বিখ্যাত চিড়া এখন শুধুই স্মৃতি

এক সময়কার নড়াইলের বিখ্যাত চিড়া এখন শুধুই কাগজে-কলমে বন্দি

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

বিখ্যাত চিড়া এখন শুধুই স্মৃতি

  • নড়াইল প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৪ অগাস্ট, ২০১৮

নড়াইলের বিখ্যাত চিড়া এখন শুধুই স্মৃতি। এক সময়ে নড়াইল জেলার ঢেঁকিছাঁটা চিড়া ছিল এদেশের সব মানুষের কাছে প্রিয় একটি নাম। কাগজের মতো পাতলা আর খেতে সুস্বাদু এ চিড়ার আজ বিলুপ্তি ঘটেছে। নানা প্রকার ফাস্টফুডের দাপটে নড়াইলের বিখ্যাত চিড়া আজ হারিয়ে গেছে। এক সময় নড়াইলের চিড়া শিশু-কিশোর, বয়োবৃদ্ধ, যুবক সবার প্রিয় খাবার ছিল। ক্ষুধা নিবারণের জন্য গ্রাম থেকে শহরের প্রতিটি ঘরেই এক সময় এ খাবার গচ্ছিত থাকত। ভাত, রুটির পর এর ব্যাপক কদর ছিল প্রতিটি পরিবারের মানুষের কাছে। হঠাৎ বাড়িতে মেহমান এলে ভাত, রুটির ব্যবস্থা না থাকলে তাৎক্ষণিক চিড়া, দুধ, চিড়া গুড় দিয়ে সহজেই মেহমানদারি করা হতো। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় এ খাবারটি এখন আর কেউ খেতে চায় না। যেখানে সেখানে গড়ে উঠেছে ফাস্টফুডের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া বিখ্যাত সেই চিড়া তৈরির কয়েক প্রকার ধান, যা এখন উৎপন্ন হয় না এবং ঢেঁকিতে তৈরির পরিবর্তে বৈদ্যুতিক মেশিনে চিড়া তৈরি হয়। হরেকরকম বিস্কুট, পাউরুটিসহ নানা খাবার এখন হাতের কাছেই পাওয়া যায়। আর এ কারণে কদর কমে গেছে চিড়ার। নেই সেই চিড়া তৈরির ঢেঁকি। গ্রামের হাট-বাজার ও শহরের অলিতে গলিতে চিড়া তৈরির বৈদ্যুতিক মেশিন রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে কম খরচে চিড়া তৈরি করা যায়। শুধু ঢেঁকির বিলুপ্তি নয়। বিখ্যাত চিড়া তৈরির নাড়ই, দিঘা, রাতুল, মনোহর, হাসিকলমী, কালা ধান আর এখন উৎপন্ন হয় না। ফলে স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় আর কাগজের মতো পাতলা চিড়াও এখন তৈরি হয় না।

স্বাধীনতা পরবর্তী মাত্র কয়েক বছর এসব চিড়া নড়াইলে দেখা গেলেও এখন তা আর পাওয়া যায় না। এক সময়কার নড়াইলের বিখ্যাত চিড়া এখন শুধুই কাগজে-কলমে বন্দি। চুনিলাল ভট্টাচার্য (৮০) বলেন, আমাদের ছোটবেলা খুব একটা কেনা খাবার পাওয়া যেত না। আর সে কারণে প্রতিটি পরিবারে সেই সময় চিড়া, মুড়ি, খই, গুড় নারকেলই ছিল একমাত্র ভরসা। তখনকার মানুষের হাতে বর্তমানের মতো টাকা-পয়সা ছিল না। তাই ক্ষুধা নিবারণের জন্য আমাদের মায়েরা চিড়া খেতে দিতেন। সেই সময় প্রতিটি পরিবারেই ঢেঁকি ছিল। ঢেঁকি দিয়ে শুধু চিড়া কেন, ধান ভাঙিয়ে চাউলও তৈরি করা হতো।  সেই আমলে চিড়ার জন্য আলাদা আলাদা অনেক জাতের ধান হতো। সেই সকল ধানের চিড়া যেমন সুস্বাদু তেমনি পাতলা এবং খেতে মজাদার ছিল। তখন নড়াইল থেকে পায়ে হেঁটে যশোরে মামলা-মোকদ্দমা পরিচালনা করতে যেতে হতো। পথে ঘাটে তেমন কোনো খাবার পাওয়া যেত না। তাই গামছা কিংবা কোনো কাপড়ে চিড়া গুড় বেঁধে নিয়ে যেতে হতো পথে খাবারের জন্য। নড়াইলের ঢেঁকিছাঁটা চিড়া সেই সময় দেশের বিখ্যাত ছিল। বর্তমানে বাজারে চিড়া পাওয়া যায় ঠিকই কিন্তু তা খাওয়া যায় না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads