বন্যার বিস্তার বাড়ছে

ছবি : সংগৃহীত

প্রাকৃতিক দুর্যোগ

উজান থেকে পানির ঢল

বন্যার বিস্তার বাড়ছে

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৪ জুলাই, ২০১৯

দেশে অতি ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢল অব্যাহত থাকায় নদ-নদীগুলোর পানি বেড়েই চলেছে। পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া প্রায় সব নদীতেই উজান থেকে আসা পানির প্রবাহ বাড়ছে। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইসগেটের সব খুলে দিয়ে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

চলতি সপ্তাহে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হবে, একই সঙ্গে বন্যা মধ্যাঞ্চলেও (ঢাকার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল) ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতে নদীগুলোর উৎসের কাছে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় নদীর পানিও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর মাঝে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধাসহ উত্তরের জেলাগুলোর লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন।

নদ-নদীর পানি ২৩ পয়েন্টে বিপদসীমার ওপরে : বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের গতকাল শনিবারের তথ্য অনুযায়ী, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াই, সোমেশ্বরী, কংস, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, ধরলা, তিস্তা, ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদীর পানি ২৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

একদিন আগে গত শুক্রবার সাতটি নদীর পানি ১২টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সাঙ্গু নদীর পানি বান্দরবানে ১২১ সেন্টিমিটার ও দোহাজারীতে বিপদসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আগামী ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলেও জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র।

বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের সিকিম, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল, আসাম ও মেঘালয় প্রদেশসমূহের বিস্তৃত এলাকায় আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী এবং কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সংলগ্ন ভারতের বিহার এবং নেপালে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

খুলে দেওয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের সব গেট : একটানা ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গতকাল শনিবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানির প্রবাহিত হয়। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক উপসহকারী প্রকৌশলী আমিনুর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, উজানের ঢল সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইস গেটের (জলকপাট) সবই খুলে রাখা হয়েছে। এছাড়া তিস্তা বিপদসীমার ওপরে চলে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানের বাঁধগুলো হুমকির মুখে পড়েছে।

লালমনিরহাটে রেড অ্যালাটর্ : লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদীর দুই কূল ছাপিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। গত দুদিন ধরে তিস্তার পানি অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকায় হাতীবান্ধা উপজেলার গোড্ডিমারী ইউনিয়নে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজের উত্তর প্রান্তের ফ্লাড বাইপাস সড়কটি যে কোনো মুহূর্তে কেটে দেওয়া হতে পারে বলে জানান কর্মকর্তারা। এ কারণে তিস্তা ব্যারাজের আশপাশে এবং ফ্লাড বাইপাস সড়কটির উজানে ও ভাটিতে বসবাসকারী লোকজনসহ নদী তীরবর্তী লোকজনকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়। একইসঙ্গে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কায় এ এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

বিপদসীমার ওপরে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র : উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের সবকটি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর ফলে গত ২৪ ঘণ্টায় চর ও দ্বীপ চরসহ নদী তীরবর্তী নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে সাতটি উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া তিস্তা নদীর পানি বাড়লেও কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

বাড়ছে যমুনা, করতোয়া এবং ঘাঘট নদীর পানিও : গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদের তিস্তামুখ ঘাটে পানি বেড়ে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া তিস্তা, যমুনা, করতোয়া, ঘাঘট নদীর পানিও বেড়েছে। তিস্তা ও ঘাঘট নদীর শহর পয়েন্টে পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করে। যে কোনো সময় কয়েকটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড।

বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর তীরবর্তী গাইবান্ধার চরসহ নিম্নাঞ্চলের অন্তত ২০টি গ্রাম ডুবে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েন গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ। এসব এলাকার কাঁচা রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। পানিতে ডুবে গেছে ধানের বীজতলা, পাট, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের জমি। পানি বৃদ্ধি আর তীব্র স্রোতের কারণে নদীর তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনে এরই মধ্যে চার উপজেলার পাঁচ শতাধিক বসতভিটা ও আবাদি জমি নদীতে তলিয়ে গেছে।

আসামের বন্যা চোখ রাঙাচ্ছে : ভারতের আসামে ভয়াবহ বন্যার কারণে ৮ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। আসামের অবস্থান বাংলাদেশের উজানে হওয়ায় সেখানকার বন্যার প্রভাব পড়তে পারে এদেশেও। তাই অব্যাহত বৃষ্টি ও আসাম থেকে আসা পানিতে দেশের প্রধান নদীগুলোর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।

সুরমা অববাহিকায় দেড় লাখ লোক পানিবন্দি : ঢল ও বর্ষণজনিত কারণে বৃহত্তর সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে। নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। সুনামগঞ্জে ৩০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়। বন্ধ রয়েছে অর্ধেকেরও বেশি। সিলেটে ৬০ প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ। সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের অন্তত দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। এই তিন জেলায় এক হাজার ৯৯৩ হেক্টরের আউশ, বোনা আমন ও রোপা বীজতলা নিমজ্জিত হয় বলে কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়।

বান্দরবানে প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষ পানিবন্দি : অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানের সাত উপজেলায় প্রায় ত্রিশ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বন্যার পানিতে প্রধান সড়কসহ অভ্যন্তরীণ বেশিরভাগ সড়ক প্লাবিত হওয়ায় চতুর্থ দিনেও চালু হয়নি সারা দেশের সঙ্গে পর্যটন শহর বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ। এছাড়াও পাহাড় ধস এবং সড়কে পানি ওঠায় জেলার রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও বন্ধ রয়েছে। সাঙ্গু এবং মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সাইক্লোন শেল্টারে খোলা ১২৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেয় হাজারো বন্যা দুর্গত পরিবার।

সব প্রস্তুতি গ্রহণ করার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী : দেশের সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের সর্বত্র প্রস্তুতি রয়েছে, আমরা যে কোনো ধরনের সংকটের মুখোমুখি হতে পারি, কিন্তু আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যাতে বন্যার কারণে মানুষের ক্ষতি না হয়। গতকাল শনিবার নিজ কার্যালয়ে মন্ত্রণালয় ও অধীন সংস্থাসমূহের বার্ষিক কর্মক্ষমতা চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পাহাড়ি বা হাওর এলাকা বা দেশের উঁচু জায়গার বন্যার পানি ধীরে ধীরে নিচু এলাকায় নেমে আসবে। আগস্টের শেষের দিকে বন্যার পানি ধীরে ধীরে মধ্যম এবং দেশের নিম্ন অংশে নেমে আসবে, যার ফলে ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি হবে।

এটিকে বন্যার প্রাকৃতিক নিয়ম হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যা কিছু আশীর্বাদও নিয়ে আসে। এটি প্রাকৃতিকভাবে জমির উর্বরতা এবং ভূগর্ভস্থ পানি রিচার্জ করতেও সাহায্য করে। প্রতিবার বন্যার পর দেশের খাদ্য উৎপাদন ভালো হয়।

চট্টগ্রামের ১৬ উপজেলার ১৪টিতেই বন্যার দুর্দশা : টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সাঙ্গু, হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে পানি বেড়ে চট্টগ্রাম জেলার ১৪টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জেলার ১৬টি উপজেলার মধ্যে শুধু মিরসরাই ও সন্দ্বীপ উপজেলা কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অন্য ১৪ উপজেলার মধ্যে সাতকানিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও সীতাকুণ্ড উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এসব উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাঁশখালী, সীতাকুণ্ড, হাটহাজারীসহ কয়েকটি উপজেলার পাহাড়ি এলাকা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি স্থাপনকারীদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ভূমিধসের আশঙ্কায়।

৬ জুলাই থেকে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রামে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। থেমে থেমে এই বৃষ্টি চলে গতকাল শনিবার পর্যন্ত। এর মধ্যে চট্টগ্রামের উত্তর ও দক্ষিণ অংশের বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে যুক্ত কর্ণফুলী, হালদা ও সাঙ্গু নদীতে পাহাড়ি ঢলের পানিও বাড়তে থাকে। এসব নদীর সঙ্গে যুক্ত খালগুলোতেও পানি বেড়ে তলিয়ে যায় বিভিন্ন লোকালয়।

পানি বেড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতকানিয়া। উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে সোনাকানিয়া (আংশিক) ছাড়া বাকি সব ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে। সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পৌরসভাতেও পানি।

তিনি বলেন, ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৬টিতে প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। সাঙ্গু নদীর পানি বেড়েছে, সঙ্গে যোগ হয়েছে ভারী বৃষ্টি। ইউনিয়নগুলোর বেশিরভাগ অভ্যন্তরীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।

উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালীর তিনশর মতো পরিবার দুর্দশায় বলে জানিয়েছেন ইউএনও মোমেনা আক্তার। তিনি বলেন, পুকুরিয়া, শিলকূপ, কালিপুর ও পুঁইছড়ি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি হচ্ছে, পানি উঠছে, বন্ধ হলে আবার নেমে যাচ্ছে।

গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সীতাকুণ্ড উপজেলায় ১৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় বলেন, সদরের মুরাদপুর ইউনিয়নহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার সৈয়দপুর, বারৈয়াঢালা, বাড়বকুণ্ড এলাকা প্লাবিত হয়।

উত্তরের উপজেলাগুলোর মধ্যে ফটিকছড়িতে হালদা নদীর ঢলের পানিতে বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়। উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, উপজেলার সদরসহ ২০টি ইউনিয়নের সবকটি কমবেশি প্লাবিত। তবে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত সমিতির হাট ও চন্দরপুর ইউনিয়নে।

উত্তর চট্টগ্রামের আরেক উপজেলা হাটহাজারীর ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে গুমানমর্দন, নাঙলমোড়া, ছিপাতলি, মেখল, গড়দুয়ারা, উত্তর মাদার্শা ও দক্ষিণ মাদার্শা এবং ফরহাদাবাদ (আংশিক) ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, পাহাড়ি ঢলে এসব ইউনিয়নের মূল সড়ক ডুবে গেছে। হালদার পানি এলাকাগুলোর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কর্ণফুলী তীরের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় পানিকবলিত তিনশ পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে এসে তাদের খাবার দেওয়া হয়েছে বলে জানান ইউএনও মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, বৃষ্টি হচ্ছে, পানি জমছে আবার নেমে যাচ্ছে। এখানে স্বর্নিভর রাঙ্গুনিয়া ও ইছাখালী ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।

পটিয়ার ইউএনও হাবিবুল হাসান জানান, উপজেলায় ছনহরা, আশিয়া ও শোভনদণ্ডী ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত। চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে গত শুক্রবার বিকালে পানি উঠে যায়।

দক্ষিণের কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা, চরপাথরঘাটা, ঝুলধা এলাকার কিছু এলাকা কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হলেও বড় কোনো দুর্যোগ নেই বলে জানালেন ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরিজ।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমেদ জানান, উপজেলার চারটি ইউনিয়ন রায়পুর, জুঁইদণ্ডী, বারখাইন ও হাইলধর এলাকার লোকজন পানিকবলিত। টানা বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হলেও এখনো সেখানকার লোকজনকে সরিয়ে আনার মতো পরিস্থিতি হয়নি।

বোয়ালখালীর ইউএনও একরামুল সিদ্দিকী জানান, তার এলাকার চরণদ্বীপ ও শ্রীপুর খরণদ্বীপে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অনেককেই সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে আসা হয়েছে এবং তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

মিরসরাইয়ে দুটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন। তিনি জানান, উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের দুটি গ্রাম, ইছাখালী ইউনিয়নের কিছু এলাকা ও পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু অংশ প্লাবিত হয়।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত সরকার : বাংলাদেশ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আ স ম সুজা জানান, চলতি সপ্তাহে যদি বৃষ্টি আরো বাড়ে, তাহলে অব্যাহত বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে দেশের প্রধান নদীগুলোর পানিও বাড়বে। আসামের পাহাড়ি অঞ্চলের পানি যদি সুরমা-কুশিয়ারা দিয়ে প্রবাহিত হয় তাহলে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

আগামী কয়েকদিন অব্যাহত ভারী বর্ষণের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে দেশে এরই মধ্যে বন্যাকবলিত ১০ জেলায় পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। বন্যায় আক্রান্ত হতে পারে আরো নতুন নতুন জেলা। যে কোনো মূল্যে এই বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসনের সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কোনো অবস্থাতেই যেন বন্যায় কোনো লোক মারা না যান, খাদ্যে কষ্ট না পান বা কোনো দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক নজর রাখতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে বন্যাকবলিত এলাকায় প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে চলতি সপ্তাহের শেষদিকে ২০-২২ জুলাইয়ের মধ্যে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তার পানি কমতে পারে। বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, গঙ্গা, যমুনার পানি একসঙ্গে বৃদ্ধি পেলে সাধারণত বাংলাদেশে বড় ধরনের বন্যা হয়ে থাকে। আপাতত তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা নেই। কারণ যমুনা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি এ সপ্তাহে কমার পর জুলাইয়ের ২৮ তারিখের পর রাজশাহীতে পদ্মার পানি বাড়তে পারে।

রাজধানীর ঢাকা বা আশপাশের অঞ্চল বন্যার ঝুঁকিতে নেই মন্তব্য করে আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে ঢাকার আশপাশের নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এ কারণে ঢাকার পাশে শীতলক্ষ্যা, বালু নদীর পানি এ সপ্তাহে বিপদসীমার কাছাকাছি চলে আসতে পারে। হয়তো বিপদসীমা অতিক্রমও করতে পারে। কিন্তু যমুনার পানি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় রাজধানী ঢাকা আপাতত বন্যার ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। অবশ্য সবকিছুই নির্ভর করছে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বৃষ্টির পরিমাণের ওপর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads