১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ছিল বাংলা সন পরিক্রমায় শ্রাবণের শেষ রাত। কেমন ছিল সে রাতের প্রকৃতি? সে রাতে কি বৃষ্টি হয়েছিল? আকাশ কি কেঁদে উঠেছিল সুশৃঙ্খল বাহিনীর শৃঙ্খলা ভেঙে বেরিয়ে আসা ঘাতকদের অস্ত্রের অট্টহাসি শুনে?
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে সূর্য উঠেছিল ঠিকই, কিন্তু সে দিনের সূর্য কোনো সম্ভাবনার কথা বলেনি। এক স্বপ্নভঙ্গের বিস্ময়-বেদনা নিয়ে শুরু হয়েছিল দিন। কেউ ভাবতেই পারেনি, ১৫ আগস্ট সকালের সূর্য কোনো শুভদিনের সূচনা নয়, একটি বেদনাবিধুর কালো ইতিহাসের জন্ম দিয়ে ফেলেছে। বাঙালির জাতীয় জীবনে অনেক কালো অধ্যায় আছে। কিন্তু ১৫ আগস্ট রাতে রচিত হয় যে অধ্যায়, বাংলার ইতিহাসে তার চেয়ে বেদনার, গ্লানিকর আর কিছু নেই। নিজের বাড়িতে সপরিবারে নিহত হলেন জাতির জনক। জাতি পিতৃহীন হলো। যে জাতি মাত্র সাড়ে তিন বছর আগে বুকের রক্ত দিয়ে ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতার সূর্য, সেই জাতিই কলঙ্কিত হলো পিতৃঘাতক হিসেবে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরেছিলেন নায়কের বেশে। পেয়েছিলেন বীরোচিত সংবর্ধনা। তাকে কেন প্রাণ দিতে হলো নিজের দেশে ঘাতকের হাতে? সদ্য স্বাধীন দেশ তখনো বিধ্বস্ত। মুছে ফেলা যায়নি যুদ্ধের ছাপ। ভেঙে যাওয়া অর্থনীতির চাকা সচল করার চেষ্টা চলছে। চলছে দেশকে নতুন করে গড়ার পরিকল্পনা। মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সেই সময়ে কেন দেশের স্থপতিকে খুন করা হলো?
এই খুনের পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের খবর পরে উন্মোচিত হয়। স্বার্থান্বেষী মহলের কুচক্রে বাঙালি জাতি অকৃতজ্ঞ হিসেবে বিশ্ব দরবারে দুর্নামের ভাগীদার হয়ে পড়ে। অথচ, বঙ্গবন্ধুকে হারানোর ক্ষতি এ জাতি আজো পুষিয়ে উঠতে পারেনি। কোনোদিন পারবেও না।