ধর্ম

বিয়ে ঈমানের অর্ধেক

  • প্রকাশিত ৭ জানুয়ারি, ২০২১

মাওলানা শামসুল আরেফীন

 

 

 

বিয়ে এখন প্রায় সব ছেলেমেয়েদের ওপর ফরজ হুকুমের মতো একটি হুকুমে রূপান্তরিত হয়েছে। যদিও হুকুমভেদে বিয়ে সুন্নাত, ওয়াজিবও ফরজ হয়ে থাকে। দিন দিন গুনাহের পরিবেশ আগের চেয়ে এখন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের আনাচে-কানাচে গুনাহের বিস্তার ঘটছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও গুনাহের কাজে জড়িয়ে যাচ্ছে অনেকেই। কিছু মানুষ মনে করে জিনা শুধু লজ্জাস্থানের মাধ্যমে হয়ে থাকে। অথচ এই ধারণা নিতান্তই  ভুল। হাদিস শরিফে আছে, কোনো মুসলমান যখন বেগানা নারীর দিকে কুদৃষ্টিতে তাকায়, তখন তার আমলনামায় জিনার গুনাহ লেখা হয়। অথচ মানুষ এটাকে কোনো ব্যাপারই মনে করছে না।

হজরত সাহাল ইবনে ইবনে সাআদ (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের দুই চোয়ালের মধ্যস্থ অঙ্গ এবং দুই রানের মধ্যস্থ অঙ্গ হেফাজত করবে আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার (সহিহ বোখারি, হাদিস নং ৬৪৭৪)। এই হাদিসের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেল লজ্জাস্থানের হেফাজতের গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যভিচার সর্বশেষ অঙ্গ লজ্জাস্থান। অন্যান্য অঙ্গ ব্যভিচার করতে উৎসাহিত করার পর তা কার্যকর লজ্জাস্থানের মাধ্যমে। তাই লজ্জাস্থান হেফাজত করা আবশ্যক। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, তারা যেন তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এটা তাদের জন্য খুব পবিত্র পন্থা (সুরা নূর)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চিতভাবেই সফলকাম হয়েছে মুমিনরা- যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তবে তাদের স্ত্রীদের ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে হেফাজত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। তবে যদি কেউ তাদের ছাড়া অন্য কাউকে (যৌনক্ষুধা মেটানোর জন্য) কামনা করে, তাহলে তারা হবে সীমালঙ্ঘনকারী (সুরা আল মুমিন : ১-৭)। বিয়ের মাধ্যমে লজ্জাস্থানের হেফাজত করা সহজ। আরো বিভিন্ন গুনাহ থেকে বিয়ের মাধ্যমে সহজেই বাঁচা সম্ভব। এ কারণেই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিয়েকে ঈমানের অর্ধেক বলেছেন।

কেউ যদি চায় স্বীয় ঈমান আমলকে হেফাজত করতে সে যেন দ্রুত বিয়ে করে নেয়। আল্লাহতায়ালা বলেন : ‘পুরুষের জন্য নারী পোশাকস্বরূপ আর নারীর জন্য পুরুষ পোশাকস্বরূপ।’ আয়াতে পোশাকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে একে অপরের। বিয়ের পর নারী-পুরুষ একজন আরেকজনকে পোশাকের মতোই ঢেকে রাখবে। চরিত্র হেফাজতের জন্য বিয়ে হলো একটি অতি উত্তম মাধ্যম। বিয়ে ছাড়া পরিপূর্ণভাবে চরিত্র হেফাজতের কোনো বিকল্প নেই। শরিয়তের বিশেষ একটি হুকুম হলো বিয়ে। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের ওপর আবশ্যক হলো তাড়াতাড়ি বিয়ে করা। নতুবা বিভিন্ন ফেতনায় জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। শয়তানের ধোঁকা খুবই মারাত্মক। শয়তান মানুষকে অবস্থানুযায়ী ধোঁকা দেয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন : ‘যে ব্যক্তির পর্যাপ্ত পরিমাণ ধন-সম্পদ আছে, সে যেন বিয়ে করে। আর যে ব্যক্তির পরিমিত ধন-সম্পদ নাই, সে যেন রোজা রাখে। কেননা রোজা হলো বীর্য থামিয়ে রাখার একটি মাধ্যম মাত্র।’

বিয়ের মাধ্যমে সুখ ও শান্তিময় পারিবারিক জীবন গড়ে ওঠে, বিয়ের মাধ্যমে উন্নত নৈতিকতা ও চারিত্রিক পবিত্রতা লাভ হয়। ঈমানে মজবুতি ও দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়। নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। বিয়ের মাধ্যমে শারীরী তৃপ্তি পাওয়া যায়। এ ছাড়াও নানা ধরনের উপকার বিয়ের মাধ্যমে অর্জিত হয়। আপনি হয়তো ভয় পাচ্ছেন বিয়ে করে বউকে কী খাওয়াবেন? কিন্তু স্বয়ং আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত, তাদেরকে বিয়ে করিয়ে দাও এবং তোমাদের দাসদাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয় তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ।’ এই আয়াতের শেষাংশে আল্লাহতায়ালা বলেছেন : প্রাচুর্য না থাকলে তিনি দান করবেন। তারপরও একশ্রেণির মানুষ বিয়ে করতে দ্বিধাবোধ করেন। অথচ বান্দা কিংবা বান্দীর বিয়ের মাধ্যমে আল্লাহ রিজিক বৃদ্ধি করে দেবেন, তা সুস্পষ্ট করে দিলেন পবিত্র কোরআনুল কারীমে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।

 

লেখক : আলেম, ছড়াকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads