ফিচার

বর্ষায় গ্রামের রঙ সবুজ...

  • প্রকাশিত ১৫ জুলাই, ২০১৮

পরাগ মাঝি

 

প্রবাদ আছে, ‘শহর তৈরি করে মানুষ আর গ্রাম তৈরি করেন স্বয়ং ঈশ্বর।’ আধুনিক সভ্যতায় গ্রামকে পেছনে ফেলে শহরের দিকে ধাবিত হয় মানুষ। শহরের চোখ ধাঁধানো চাকচিক্য আর নাগরিক সুবিধা আকর্ষণ করে মানুষকে। কিন্তু যত সুবিধাই থাক না কেন, গ্রাম ছেড়ে আসা শহুরে মানুষকে সারাজীবন তাড়া করে বেড়ায় গ্রামের সবুজ স্মৃতি।

মজার ব্যাপার হলো, আমাদের দেশে বর্তমানে এমন একটি শহুরে প্রজন্ম গড়ে উঠেছে যারা কখনো গ্রামই দেখেনি। অথচ নিঃসন্দেহে তাদের পূর্বপুরুষরা বেড়ে উঠেছে গ্রামে। গ্রামের সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি, মেঠোপথ, শস্য ক্ষেত, খেলার মাঠ, হই-হুল্লোড়, পাখির ডাক, প্রকৃতির কোলাহল-এসব কিছুরই অভিজ্ঞতা রয়েছে গ্রামে বেড়ে ওঠা মানুষের। আক্ষরিক অর্থেই সত্যিকারের গ্রাম বলতে যা বোঝায়, বিশ্বে একমাত্র তার অস্তিত্ব আছে কেবল এই উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশে। পৃথিবীর অন্য দেশগুলোতে গ্রামের অস্তিত্ব থাকলেও সেগুলো আমাদের গ্রামগুলোর মতো এমন হূদ্যপূর্ণ নয়। উন্নত দেশগুলোতে আসলে সবাই শহরেই থাকে। গ্রাম বলতে তারা যা বোঝায়, তা হলো-শহরের বাইরে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে থাকা ফার্মহাউস এবং একে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অস্থায়ী নিবাসকে।

regular_2966_news_1531590337 (1)

আমাদের গ্রামগুলো প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা। দেখা যায়, একটি গ্রামের সব মানুষই কোনো না কোনো সম্পর্কে আবদ্ধ। এই সম্পর্কের সুতো ছড়িয়ে যায় গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। গ্রামের সহজ-সরল মানুষের আবেগ অনুভূতিকে ধারণ করেই গড়ে ওঠে গ্রামীণ পরিবেশ ও সংস্কৃতি। বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের সংস্কৃতির মূল আধার আসলে গ্রাম। লোকজ বাউল গান, জারি, সারি, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি গান থেকে শুরু করে খেলাধুলা, কিচ্ছার মতো সামাজিক আনন্দ উপকরণগুলোর উৎস আসলে গ্রামই। আর শহুরে সংস্কৃতি অনেকটা পাশ্চাত্য ও অনুকরণনির্ভর। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে শহুরে সংস্কৃতির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে গ্রামগুলোতেও। এমনটি হলে, ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে পারে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি।

যাদের বেড়ে ওঠা শহরে, যারা কখনো গ্রাম দেখেনি, যারা সুবিশাল ভবনের পাশের ফ্ল্যাটে থাকা প্রতিবেশীকেও ভালো করে জানে না; তারা দুনিয়া ঘুরে দেখার আগে নিজ দেশের গ্রামগুলোকে ঘুরে ঘুরে দেখুন, কী অপার সৌন্দর্য আর সুখময় হূদ্য পরিবেশ যুগ-যুগান্তর ধরে বহন করে চলেছে এগুলো। পৃথিবীর কোনো সৌন্দর্যের সঙ্গেই এর তুলনা হবে না। ছুটি পেলে অন্য কোথাও না হলেও অন্তত নিজ গ্রাম থেকেই ঘুরে আসা যায়।  দেখা যায়, শহরে বসবাসকারী প্রায় প্রত্যেকেরই একটি গ্রামের বাড়ি আছে। তাদের আদিপুরুষরা কর্মসূত্র কিংবা জীবিকার তাগিদে একসময় শহরমুখী হয়েছিলেন। যারা গ্রামের আলো-বাতাসে বড় হয়েছেন, কিন্তু বহুদিন ধরে গ্রামে যাওয়া হয় না, তারাও অবসর পেলে কয়েক দিনের জন্য গ্রামীণ পরিবেশে ঘুরে বেড়ানোকে বেছে নিতে পারেন। এতে বহুদিন ধরে শহুরে পরিবেশ আপনার মধ্যে যে কর্মক্লান্তি ও মানসিক ক্লেদ তৈরি করেছে তা কিছুটা হলেও দূর হয়ে যাবে।

আমাদের গ্রামগুলো ঘুরে দেখার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় কিংবা ঋতু লাগে না। সব ঋতুতেই গ্রাম ঘুরে দেখা দারুণ উপভোগ্য। শহরে থেকে ঋতুগুলোকে ভালো করে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। কিন্তু গ্রামীণ পরিবেশ প্রকৃতি একেক ঋতুতে একেক রকম। ঋতু বদলের সঙ্গে প্রকৃতির রঙ বদলের পাশাপাশি বদলে যায় কর্মপরিবেশও। ঋতুগুলোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে গ্রামীণ কৃষিব্যবস্থা। এই কৃষির ওপর নির্ভর করে সারা দেশের মানুষ। ধান, রবি শস্য উৎপাদন, মাছ আহরণ এবং অন্যান্য কৃষিপণ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত গ্রামের মানুষ। অন্যান্য ঋতুর মতো বর্ষায়ও গ্রামের সৌন্দর্য অপরূপ। গ্রীষ্মের দাবদাহকে পেছনে ফেলে বর্ষা এলেই আরো সবুজ হয়ে ওঠে প্রকৃতি। এমন সবুজ সৌন্দর্য আর গ্রামীণ জীবন দেখে অভিভূত হয়ে যায় অনেক ভিনদেশিও। বর্ষা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে আর কোথায় বেড়াবেন তার পরিকল্পনায় এখনো ডুবে আছেন আপনি!

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads