অগ্নিদগ্ধদের দুঃখ-কষ্ট দেখে খুব ব্যথিত ও মর্মাহত হন পরম মানব মনের অধিকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গরিব মানুষের কষ্টে কাতর ও সমব্যথী হওয়া প্রধানমন্ত্রীর মানবিক বোধের অন্যতম দিক। সেই মানবিক চেতনা থেকেই তিনি নির্দেশ দেন দেশের ভেতর এসব রোগীর আধুনিক ও উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল নির্মাণের। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও তার সরকারের আন্তরিকতায় সেই হাসপাতাল নির্মিত হয়েছে দেশে, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় বার্ন হাসপাতাল। ঢাকার চানখাঁরপুলে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানটির উদ্বোধনের প্রতীক্ষাও শেষ হচ্ছে আজ বুধবার।
প্রতিষ্ঠানটির নামকরণও হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নামে— ‘শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট।’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পাশে নির্মিত বিশেষায়িত এ প্রতিষ্ঠান আজ সকাল ১০টায় উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পোড়া রোগীদের চিকিৎসার আধুনিক প্রায় সব ব্যবস্থা ও সুবিধার এ প্রতিষ্ঠান দেশের চিকিৎসাসেবায় নতুন দিগন্তের সূচনা করবে বলে মনে করেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। রোগী, চিকিৎসক ও অভিভাবকরা এক বাক্যেই স্বীকার করছেন, প্রধানমন্ত্রীর মানবিক মনের নিদর্শন এ প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠানটির সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘পোড়া রোগীদের চিকিৎসাসেবায় বিশ্বমানের হবে এ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। রোগীদের পাশাপাশি চিকিৎসক ও নার্সদের পেশাগত দক্ষতা বাড়াতেও সহায়ক হবে।’ এখানকার প্লাস্টিক সার্জনরা দেশের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। ৫০০ শয্যার এ প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনের খবরে পোড়া রোগী ও তাদের অভিভাবকরাও আশান্বিত বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির কয়েক চিকিৎসক। এ প্রতিষ্ঠানে রোগীদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সংবেদনশীল হওয়ার আহ্বান আগেই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত বিশ্বের কোথাও এত বড় বার্ন ইনস্টিটিউট নেই। ৯১২ কোটি টাকা খরচ করে প্রায় দুই একর জমিতে প্রতিষ্ঠানের জন্য ভবন নির্মিত হয়েছে। প্রথমে খরচ ধরা হয়েছিল ৫২২ কোটি টাকা। পরে নির্মাণ খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৯১২ কোটিতে। তবে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস আগেই প্রস্তুত শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট।
২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ ইনস্টিটিউট নির্মাণের অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর ২৭ এপ্রিল সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের পাশে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণকাজ শুরু করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৪টি ডবল, ২৮টি সিঙ্গেল কেবিনসহ ৫০০ শয্যা রয়েছে এ হাসপাতালে। রয়েছে একসঙ্গে ১০ রোগীর অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা এবং ৫০টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, ১২টি অপারেশন থিয়েটার ও অত্যাধুনিক পোস্ট-অপারেটিভ ওয়ার্ড। আর দূরের রোগীদের সরাসরি ইনস্টিটিউটে আসার সুবিধার জন্য ছাদে নির্মাণ করা হয়েছে হেলিপ্যাডও। হেলিপ্যাড সুবিধসম্পন্ন দেশের প্রথম সরকারি হাসপাতাল এটি। বহুতলবিশিষ্ট এ ইনস্টিটিউটে রয়েছে তিনতলা বেজমেন্ট। সেখানে গাড়ি পার্কিং ও রেডিওলজিসহ আরো কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিভাগ রাখা হয়েছে।