পচনশীলসহ সব ধরনের শাকসবজি, ফল ও মাছ শুকিয়ে তা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা হয় ফিলিপাইনে- যা পরবর্তীকালে চাহিদা অনুযায়ী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। ওই দেশে ছোট-বড় শহরের পাশাপাশি বেশি উৎপাদনশীল এলাকায় রয়েছে খাদ্য সংরক্ষণের জন্য এমন অনেক ‘মাল্টি কমোডিটি সোলার ট্যানেল ড্রায়ার প্ল্যান্ট’।
সম্প্রতি ফিলিপাইনের এই প্রযুক্তির সোলার ট্যানেল ড্রায়ার স্থাপন করা হয়েছে বাংলাদেশেও। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় ও সিরডাপের যৌথ উদ্যোগে সাভারের দত্তপাড়ায় তৈরি ওই প্ল্যান্টটি উদ্বোধন করেছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। আর ফিলিপাইনের মতো ছোট-বড় শহরের পাশাপাশি বেশি উৎপাদনশীল এলাকায় এই সোলার ট্যানেল ড্রায়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করা গেলে দেশে খাদ্যের অপচয় অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির পুষ্টি ও খাদ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. বেলাল হোসেন।
বেলাল হোসেন বলেন, আমাদের স্থাপিত এ ট্যানেলে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ কেজি শাকসবজি ফল অথবা মাছ শুকিয়ে সংরক্ষণ সম্ভব। আর এমন একটি ট্যানেল নির্মাণে আমাদের খরচ হয়েছে মাত্র ১৩ লাখ টাকা। আর কম টাকায় কিছুটা কম ক্ষমতাসম্পন্ন ট্যানেল নির্মাণ সম্ভব।
তিনি বলেন, এমন ট্যানেল সারা দেশে বেশি উৎপাদনশীল এলাকায় গড়ে তুললে দেশে খাদ্যের অপচয় অনেকাংশে কমে আসবে। অপরদিকে এসব রফতানি করার ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আসবে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ‘মাল্টি কমোডিটি সোলার ট্যানেল ড্রায়ার প্ল্যান্ট’ প্রযুক্তির প্রদর্শনী ও উদ্বোধন করে। এ ট্যানেলে দেশের বিভিন্ন মৌসুমি ফলসহ কৃষিজাত পণ্য সহজেই দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যাবে। এর মাধ্যমে কৃষক, ক্রেতা-ভোক্তা, কৃষিশিল্প উদ্যোক্তা, নীতিনির্ধারকসহ সবাই সুবিধা পাবেন।
উদ্যোগক্তারা জানান, দীর্ঘমেয়াদে পচনশীল পণ্য সংরক্ষণের এ প্রযুক্তিতে সুবিধা পাবেন কৃষক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। এ প্রযুক্তির একটি প্ল্যান্টে সব ধরনের শাকসবজি, ফল ও মাছ প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব- যার খরচ খুবই কম।
আর এ প্রযুক্তিতে শুকনা পণ্য চার থেকে ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব। সেই সঙ্গে সোলারের মাধ্যমে সূর্যের তাপে শুকানো এসব খাদ্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। এজন্য কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না বলে তা শতভাগ হাইজেনিকও। এখানে সংরক্ষণ করা এসব খাদ্য একদিকে কাঁচামাল হিসেবে সারা বছর স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি রফতানি সম্ভব হবে।
বেলাল হোসেন জানান, এরই মধ্যে এ প্রকল্প উদ্যোক্তাদের প্রযুক্তি স্থাপনে এসএমই ঋণ দিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে একাধিক ব্যাংক। এছাড়া অল্প সময়ে দেশের একটি উন্নত খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াকরণ কোম্পানিসহ জাপানের একাধিক কোম্পানি আগ্রহ দেখিয়েছে সংরক্ষিত পণ্য ক্রয়ে। এছাড়া প্রযুক্তি প্রসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সিরডাপ, বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) কাজ করে যাচ্ছে।