বেনাপোল স্থলবন্দরে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গুদামঘর চালুর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, গুদামঘর না থাকার কারণে বন্দরে মালামাল খালাস করতে গিয়ে কয়েক দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে এবং ব্যবসায়ীদের প্রতিদিনের জন্য আড়াই হাজার টাকা অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে।
গতকাল রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত ‘ইন্দো-বাংলা বাণিজ্য বৃদ্ধিতে স্থলবন্দর পরিস্থিতি ইস্যু’ শীর্ষক সেমিনারে ব্যবসায়ীরা এ দাবি জানান। ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আইবিসিসি) এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারের উদ্বোধন করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। আইবিসিসি সভাপতি মাতলুব আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার তারেক করিম, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার আদর্শ সোয়াইকা, আইবিসিসি ভাইস প্রেসিডেন্ট সোয়েব চৌধুরী, আইবিসিসির এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট সাবকমিটির চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বক্তব্য দেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের কাটস ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক বিপুল চ্যাটার্জী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৌপরিবহনমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে শেখ হাসিনার সরকার ২৩টি স্থলবন্দর চালু করেছে। বর্তমানে ১০টি স্থলবন্দর চালু রয়েছে। আগামী মাসে সোনাহাট স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরু হবে। নতুন করে আরো কয়েকটি স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠা করা হবে বলেও জানান তিনি।
স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, শুধু স্থলবন্দরই নয়, সমুদ্র ও নদীবন্দরগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভারতের সঙ্গে নদীপথে যাত্রী পরিবহনের বিষয়েও চিন্তাভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী বলেন, স্থলবন্দরের কার্যক্রমের সঙ্গে কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, বিজিবিও জড়িত। এটি শুধু বন্দর কর্তৃপক্ষের একার দায়িত্ব নয়। বর্তমানে বন্দরের কার্যক্রম ম্যানুয়াল সিস্টেমে চলছে। তবে ই-পোর্ট ব্যবস্থাপনা চালুর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমাদের ব্যান্ডউইথ খুব ধীরগতির। এটির গতি বাড়াতে হবে। বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমরা ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছি। আমাদের কাস্টমস ক্লিয়ারিংয়ের যে পদ্ধতি রয়েছে সেটিকে আরো সহজ করতে হবে। তিনি বলেন, স্থলবন্দরগুলোর কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো সিস্টেমস চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত ভারতীয় হাইকমিশনার আদর্শ সোয়াইকা বলেন, স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়নে দুই দেশকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। বন্দরগুলোর মাধ্যমে যাত্রী পরিবহনে অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার তারেক করিম বলেন, পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। আমাদের এটা কাজে লাগাতে হবে। ভারতের সঙ্গে যে বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে তা আমাদের পক্ষে কমানো সহজ হবে না, এ বাস্তবতা আমাদের স্বীকার করতে হবে। এজন্য আমাদের ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
আইবিসিসি সভাপতি মাতলুব আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিপুল পরিমাণ সীমান্ত থাকা সত্ত্বেও এটিকে বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। আমাদের মোট রফতানির মাত্র ২ শতাংশ সীমান্ত দিয়ে হচ্ছে। অথচ কানাডার ৭০ শতাংশ বাণিজ্য হচ্ছে সীমান্ত দিয়ে। আমাদের সীমান্তগুলোর যে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে তা কাজে লাগাতে হবে। এজন্য আমাদের নতুন নতুন বিষয় যুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশ মাত্র ৬৫ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করছে, বিপরীতে ভারত ৬০০ কোটি ডলারের পণ্য বাংলাদেশে রফতানি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঘাটতি কমাতে হলে বাংলাদেশকে নতুন নতুন রফতানিযোগ্য পণ্য তৈরি করতে হবে।
আইবিসিসির এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট সাবকমিটির চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, স্থলবন্দরগুলোর মোট রফতানির ৯০ শতাংশই বেনাপোল বন্দর দিয়ে হচ্ছে। কিন্তু এ বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোটেও ভালো নয়। কোনো সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা নেই। ঢাকা বিমানবন্দরের মতো বিশেষ বাহিনীর মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি। এ ছাড়া পুরাতন ক্রেন ও যন্ত্রপাতি দিয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে উল্লেখ করে মতিউর রহমান বলেন, এতে বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনায় নানা ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। এজন্য অনতিবিলম্বে নতুন ক্রেন ক্রয়ের দাবি জানান তিনি।