বিরল ফ্লাওয়ার কাঁকড়ায় হচ্ছে মাছের খাবার

বিরল ফ্লাওয়ার কাঁকড়া

ছবি : ইন্টারনেট

জীব ও পরিবেশ

বিরল ফ্লাওয়ার কাঁকড়ায় হচ্ছে মাছের খাবার

  • প্রকাশিত ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বঙ্গোপসাগরসহ উপকূলের নদ-নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে বিরল প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় কাঁকড়া। স্থানীয়রা এটিকে টাইগার কাঁকড়া বললেও এটি ফ্লাওয়ার কাঁকড়া, নীল অমৃত কাঁকড়া বা স্যান্ড কাঁকড়া হিসেবে

পরিচিত। যার বৈজ্ঞানিক নাম চড়ৎঃঁহঁং ঢ়বষধমরপঁং। এক থেকে দেড় ইঞ্চি আকৃতির হাজার হাজার কাঁকড়া জালে ধরা পড়ায় কলাপাড়ার জেলেরা এগুলো বিক্রি করতে না পেরে শুকিয়ে মাছের খাদ্য তৈরি করছে।

সরেজমিন দেখা যায়, হালকা বাদামি রঙের ফ্লাওয়ার কাঁকড়ার উপরিভাগের শক্ত খোলস চিতাবাঘের মতো কালো ডোরাকাটা। খোলসের দুই পাশে নিজেদের রক্ষার জন্য এক ইঞ্চি আকৃতির বড় দুটি হুল রয়েছে। মা কাঁকড়ার দেহ হালকা হলুদ বা হালকা বাদামি বর্ণের এবং এর দেহ মোটামুটি গোলাকার। পুরুষ কাঁকড়ার দেহ উজ্জ্বল নীল বর্ণ এবং আছে ছোট ছোট সাদা দাগ। কুয়াকাটায় ধরা পড়া কাঁকড়াগুলো ব্লু-সুইমার কাঁকড়ার পুরুষ জাতের।

মৎস্য বিভাগ জানায়, টাইগার প্রজাতির কাঁকড়া সমুদ্রে ডিম ছাড়ার জন্য উপকূলের কাছাকাছি আসে। ডিমের লার্ভাগুলো সাগরের জোয়ারের তোড়ে উপকূলে চলে আসে। গভীর সমুদ্রে ডিম ছাড়ার কারণে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত ছোট কাঁকড়াগুলো উপকূলের কাছেই বিচরণ করে। এগুলো ১৮-২৪ মাসের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তখন ৩৫০ থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হয়।

কলাপাড়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শত শত শ্রমিক কাঁকড়া শুকানোর কাজ করছে। প্রতিদিন ৫-৭টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এরা কাঁকড়া শিকার করছে। প্রতিটি গ্রুপে প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে তিন মণ কাঁকড়া শিকার করে তা পিষে মেরে বালুচরে শুকাচ্ছে। জেলে মো. সোহেল জানান, সাগরের ২-৩ কিলোমিটারের মধ্যে খুঁটা জেলেদের জালে কাঁকড়া বেশি ধরা পড়ছে। মাছের খাদ্য হিসেবে প্রতি মণ শুকনা কাঁকড়ার গুঁড়া ১১০০-১২০০ টাকায় স্থানীয় বাজারেই বিক্রি হচ্ছে। একই রকম তথ্য দিয়েছেন জেলে ইব্রাহিম মিয়া।

কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা পর্যটক সাইদুর রহমান, অঞ্জলী মণ্ডল ও অরিত্র দেবনাথ বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বিলুপ্তপ্রায় জীববৈচিত্র্য নিয়ে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা। শুধু জীবিকার প্রয়োজনে যে হারে মাছ শিকারের নামে বিলুপ্তপ্রায় সামুদ্রিক প্রাণী নিধন হচ্ছে তা ভয়াবহ। বিরল প্রজাতির কাঁকড়া নিধন বন্ধে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

পটুয়াখালী সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম জানান, এখানে ধরা পড়া কাঁকড়া খুবই মূল্যবান ও বিরল প্রজাতির। বাংলাদেশে এই কাঁকড়া দেখা না গেলেও এগুলো ভূমধ্যসাগরের উপকূলসহ আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, পারস্য সাগর উপকূলের কিছু এলাকায় দেখা যায়। এই জাতের কাঁকড়া ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলে খাবার হিসেবে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। এশিয়া ও পারস্য অঞ্চলেও এ কাঁকড়ার বেশ খাদ্য চাহিদা আছে। পুরুষ কাঁকড়ার চেয়ে মা কাঁকড়ার মূল্য বেশি।

বাংলাদেশে কাঁকড়া ধরা বিষয়ে কোনো আইন না থাকায় তারা কিছুই করতে পারছেন না বলে মন্তব্য করেন এই মৎস্য কর্মকর্তা। তিনি বলেন, জেলেরা সূক্ষ্ম ফাঁস কিংবা কারেন্ট জাল দিয়ে যাতে কাঁকড়াগুলো শিকার করতে না পারে সেজন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads