০ টাকা, ডজন বিক্রি হয় ১৬০ টাকা। ১০ টাকা দাম বেড়ে বিক্রি হয় সোনালী বা কক ১৯০ ও ব্রয়লার মুরগি কেজি ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। এসব বাজারে অপরিবর্তিত আছে ডিম, গরু ও খাসির মাংস, মসলাসহ অন্যান্য পণ্যের দাম।
বাজারে প্রতিকেজি খাসির মাংস বিক্রি হয় ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, বকরির মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, গরুর মাংস বিক্রি হয় ৫৫০ টাকা, মহিষ ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকা।
মিরপুর ১১ নম্বর বাজারের মাংস বিক্রেতা কাল্লু মিয়া বলেন, এখন বাজারে গরুর মাংস ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমাদের বাজারে গরুর মাংসের দাম কম আছে। কিন্তু যেসব বাজারে বেচাকেনা বেশি বা জমজমাট সেসব বাজারে ফের গরুর মাংস বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারভেদে গরুর মাংসের দাম উঠানামা করছে।
এসব বাজারে কেজিতে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে প্রতি এককেজি শিং মাছ (আকারভেদে) বিক্রি হয় ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকায়, প্রতিকেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, মাগুর মাছ ৬০০ টাকা, মৃগেল ১১০ থেকে ১৫০ টাকা, পাঙাস ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, ইলিশ প্রতিকেজি (আকারভেদে) বিক্রি হয়ে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, চিংড়ি প্রতিকেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বোয়ালমাছ প্রতিকেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, কাতল ১৭০ থেকে ২৮০ টাকা, ফোলি মাছ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, পোয়া মাছ ১৫০ থেকে ২২০ টাকা, পাবদা মাছ ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, টেংরা মাছ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০ টাকা, সিলভার কাপ ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, কই দেশি মাছ ১৫০ থেকে ৭০০ টাকা, কাঁচকি ও মলা বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, গুড়া বাইলা ১২০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, আইর মাছ ৫০০, রিডা মাছ ২২০ টাকা ও কোরাল ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।
রামপুরা বাজারের খুচরা বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম আবার বেড়েছে। প্রতিকেজি চালে তিন থেকে পাঁচ টাকা করে দাম বেড়েছে। চালের বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে এই মূল্যবৃদ্ধি।
খুচরা বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের ব্যারেল প্রতি দাম বেড়েছে। একারণে আবারো খুচরা বাজারে লিটার প্রতি পাঁচ টাকা বেড়েছে। মূলত করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে বাজারে কমেছে শ্রমিক, একই সাথে তেলের উৎপাদন কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ভোজ্যতেলের দাম আবার বাড়তে পারে বলে জানান রহিম।
কারওরান বাজারের চাল ব্যবসায়ী কবির উদ্দিন বলেন, অচিরেই আমদানিকৃত চাল বাজারে চলে আসবে এমন খবর আমরা পাচ্ছি। এর একটা প্রভাব পড়েছে বাজারে।
একই বাজারের সোনালী ট্রেডার্সের মালিক আবুল কাশেম বলেন, কোম্পানিগুলো যে দাম নির্ধারণ করেছে, ক্রেতারা সেই দামে তেল কিনতে চান না।
মালিবাগ বাজারের নুসরাত স্টোরের মালিক শাহজাহান মিয়া বলেন, বাজারে চাহিদামতো সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দাম বাড়তি। আমার আগের তেলই রয়েছে, তাই ১২২ টাকায় বিক্রি করতে পারছি।
দাম বাড়লেও বাজারে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে এবং কোনো সংকট নেই বলে জানান পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা। তিনি বলেন, তেলের বাজার ভয়াবহ খারাপ। দাম বাড়ছেই। ২৫ বছরের মধ্যে তেলের বাজারে এত দাম উঠল। গোলাম মওলা বলেন, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাষ্ট্র আমাদের আমদানির বড় বাজার। এসব দেশে করোনার কারণে উৎপাদন কম। এ ছাড়া চীন এবার ব্যাপক হারে তেল কিনেছে। ফলে সংকটের মধ্যে আরো সংকট তৈরি হয়েছে। মিল-মালিক ও সরকার পদক্ষেপ নিলে দামের হ্রাস টানা যেতে পারে বলে তিনি মনে করছেন।