তিনদফায় বন্যায় সিরাজগঞ্জ জেলার পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে নদী ভাঙ্গনের শিকার হয় ঘরবাড়ী হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে ঝুপড়ি তুলে মানবেতরভাবে করছে। অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত বসসতভিটায় আকড়ে ধরে রয়েছে। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে এসব মানুষের। বিশেষ করে চরাঞ্চলের ত্রিশটি ইউনিয়নের মানুষের দুর্ভোগ চরমে। চরাঞ্চলের পানিবন্দী মানুষের হাত-পায়ে ঘাসহ ডায়রিয়া ও আমাশয় দেখা দিচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার ও শিশু খাদ্যের সংকটে ভুগছে বন্যা কবলিতরা। গো-খাদ্যের অভাবে গবাদি পশুগুলোও শুকিয়ে যাচ্ছে। মহাদুর্যোগের মধ্যে আসন্ন ঈদ কিভাবে কাটাবে এনিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
অন্যদিকে, ভাঙ্গনে বসতভিটা হারিয়ে পথের ফকির হয়ে যাচ্ছে অনেক পরিবার। মাত্র দুদিন আগে যে পরিমান বাসস্থান ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ন ছিল মাত্র ২০ মিনিটের ব্যবধানে সেসব মানুষ একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। সিমলা গ্রামের সম্পদশালী হারুন অর রশিদ তালুকদার ছিলেন একজন সম্পদশালী ব্যক্তি। নিজবাড়ীতে ১২টি কাচাপাকা ঘর ছিল। ঘরে ছিল দামীদামী আসবাবপত্র। গত শুক্রবার বিকেলে হারুনের বাড়ীঘর সম্পুর্ন নদীতে বিলীন হয়ে যায়। শুধু পরনের লুঙ্গিটি সাথে নিয়ে ঘর থেকে বের হতে পারে। মাত্র ২০ মিনিটের ব্যবধানে হারুন সবকিছু হারিয়ে পথের ফকির যায়। তার মতো ওই এলাকার আরো ৫০ জনের একই অবস্থা। হাজার হাজার মুরগিসহ খামার বিলীন হয়ে যায়। এ সকল পরিবার এখন খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছে। শুধু ত্রাণের প্যাকেট ছাড়া কোন সহায়তা তাদের কপালে জোটেনি।
ওয়াপধা বাঁধ এলাকার মনিজা খাতুন জানান, স্বামী নেই। ছেলেরা ঠিকমত খাবার দেয় না। বন্যার পানিতে ঘরবাড়ী তলিয়ে গেছে। আগে সহায়তা নিয়ে চলতাম। এখন কেউ সহায়তা দেয় না। খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন করছি।
বন্যা খাতুন জানান, আয়-রোজগার নেই। ঈদের আগে একমুঠো সেমাই চিনি কিনব সে সামর্থ্য নেই।
সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, বন্যায় সাতটি উপজেলার ৫ লাখ ৪ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৪ হাজার হেক্টরও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। শতাধিক কিলোমিটার রাস্তা-বাধের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সহস্রাধিক ঘরবাড়ী সম্পূর্ণ এবং ৫ হাজারের অধিক বসতবাড়ী আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে ২৮১ মেট্টিক জিআর চাল, ২লাখ ৮৯ হাজার টাকা জি আর ক্যাশ, ২ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ২ লক্ষ টাকার গো খাদ্য বিতরণ করেছে।