অসংখ্য-অগণিত মাখলুক সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহপাক। ফেরেশতা তাঁর তেমনি এক বিশেষ সৃষ্টি। ‘ফেরেশতা’ ফারসি শব্দ। আরবিতে বলা হয় ‘মালাকুন’ বা ‘মালাইকা’। এর অর্থ বার্তাবাহক। ইসলামী পরিভাষা মতে, এমন এক নূরানী সৃষ্টিকে ফেরেশতা বলা হয়, যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করতে সক্ষম। সর্বদা তারা আল্লাহর নির্দেশ পালনে রত থাকেন, কখনো বিরুদ্ধাচরণ করেন না (কাওয়াইদুল ফিকহ)। ফেরেশতা মূলত নূরের তৈরি। রসুল (সা.) বলেছেন, ফেরেশতারা নূর থেকে, জিন আগুন থেকে এবং আদম (আ.) মাটি থেকে সৃষ্ট (মুসলিম)।
ফেরেশতাদের বিশেষ কিছু গুণ-ক্ষমতা রয়েছে। তারা সাধারণত অদৃশ্য থাকেন। আক্ষরিক বা বাস্তবিক কোনো আকার-আকৃতি নেই তাদের। ক্ষুধা-তৃষ্ণা, নিদ্রা-তন্দ্রা ও কমনা-বাসনা থেকে মুক্ত। মনুষ্য চোখে এদের দেখা সম্ভব নয়। আল্লাহ মহান যখন যা হুকুম করেন, তারা তখন তা পালন করেন। ফেরেশতাদের মাধ্যমেই আল্লাহ পৃথিবীতে রহমত ও শাস্তি নাজিল করেন। নবী-রসুলদের ওপর ফেরেশতাদের মাধ্যমেই আসমানী কিতাব নাজিল হয়েছে। এ ছাড়া বিচারের দিন ফেরেশতারা বান্দার ভালো-মন্দের সাক্ষ্য দেবেন। ফেরেশতাদের প্রকৃত সংখ্যা একমাত্র আল্লাহ মহানই অবগত। এই মর্মে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আপনার প্রতিপালকের বাহিনী (ফেরেশতা) সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন (সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত-৩১)।
নবী-রসুলদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছানোর দায়িত্বশীল হজরত জিবরাইল (আ.), সৃষ্টির জীবিকা বণ্টনের দায়িত্বশীল হজরত মিকাইল (আ.), রুহ কবজ করার দায়িত্বশীল হজরত আজরাইল (আ.) ও কেয়ামতের দিনে শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়ার দায়িত্বশীল হজরত ইসরাফিল (আ.)সহ বেশকিছু ফেরেশতার নাম ও তাদের দায়িত্বের কথা কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়। এ ছাড়া আরো কিছু ফেরেশতার বর্ণনাও পাওয়া যায়। যেমন- মানুষের ভালোমন্দ আমল লিপিবদ্ধ করেন কিরামান কাতিবিন। মৃত্যুর পর কবরে প্রশ্ন করবেন মুনকার ও নাকির। জাহান্নামের রক্ষক ফেরেশতা মালিক এবং জান্নাতের জিম্মাদার ফেরেশতা রিজওয়ান। দুনিয়া ও আখিরাতের সব কাজ আঞ্জাম দেওয়ার জন্য অগণিত ফেরেশতা বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন (সীরাতুন্নবী)।
সুরা ফাতিরের ১নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আসমান ও জমিনের স্রষ্টা। যিনি ফেরেশতাদের বার্তাবাহক হিসেবে নিয়োগ করেছেন, যাদের পালকবিশিষ্ট দু-দুটি, তিন-তিনটি এবং চারটি ডানা রয়েছে। রসুল (সা.) বলেছেন, হজরত জিবরাইলের ৬০০ ডানা আছে। উল্লেখিত বর্ণনা থেকে জানা যায়, ফেরেশতারা ডানাবিশিষ্ট। সেজন্য ফেরেশতাদের পাখিরূপে কল্পনা করা যাবে না। বস্তুত ফেরেশতাদের নির্দিষ্ট কোনো আকার-আকৃতি নেই। বিভিন্ন আকৃতিতে রসুল (সা.) ও পূর্ববর্তী নবীদের সঙ্গে তারা সাক্ষাৎ করতেন।
লেখক : আলেম ও সাংবাদিক