বন্যায় হাজার কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি

ছবি : সংগৃহীত

প্রাকৃতিক দুর্যোগ

বন্যায় হাজার কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২ অগাস্ট, ২০১৯

এবারের বন্যায় হাজার কোটি টাকার ওপরে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আউশ, আমন ও আমনের বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসলের ৮০ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত  ও   ৯১ হাজার ৪৭৪  হেক্টর জমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সারা দেশে শতকরা সাড়ে আট ভাগের ওপরে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।  এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বন্যাকবলিত এলাকায় প্রণোদনা বাড়ানোর চিন্তা করছে সরকার।

ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মীর নূরুল আলম বলেন, বন্যায় কোনো জেলায় ফসলের বেশি ক্ষতি হয়েছে, কোনো জেলায় ক্ষতি কিছুটা কম হয়েছে। এবারের বন্যায় ৬ লাখ ৫৩ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ১৫৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

মীর নূরুল আলম বলেন, রোপা আমনের বীজতলা পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। আমরা এখন আপৎকালীন ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেখানে বিকল্প বীজতলা গড়ে তোলা যাবে, সেখানে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফসলের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের স্বল্পমেয়াদি বিকল্প ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পানি সরে যাওয়ার পরে যেখানে মাষকলাই চাষ করা যাবে, সেখানে বিনামূল্যে মাষকলাইয়ের বীজ দেওয়া হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এর ফলে মারাত্মক কোনো বিপর্যয় আসবে, এমন আশঙ্কা নেই। ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনা বাড়ানোর বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক  বলেন, যেসব এলাকায় কৃষক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সেখানে বাড়তি প্রণোদনা দেওয়া হবে। প্রয়োজনে আমরা বিনামূল্যে বীজ, সার ও বিভিন্ন উপকরণ দেব।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় দেশের ৩১ জেলায় বিভিন্ন ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিছু ফসলের আংশিক ক্ষতি হলেও কোনো কোনো ফসলের জমি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বর্তমানে সারা দেশে দণ্ডায়মান বিভিন্ন ফসলের পরিমাণ ১১ লাখ ৬৫ হাজার ১০ হেক্টর। এর মধ্যে ৮০ হাজার ৫৮৫ হেক্টর ফসলি জমি সম্পূর্ণ এবং ৯১ হাজার ৪৭৪ হেক্টর ফসলি জমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৯ হেক্টর ফসলি জমি। শতকরা হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ ৮ ভাগের বেশি।

বন্যায় দেশের ৩১ জেলায় আউশ, আমন, আমনের বীজতলা, গ্রীষ্মকালীন সবজি, পাট, পানবরজ, আখ, কলা ও মরিচজাতীয় ফসলের ক্ষতি হয়েছে। সবজিজাতীয় ফসলের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চিচিঙা, করল্লা, চালকুমড়া, পটোল, ঝিঙা, কাকরোল, ঢেঁড়স ও শসা। বন্যায় সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নোয়াখালী, ফেনী, রাঙামাটি, বান্দরবান, রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, নাটোর, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পাবনা, দিনাজপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা, নওগাঁ, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা আক্রান্ত হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে আউশের ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫৫ হেক্টর জমির মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২১ হাজার ৬২ হেক্টর জমি, আংশিক ক্ষতি হয়েছে ২৯ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমির ফসলের। এতে দেশের শতকরা সাড়ে পাঁচ ভাগ আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে এ বছর ৯১ হাজার ৮৮৬ টন ধান কম উৎপাদনের শঙ্কা রয়েছে। ৯৭ হাজার ১৮৪ জন কৃষককে আর্থিক ক্ষতি গুনতে হবে ২৫২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এছাড়া রোপা আমনে ৪১ হাজার ৯৫১ হেক্টর জমির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের পরিমাণ ২ শতাংশ। আর বোনা আমনের ক্ষতি হয়েছে ১৭ ভাগ।

অধিদপ্তর আরো বলছে, আমনের বীজতলার ৯ হাজার ৭৫ হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ও ৭ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বীজতলা ক্ষতির শতকরা হার ১১ ভাগেরও বেশি। আর দণ্ডায়মান ১১ লাখ ৭ হাজার ৫৪৭ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮ হাজার ৪৬৮ হেক্টর ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭ হাজার ৪৫ হেক্টর জমির সবজি। সারা দেশে ক্ষতিগ্রস্ত সবজির পরিমাণও ৮ ভাগের বেশি।

ক্ষতি হয়েছে পাট, পান বরজ, আখ, কলা ও মরিচেরও। বন্যায় দেশের শতকরা ৯ ভাগ পাটের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২২ লাখ ৭ হাজার ১৩৯ হেক্টর পাটক্ষেতের মধ্যে ১৩ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমির পাট সম্পূর্ণ ও ৩১ হাজার ৬৬৩ হেক্টর জমির পাট আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পাটচাষির সংখ্যা এক লাখের বেশি। আর বন্যায় পাটে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৬০ কোটি টাকা। অন্যদিকে সারা দেশে বন্যায় পানবরজের ক্ষতি এক ভাগের ওপরে, আখে ৮ ভাগ, কলায় ১১ ভাগ ও মরিচে ১০ ভাগের ওপরে।

ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ হামিদুর রহমান বলেন, বর্তমানে কৃষকের তালিকা তৈরি হচ্ছে, পানি নেমে যাওয়ার পর যেন কৃষকরা মাষকলাই চাষ করতে পারে, সেজন্য মাষকলাইয়ের বীজ দেওয়া হবে। এতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের প্রোটিনের চাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে গরুর খাদ্যের জোগানও হবে।

অধিদপ্তরের সাবেক এই পরিচালক বলেন, আমনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারিভাবে বীজতলা তৈরি হচ্ছে। এছাড়া কৃষকও অনেক সময় উঁচু জায়গায় বীজতলা তৈরি করে। বর্তমানে ভাসমান বীজতলা তৈরির পদ্ধতিও আছে। এছাড়া আগামী বোরো মৌসুমে কৃষকের জন্য সার ও বীজসহ বিভিন্ন উপকরণে প্রণোদনা তো থাকবেই। ফলে বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা অবশ্যই সম্ভব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads