হলিউড

বুনো সৌন্দর্যের আমন্ত্রণ!

  • বিনোদন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ৮ মার্চ, ২০২০

হলিউডের এ সময়ের ব্যস্ত ও আলোচিত অভিনেত্রী অলিভিয়া ওয়াইল্ড। অলিভিয়া ওয়াইল্ড নামটা তার বুনো সৌন্দর্যের সঙ্গেও কিন্তু মিলে যায় বেশ। সোনারঙা চুল, সবুজাভ চোখে মায়াবী চাহনি, প্রথম দেখায় ভালো করে নজরে পড়ে না এমন ঈষৎ টোল পড়া গাল ওয়াইল্ডের চেহারায় একটা বুনো সৌন্দর্যের আমন্ত্রণও আছে বৈকি! কিন্তু সত্যি বলতে কি, পারিবারিক উপাধি ‘ককবার্ন’ ব্যবহার না করে তিনি যে বেছে নিলেন ওয়াইল্ড, এর পেছনে আছে একটা গল্প। অলিভিয়া নিজে জন্মেছেন লেখক পরিবারে। তার মা লেসলি ককবার্ন নিজে সাংবাদিক, সেই আলোচিত সিক্সটি মিনিটসের প্রযোজক; বাবা অ্যান্ড্রু ককবার্নও সাংবাদিক। নানা ক্লাউড ককবার্ন ছিলেন লেখক। লেখক ছিলেন তার খালা সারাহ কডওয়েলও। তার বড় বোন অবশ্য লেখক না হয়ে হয়েছেন নিউইয়র্কের নামকরা আইনজীবী।

বেশ প্রতিষ্ঠিত একটা পরিবার থেকে উঠে আসা। তাদের বাড়িতে বাঘা বাঘা লেখক-বুদ্ধিজীবীর নিত্য যাতায়াত। মা-বাবার সুবাদে হলিউডে জায়গা করে নেওয়া তার জন্য ছিল ডালভাত। রোজ যেখানে প্রযোজক প্রতিষ্ঠানগুলোতে তারকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পাঠানো হাজারো জীবন বৃত্তান্তের স্তূপ জমা হয়, তিনি চাইলে সহজেই মায়ের হাত ধরে জায়গা করে নিতে পারতেন। কিন্তু না, কেউ যেন কখনোই এই অপবাদ দিতে না পারে, মা-বাবার বানিয়ে দেওয়া সিঁড়ি টপকে উঠে এসেছেন অলিভিয়া। সে জন্য ইচ্ছে করে বংশের পদবিটাই ছেঁটে ফেললেন! ককবার্ন বাদ দিয়ে হয়ে গেলেন ওয়াইল্ড।

কিন্তু এই পদবি বেছে নেওয়া কেন? হাইস্কুলে পড়ার সময়ই নামটা বেছে নিয়েছিলেন জানিয়ে অলিভিয়া বলেছেন, ‘নিজের পরিবারের বাইরে আমি নিজস্ব একটা পরিচয় গড়ে তুলতে চেয়েছি। আমার মা-ও এতে সায় দিয়েছেন। তিনিই আমাকে একটা আইরিশ নাম বেছে নিতে বলেন, যে নামটা আমাকে সব সময় অনুপ্রেরণা দেবে। সে সময় অস্কার ওয়াইল্ডের একটা নাটকে অভিনয় করছিলাম। বলা যায় চরিত্রটার প্রেমেই পড়ে গিয়েছিলাম। তখনই ভাবলাম অস্কার ওয়াইল্ডের মতো একজন বিপ্লবী, একজন কমেডিয়ান, দার্শনিকের নামটাই বেছে নিই না কেন।’

এমনও কিন্তু নয়, নাচতে নেমে ঘোমটা দিচ্ছেন। কিন্তু শুধু শরীরের সৌন্দর্য বিকিয়ে রুপালি পর্দার দেখনদারি-ব্যবসায় নাম কামাতে চান না। এ কারণেই এখনো পায়ের নিচে মাটি শক্ত না হলেও অডিশন দেওয়ার আগে চেয়ে নেন স্ক্রিপ্ট, গল্পটা দেখে নেন। এমনকি কোথায় কাহিনি মনপছন্দ না হলে নিঃসংকোচে পরিচালককে বলে দেন।

তবে এক চিমটি গ্ল্যামারের সঙ্গে দুই চিমটি অভিনয় মেশানোর রেসিপিটা তিনি ভালোই জানেন। হলিউডের সবচেয়ে বড় প্রযোজক প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সালের সঙ্গে প্রথম বড় বাজেটের ছবিতে কাজ করেই মুগ্ধ করছেন। ইউনিভার্সালের কো-চেয়ারম্যান ডোনা ল্যাঙ্গলি বলেছেন, ‘অলিভিয়া আমাকে অ্যাঞ্জেলিনা জোলির কথা মনে করিয়ে দেয়। জোলির মতোই দুর্দান্ত প্রতিভাবান, অপূর্ব সুন্দরী। সবচেয়ে বড় কথা, ভালো করেই জানে সে কী চায় এবং সেই চাওয়াটার পেছনে দ্বিধাহীনভাবে ছুটতে পারে।’

এই ছুটতে পারাটাই এখনকার বাজারদরে অমূল্য। এটাই এখন সাফল্যের মূল সিঁড়ি। তাকে পা ফেলতে হবে হিসাবের গজ-ফিতে মেপে। অভিনয়ে বুঁদ হয়ে গিয়ে তিনি কতটা ‘ওয়াইল্ড’ হয়ে যেতে পারেন, সেটিও তো দেখিয়ে দিতে হবে।

আগামী ১০ মার্চ ৩৫ পেরিয়ে ৩৬ বছরে পা দিচ্ছেন এ তারকা। জন্মসূত্রে অলিভিয়া জন ককবার্ন নাম হলেও বিশ্বজুড়ে পরিচিত অলিভিয়া ওয়াইল্ড নামে। ১৯৮৪ সালের ১০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইর্য়কে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। অলিভিয়া ওয়াইল্ড একাধারে অভিনেত্রী, পরিচালক, সঞ্চালক, মডেল, সোশ্যাল অ্যাক্টিভিটিস ও উদ্যোক্তা। ‘দ্য গার্ল নেক্সট ডোর’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে হলিউড যাত্রা শুরু এই মার্কিন অভিনেত্রীর। যদিও টেলিভিশন সিরিজ ‘হাউজ’ এ ডা. রেমি চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন তিনি।

এরপর একে একে ফিক্স, দ্য নেক্সট থ্রি ডেইজ, ট্রেন: লিগ্যাসি, কাউ বয়েজ অ্যান্ড এলিয়েন্স, অন দ্য ইনসাইড, ইন টাইমের মতো সব ব্যবসায় সফল সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে আরো বেশ কিছু সিনেমা।

এছাড়া ঝুড়িতে রয়েছে এমটিভি মুভি অ্যাওয়ার্ড, ভেইল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডসহ টিনচয়েজ অ্যাওয়ার্ড পর্যন্ত। বর্তমানে এইচবিও চ্যানেলের একাধিক ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করছেন ওয়াইল্ড।

শুধু অভিনয় নয়, পরিচালনাতেও নিজের দক্ষতা দেখিয়েছেন। এমি (কেটলিন ডেভার) আর মলি (বিনি ফিল্ডস্টাইন) চরিত্র দুটি নিয়ে ‘বুকস্মার্ট’ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন অলিভিয়া। কেটলিন আর বিনি হাই স্কুল পাস দুই তরুণী যার হঠাৎ উপলব্ধি করে তাদের কাজ কম আর খেলাধুলা বেশি করা দরকার ছিল। তাই তারা চার বছরের আনন্দ এক রাতে করার মিশন শুরু করে। অলিভিয়া ওয়াইল্ড জানিয়েছেন তিনি কোনো ফিল্ম স্কুলে শিক্ষা নেননি বলে চলচ্চিত্র পরিচালনার সাহস পাননি, তবে গেল বছর ‘বুকস্মার্ট’ পরিচালনার পর তার সেই ভীতি কেটে যায়। অভিনয় থেকে পরিচালনায় আগত অলিভিয়া ওয়াইল্ড ‘বুকস্মার্ট’ চলচ্চিত্রটির জন্য ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছেন। ‘ভয়। আমি ফিল্ম স্কুলে যাইনি পরিচালনা করার ব্যাপারে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতাম,’ পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার বিষয়ে অলিভিয়া বলেন। তিনি আরো জানান তিনি অভিনয় চালিয়ে যাবেন কারণ এভাবেই তিনি পরিচালকদের কাছে পরিচালনা শিখতে পারবেন। ‘তারপরই বুঝতে পারলাম ক্যারিয়ারই আমার সেই ফিল্ম স্কুল, কারণ আমি প্রতিভাবান পরিচালকদের অনুকরণ করেছি, অসংখ্য প্রশ্ন করে তাদের কাছ থেকে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল শিখেছি, আর আমি তা অব্যাহত রাখব। তাই আমি অভিনয় চালিয়ে যাব আর শিখতে থাকব,’ তিনি বলেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads