চুলা তলিয়ে গেছে। লাকড়ি ভিজে জবজব করছে। চুলা জ্বালানোর কোন উপায় নেই। জীবন বাঁচাতে কষ্ট করে দিনে একবার রান্না করে সারা দিন খেতে হচ্ছে। এভাবেই চলছে বন্যাকবলিতদের কষ্টের জীবন। এ অবস্থায় শুকনো-শিশু খাদ্যের খাবার অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকার থেকে শুধু দশ কেজি চাল সহায়তা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই সহায়তাও একেবারে অপ্রতুল। একইসাথে টিউবওয়েলগুলো তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানিরও চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে পেটের পীড়া ও পানিতে থাকায় নানা রোগ ব্যাধি দেখা দিচ্ছে। এছাড়াও দীর্ঘদিন বসতবাড়ী পানির নীচে থাকায় ঘরবাড়ীর চরম ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। সবমিলিয়ে বন্যাকবলিতরা চরম দুর্বিসহ অবস্থায় জীবনযাপন করছে।
কাওয়াকোলা চরাঞ্চলের হালিমা বেগম জানান, চুলা-লাকড়ি তলিয়ে যাওয়ায় ঠিকমত রান্না করা যায় না। রান্না করার নানা সমস্যা। কেউ একমুঠো চিড়া-গুড় দেয় না। শুকনো খাবার পেলে তাও খেয়ে দিন পার করতে পারতাম। শিশুরা খাবারের জন্য কান্নাকাটি করে। যদি বিস্কুট বা শুকনো জাতীয় কিছু খাবার হতো তবে ছেলেমেয়েকে খাওয়ানো যেতো।
একই এলাকার ফরহাদ হোসেন জানান, এলাকায় পানিবাহিত রোগ বাড়ছে। ওষুধপত্র বা চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। সাপ-বিচ্ছুর ভয়। স্যাতস্যাতে মাটিতে কেচো-পোকামাকড়ের সাথে বসবাস করতে হচ্ছে। পানিতে থাকায় হাত-পায়ে থ্যাক থ্যাকে ঘা দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। এতে নানা রোগ দেখা দিচেছ। এ অবস্থায় চিকিৎসাসেবাও জরুরি হয়ে পড়ছে।
একই এলাকার মজনু জানান, ঘরবাড়ী পানির নীচে থাকায় বেড়া ও খামে পচন ধরেছে। বন্যা পরবর্তীতে ঘর মেরামত করতে না পারলে থাকা কষ্টকর হয়ে যাবে। কিন্তু কর্ম নেই। ফসলও নষ্ট হয়ে গেছে। আগামীতে কিভাবে চলব এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।
কৃষক নুরু মিয়া জানান, গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। টাকা নেই, খড় ভুষিও কিনতে পারছি না। এক আটি খড়ের দাম আট টাকা। প্রতিদিন ১০ আটি করে খড় কিনতে ৮০ টাকা লাগে। কর্ম নেই টাকা পাবো কোথায়? বাধ্য হয়ে কলার পাতা, কলা গাছ কুচি কুচি করে কেটে গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে। এতে গরুগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। এতো কষ্ট আর দুর্বিসহ অবস্থায় থাকলেও সরকার বা বিত্তবানরা যদি শুকনো খাবার, শিশু খাদ্যসহ ওষুধের ব্যবস্থা করা হতো তবেই অনেকটাই কষ্ট লাঘব হতো।
এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, চাল বিতরনের পাশাপাশি প্রায় ২ হাজার ১০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও গো-খাদ্যেও জন্য ২ লক্ষাধিক টাকা বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরো বিতরণ করা হবে।