বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে না থাকলে মিলবে শুধুই সার্টিফিকেট

বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন বলতে অনেকাংশেই বোঝায় হলের জীবন

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে না থাকলে মিলবে শুধুই সার্টিফিকেট

  • প্রকাশিত ২৯ অক্টোবর, ২০১৮

মো. শফিকুল ইসলাম

অচেনা শহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ঠাঁই হয় হলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের হলে থাকার অভিজ্ঞতার সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা চলে না। ক্যাম্পাসজীবনে ছাত্রছাত্রীদের সবচেয়ে আনন্দঘন ও স্মৃতিবহুল সময়গুলোর মধ্যে অন্যতম হল-জীবন। বার বার ছুটে যেতে ইচ্ছে হয় যেখানে। হাসি-কান্না, গল্প-আড্ডা-গানে মেতে থাকার একমাত্র জায়গা হল-জীবন। হল-জীবনের স্মৃতিগুলো বার বার হূদয়ে দাগ কেটে যায়। স্মৃতির পাতায় অমলিন হয়ে থাকে একমাত্র মধুর ক্যাম্পাসটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন বলতে অনেকাংশেই বোঝায় হলের জীবন। একটা প্রচলিত প্রবাদ আছে, যে হলে থাকে না সে জানে না কীভাবে মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়। যে হলে থাকে না, সে জানে না শত বাধাবিপত্তিতেও কীভাবে জীবনকে উপভোগ করতে হয়। যে হলে থাকে না, সে জানে না কীভাবে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসতে হয়। গ্র্যাজুয়েশন শেষে শুধুই একটা সার্টিফিকেট পাবেন, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কী তা বুঝতে পারবেন না।

নিজের শহরের বাইরে এসে যখন হলে উঠতে হয়, সেই পরিস্থিতি অনেকের কাছেই প্রথমে সুখের হয় না। আবার অচেনা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে খুব বেশি সময়ও লাগে না। বরং বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে হলের স্মৃতিই যেন মনকে উতলা করে তুলবে।

গান-বাজনা, আড্ডা, গল্পসহ নানা আনন্দ আয়োজনে কাটে হল-জীবনের প্রতিটি সময়। রাতে ক্যাম্পাসের মাঠে বন্ধুরা বসে গল্প করা। লেখাপড়ার কথা ভুলে লেকের পাড়ে বসে বন্ধু-বান্ধবী মিলে জমিয়ে আড্ডা দেওয়া। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা। পরীক্ষার আগের রাতে ব্যাচমেটের সঙ্গে বই নিয়ে কাড়াকাড়ি। রুমের সবাই মিলে রাত জেগে পড়াশোনা করা।

ঢাবির শামসুন নাহার হলের উম্মে হাবিবা ‘স্বাধীন’দের দলে। বন্ধুদের সঙ্গে হঠাৎ পরিকল্পনা করে ঘুরতে চলে যাওয়া, রাতে পলাশীর মোড় বা চানখাঁরপুলে দলবেঁধে খেতে যাওয়া- এটাই তার কাছে হলজীবন। এই তো জীবন। এই তো বন্ধুত্ব। তাই তো দিন শেষে একটি কথা বলতেই হয়- তোরা ছিলি, তোরা আছিস, তোরাই থাকবি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থী অনুপম কুমার দাস জানান, সংস্কৃত ডিপার্টমেন্টে যখন ভর্তি হলাম, তখন আমার স্থান হলো গণরুমে। প্রথম যখন হল-রুমে ঢুকলাম, এত অপরিচিত মুখ দেখে ভেবেছিলাম হয়ত কখনো এদের সঙ্গে খাপখাইয়ে চলতে পারব না। কিন্তু রাতে দেখতে পেলাম অন্য রকম এক দৃশ্য- হলের বড় ভাইয়েরা এসে নিয়মিত সবার খোঁজখবর নিচ্ছেন। বড় ভাইদের স্নেহ আর ভালোবাসায় রুমের বন্ধুদের পারস্পরিক সহযোগিতায় গণরুমের জীবনটাও হয়ে ওঠে মধুময়। খুব অল্প সময়েই সবার সঙ্গে বন্ধুতপূর্ণ সম্পর্ক হলো। তারপর কাটতে থাকল দিন, ভারি হতে থাকল স্মৃতির পাতায় আনন্দ-বেদনা আর নতুন নতুন অভিজ্ঞতা।

হলের ডাইনিং-ক্যান্টিনের খাবার নিয়েও শিক্ষার্থীদের কম গল্প জমা নেই। রোকেয়া হলের ছাত্রী তানজিলা আক্তার ইভার কাছেই শোনা যাক তার অভিজ্ঞতা। প্রথমে ডাইনিংয়ের খাবার একদম খেতে পরতাম না। পাতলা ডাল, মোটা ভাত আর পরোটা। খেতে বসলে চোখে পানি চলে আসত। এটাও মানেন, একদিন এই ‘ডাল-ভাত-পরোটা’র জন্যই তার মন হয়তো কাঁদবে!

জগন্নাথ হলের দীপন কর্মকার জানান, শুরুতে বড় ভাইদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছুটা সমস্যা হয়। কিন্তু আজ সেগুলো তার কাছে মজার সব স্মৃতি। সব প্রতিকূলতার মধ্যেও হলের পরিবেশ অনেকের কাছেই স্বাধীনতার আরেক নাম।

হলরুমের অভিজ্ঞতার কথা ঠিক এভাবে বলেন জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থী শংকর দেব বর্মণ, ‘এখানে প্রথমে সবাইকে অপরিচিত মনে হবে। এরপর দেখা যাবে তারাই সবচেয়ে কাছের বন্ধু হয়ে যাবে। যেমন যেকোনো কাজ সবাই মিলে একসঙ্গে করা, রাতের বেলা বন্ধুরা মিলে ক্যাম্পাসে ঘুরতে যাওয়া। রুমে কোনো বিশেষ কারণ ছাড়াই চানাচুর, পেঁয়াজ, মরিচ আর তেল দিয়ে মুড়ি পার্টির আয়োজন করা। গভীর রাতে ভার্সিটির গাছ থেকে ফল পেড়ে খাওয়া, দলবেঁধে নীলক্ষেতে খেতে যাওয়া ইত্যাদি সব মজার মজার অভিজ্ঞতা।’

হলে থাকার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, বিভিন্ন রকমের মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। বড় ভাইদের কীভাবে সম্মান ও কথা বলতে হয় তার শিক্ষা আসে এখান থেকেই। কে উচ্চবংশের, কে উচ্চ বিষয়ে পড়াশোনা করে এসব ভেদাভেদ ভুলতে শেখায়। কেউ অসুস্থ হলে ১৫-২০ জন মিলে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। হলের একজনের বিপদ হলে মনে হয় সবার বিপদ। বন্ধুর জন্য সব কিছু করতে পারে এরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads