বিপর্যয়ের সময়েও সফল ঢাকা কমার্স কলেজ

৭টা ৫৫ মিনিটের মধ্যে শিক্ষার্থীদের কলেজের ভেতরে প্রবেশ করতে হয়

সংরক্ষিত ছবি

ফিচার

বিপর্যয়ের সময়েও সফল ঢাকা কমার্স কলেজ

  • প্রকাশিত ১৩ অগাস্ট, ২০১৮

এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় দেশের কলেজগুলোর ফলাফলে একধরনের বিপর্যয় নেমেছিল। ভালো ফল করা কলেজগুলোও এবার খারাপ করেছে। ফলাফল বিপর্যয়ের মধ্যেও ব্যতিক্রম ছিল ঢাকা কমার্স কলেজ। কলেজটি নিয়ে লিখেছেন নাদিম মজিদ

এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছে ১৯ জুলাই। রেজাল্টের পরে চারপাশে একটি আলোচনা। ফল বিপর্যয় ঘটেছে এ বছর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গতবারের ফলাফল এবং জিপিএ ফাইভ কোনোটাই ধরে রাখতে পারেনি। জিপিএ ফাইভ নিয়ে এইচএসসিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই জিপিএ ফাইভ হারিয়েছে। ফল বিপর্যয়ের এ সময়েও ফলাফল ভালো ছিল ঢাকা কমার্স কলেজের। ব্যবসা শিক্ষায় বিশেষায়িত কলেজটির ২ হাজার ২২১ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাসের হার শতকরা ৯৯ দশমিক ৭৭ ভাগ। ১০৮ জন জিপিএ ফাইভ নিয়ে এ কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েছিল। এবারের ফলাফলে তাদের জিপিএ ফাইভ বেড়ে হয়েছে ১২৩ জন। পড়াশোনার খোঁজ নিতে ২৯ জুলাই ঢাকা কমার্স কলেজে যাই। কলেজে প্রবেশ করতে করতে জানতে পারি, ক্লাস শুরু হয় ৮টায়। ৭টা ৫৫ মিনিটের মধ্যে শিক্ষার্থীদের কলেজের ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। দেরি করে এলে কৈফিয়ত দিতে হয়। একদিন না এলে পরদিন কারণ জানিয়ে অভিভাবকের কাছ থেকে লিখিত দরখাস্ত নিয়ে আসতে হয়।

অনেক কলেজে দেখা যায় শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষের স্বল্পতা রয়েছে। কোনো ক্লাসের পরীক্ষা থাকলে অন্যদের ক্লাস বন্ধ রাখা হয়। ঢাকা কমার্স কলেজে এমনটি ঘটে না বলে জানান ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান এবং পরীক্ষা কমিটির নিয়ন্ত্রক এস এম আলী আজম। ‘এখানে কোনো বিভাগ বা শ্রেণির পরীক্ষা থাকলে অন্য বিভাগ বা শ্রেণির ক্লাস বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। আবার কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা মিস করলে তাকে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হয়। কেউ পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হলে তাকে পুনরায় পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে হয়।’

কলেজের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় খারাপ করলে অভিভাবকদের ঢাকা হয় কলেজের মিনি কনফারেন্স রুমে। সেখানে অভিভাবক হিসেবে তাদের সন্তানদের ভালো ফল করার জন্য কী করণীয়, তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

কলেজটির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার বেশ সমৃদ্ধ। ৩৫ হাজারের বেশি বই এবং জার্নাল রয়েছে। বই নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদেরও ভিড় থাকে সবসময়।

শিক্ষার্থীদের সুপ্ত মেধা বিকাশে বিএনসিসি নৌ উইং, আন্তর্জাতিক রোটার্যাক্ট ক্লাব, আর্টস অ্যান্ড ফটোগ্রাফি সোসাইটি, সাধারণ জ্ঞান ক্লাব, ডিবেট ক্লাব, আবৃত্তি পরিষদ, নাট্য পরিষদ, নৃত্য ক্লাব, নেচার স্টাডি ক্লাব, সাইক্লিং ও স্কেটিং ক্লাব এবং বন্ধন সমাজকল্যাণ সংঘ কাজ করছে। ঢাকা কমার্স কলেজ ডিবেটিং সোসাইটির প্রেসিডেন্ট আনিসুর রহমান জানান, ‘এক্সট্রা-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিজের ক্ষেত্রে কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের উৎসাহ দিয়ে থাকে। কলেজে প্রোগ্রাম আয়োজনে কর্তৃপক্ষ আমাদের স্পন্সর করেছিল। বাইরে প্রোগ্রাম করতে গেলেও খরচ বহন করে কলেজ।’ শিক্ষা সম্পূরক কার্যক্রম হিসেবে সাহিত্য-সংস্কৃতি ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বনভোজন, সুন্দরবন ভ্রমণ, নৌবিহার, শিক্ষা সফর, অফিস ও কারখানা পরিদর্শন, বার্ষিকভোজ ও মিলাদ আয়োজন করা হয়।

পড়াশোনা

১৯৮৯ সালের ১ জুলাই প্রতিষ্ঠিত ঢাকা কমার্স কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ব্যবসায় শিক্ষা, স্নাতকে (সম্মান) ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান, মার্কেটিং, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, ইংরেজি, অর্থনীতি, বিবিএ প্রফেশনাল, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, স্নাতকোত্তর ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান, মার্কেটিং, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, ইংরেজি এবং অর্থনীতি পড়ানো হয়। সাপ্তাহিক, মাসিক ও তিন মাস পরপর পর্ব পরীক্ষা রয়েছে। শিক্ষার্থী সংখ্যা ৭ হাজার এবং শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা যথাক্রমে ১৩১ ও ১১১ জন। ২০০৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত উচ্চমাধ্যমিকে গড় পাসের হার ৯৯.৮%, স্নাতকে ৯৪% এবং স্নাতকোত্তর ৯৭%। ১৫ তলাবিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবন, ১১ তলাবিশিষ্ট একটি অ্যাকাডেমিক ভবন, ৬ তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন, ১৫শ’ আসনবিশিষ্ট অডিটোরিয়াম রয়েছে।

গত বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং ২০১৬’ ঘোষণা করেন। এতে ঢাকা কমার্স কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা বেসরকারি কলেজ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।

কলেজটির উপাধ্যক্ষ (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক, ক্লাসরুম, ক্লাস ও পরীক্ষা নিশ্চিত করেছি। ফলে কলেজের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ভালো ফল করছে। এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলও তার একটি প্রমাণ।’

এ বছর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ছিল ৬৬.১০%। যেখানে শিক্ষা বোর্ডের পাসের হার-ই কমে গিয়েছিল, সেখানে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে সাফল্য ধরে রাখার কারণ হিসেবে ঢাকা কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবু সাইদ জানান, ‘আমাদের কলেজে ছাত্র ভর্তি হওয়ার পর থেকে চূড়ান্ত পরীক্ষার ফরম ফিলআপ করা পর্যন্ত শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মনিটর করে থাকেন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য গাইড টিচার রয়েছে। সেই শিক্ষার্থীর ভালো-মন্দ সবকিছু তিনি পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। কোনো শিক্ষকের অধীন শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করলে সেই শিক্ষককে বোনাস দেওয়া হয়ে থাকে। শৃঙ্খলার ব্যাপারে কলেজ সবসময় কঠোর। ৮টার পরে শিক্ষার্থীদের কলেজে প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয় না। কোনো কারণে শিক্ষার্থী কলেজে না এলে পরেরদিন অভিভাবকের দরখাস্তসহ জবাবদিহি করতে হয়। ক্লাস শুরুর সময় একাডেমিক ক্যালেন্ডার দিয়ে দেওয়া হয়। ক্লাস, পরীক্ষা, বন্ধ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য থাকে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের ওপর মূল্যায়ন করে থাকে। এতে শিক্ষকরা পড়ানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকেন। যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে ক্লাস করতে আসেন।’

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads