এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার
বিশ্ববরেণ্য নেতাদের সুচিন্তিত মতামত ও সিদ্ধান্ত দ্বারা বিশ্বব্যবস্থা সভ্যতাকে পরিচালিত করে থাকে। ফলে বিশ্ব শক্তিমত্তার ক্ষমতাসম্পন্ন নেতাদের খামখেয়ালি ক্ষমতার ব্যবহার আমরা বহুবার পরখ করেছি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কিংবা তৎপরবর্তী ইরাক, কুয়েত, আফগানিস্তান, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া কিংবা আফ্রিকার বর্তমান বিধ্বস্ত চেহারা সবই সমসাময়িক বিশ্বনেতাদের সুচিন্তারই ফসল, এতে কোনো সন্দেহনেই। কারো পৌষ মাসের জন্য অন্যের সর্বনাশ এখানে অনিবার্য। আধুনিক বর্তমানে এসে আর ঘোষণা করে যুদ্ধ করার প্রয়োজন পড়ে না। যার সর্বশেষ আধুনিক সংস্করণ আজকের করোনা-বিধ্বস্ত পৃথিবী।
আপনাদের খামখেয়ালিপনা আর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ফসল হিসেবে মহামারীও সহ্য করতে হবে শান্তিপ্রিয় নাগরিককে। ২১ শতকের বিশ্বে আমরা সুন্দর চর্চার সাধারণ মানুষ বিশ্বনাগরিক হিসেবে ভাবতেই লজ্জা লাগে! তাই বলি কী শাসকদের ভাবনায় পরিবর্তন অতি প্রয়োজন। চিন্তার যেটুকু অসুন্দর আছে তা পরিহার জরুরি। সিদ্ধান্ত গ্রহণে জেনিটিক কিংবা ব্যক্তি, গোষ্ঠীগত, দেশগত কিংবা ধর্মীয় চিন্তায় শ্রেষ্ঠত্ব ভাবনা—এগুলো পরিহার করাও অবশ্যক। সব নাগরিকের মঙ্গল কামনা আসুক আমাদের চিন্তা-চেতনায়। কারণ ঠিক এই মুহূর্তে যে অসুবিধা ও আতঙ্ক কাজ করছে, তা কিন্তু সবার জন্য একই। করোনা ভাইরাস কারো বিশেষ আর কারো জন্য অবিশেষ তা কিন্তু নয়।
এমনিতেই সীমানা ভাগ করা নিয়ে আপনার পূর্বসূরিরা যুদ্ধ যুদ্ধ খেলে প্রায় দুই হাজার বছর ইতোমধ্যেই পার করে দিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এসে নিশ্চয়ই উপলব্ধি করছেন, যে সীমানা নিয়ে ব্যস্ত হওয়াটা পূর্বসূরিরা ঠিক করেনি। কারণ ভাগ করা সীমানায় করোনা ঢুকতে পাসপোর্টের প্রয়োজনই মনে করছে না। সময় এসেছে বরং মরীচিকার পেছনে না দৌড়ে সুন্দর শান্তিপ্রিয় বিশ্বমানবের আগামীটা কেমন হবে, তা নিয়ে ভাবা এবং মানবতাকে অস্ত্র বিক্রির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করে বরং মানবতা যে কত সুন্দর হতে পারে, তা আপনাদের পরিবর্তিত মানসিকতার নতুন ফসল হিসেবে উপহার দিতে পারেন।
মারণাস্ত্র কিংবা জীবাণু-অস্ত্র মার্কেটিং করে যারা বিশ্বে অর্থনৈতিকভাবে দাপিয়ে বেড়াতে চান এমন অভিব্যক্তি আপনার জন্যও যে অনিরাপদ নিশ্চয়ই এত সময়ে বোধোদয় হয়েছে। প্রত্যেকেই পূর্বসূরি ও নিজের ভুল চিন্তার জন্য যার যার স্রষ্টার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে ক্ষমতাকে কল্যাণার্থে কাজে লাগিয়ে বিশ্ববাসীর মুখে নতুনভাবে হাসি ফোটাবেন, এমনটাই প্রত্যাশা করে আজকের বিশ্বনাগরিক। ক্ষমতাধর হিসেবে মানবিক হলেই কেবল বিশ্বমানবতা প্রস্ফুটিত হবে, অন্যথায় সম্ভব নয়।
মানবতার দৃশ্যমান আর্থিক মূল্য না থাকায় এটি অর্থহীন হলেও বিশ্ববাসীর মুক্তির একমাত্র যুক্তিযুক্ত পথ। আর যদি এই সিদ্ধান্তে আসতে অসুবিধা হয়; অন্তত বিশ্বনেতারা দলিল ও মনে চুক্তিবদ্ধ হোক, এই শর্তে যে, স্থিতিশীল সুন্দর বিশ্ব গঠনের লক্ষ্যে এখন থেকে আগামী বিশ বছর কারো দ্বারা আর অন্তত মানবতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এটুকু সময়ে প্রকৃতি কিছুটা সয়ে নিয়ে আমাদের বাসযোগ্য নতুন পৃথিবী উপহার দেবে, এমটা ভাবা বর্তমান সময়ের বিশ্ব নাগরিকদের বোধহয় অযৌক্তিক হবে না।
লেখক : গীতিকবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব