মোংলায় ভারতীয় উদ্যোক্তাদের জন্য গড়ে তোলা হবে পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ১১০ একর জমিতে এ অঞ্চল গড়ে তুলতে ২৪৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরে একটি প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে অনুদান হিসেবে ২৪২ কোটি ৮০ লাখ টাকা দেবে ভারত সরকার। অবশিষ্ট ২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয় হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রস্তাবে ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রকল্পের আওতায় অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্য থাকলেও বৈঠকে এর সময়সীমা ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। ১৫ কোটি টাকা থেকে কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে পরামর্শক ব্যয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সভা সূত্র জানায়, বেশ কিছু শর্ত পরিপালনের শর্ত সাপেক্ষে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনদের সুপারিশ করা হয়েছে। নির্বাচনের কারণে বর্তমানে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। নতুন সরকার দায়িত্ব নিলে জানুয়ারিতে প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপন করা হবে। একনেকের অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। প্রকল্পে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে অনুদান না দিয়ে ১ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পিইসি সভায়।
পিইসি সভার কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সরকার ও ভারতের এক্সিম ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি-২) চুক্তি হয়। চুক্তির আওতায় মোংলায় এবং কুষ্টিয়ার অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে দুই পক্ষ সম্মত হয়। মোংলায় ভারতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে শুধু ভারতীয় উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করবেন। সরকার টু সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে ভারত সরকার তাদের নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অঞ্চলটির উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণ করবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ১ বছর ৯ মাসে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ইপিসি (প্রকৌশল, আহরণ ও নির্মাণ) চুক্তিতে বাড়তি সময় লাগার সম্ভাবনা থাকায় প্রকল্পের মেয়াদ ৯ মাস বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে প্রকল্প ব্যবস্থাপনা পরামর্শক (পিএমসি) নিয়োগে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাবে দ্বিমত প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। শিক্ষা
প্রশিক্ষণেও ব্যয় কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে সভায়।
অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) স্থাপন না করার পক্ষে সভায় মতো দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। তবে সিইটিপি নির্মাণের জন্য পৃথক জায়গা রাখার পক্ষে মত দেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিনিধিরা বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে ভারতীয় উদ্যোক্তারা কী ধরনের শিল্প স্থাপন করবেন তা এখনো জানা যায়নি। অধিকাংশ অর্থনৈতিক অঞ্চলেই পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপন হয়েছে। পরিবেশসম্মত শিল্পে সিইটিপি প্রয়োজন হয় না। তা ছাড়া শিল্পের প্রকৃতি না জেনে কেমন সিইটিপি স্থাপন হবে এ বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। এ অবস্থায় প্রয়োজনে নতুন একটি প্রকল্পের আওতায় সিইটিপি স্থাপনের পক্ষে মত দিয়েছে কমিশন।
বেজা সূত্র জানায়, বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের ২০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে প্রস্তাবিত এ অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে বহিঃবাণিজ্য তুলনামূলক সহজ হবে। অঞ্চলটিতে কৃষি, খাদ্য, হালকা প্রকৌশল ও রসায়ন খাতের শিল্প স্থাপন করা হবে। এ অঞ্চলে ৮ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।