গত ১৯ জুলাই প্রকাশিত হয় এইচএসসি ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ফল। জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ফলাফল যেন ইতোমধ্যে ঘুরিয়ে দিয়েছে অনেক শিক্ষার্থীর জীবনের মোড়। কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন না করায় তোমরা অনেকেই হয়তো হতাশায় ভেঙে পড়েছ। অনেকেই হয়তোবা আবার সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছো এই মুহূর্তে তোমাদের কী করা উচিত। ঠিক এক বছর আগে আমিও তোমাদের মতো এরকম একটি পরিস্থিতিরই সম্মুখীন হয়েছিলাম।
ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার। তাই এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলাম দেশের স্বনামধন্য চার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য। কিন্তু যখন এইচএসসির ফল প্রকাশিত হলো, আমি জানতে পারলাম ইংরেজিতে আমার এ+ আসেনি। ভালো পরীক্ষা দেওয়ার পরেও এরকম ফল সত্যি সেদিন আমায় বেশ হতাশ করেছিল! বুকের ভেতরটা যেন ক্রমশ ভারী হয়ে আসছিল। সঙ্গে ছিল ভয়- চার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে পারব তো?
আমার মতো হয়তো তোমরা অনেকেই এখন এই ভয়টার সম্মুখীন হয়েছ। হওয়াটাই স্বাভাবিক। ভয়, দুশ্চিন্তা, হতাশা এসব একেবারেই স্বাভাবিক অনুভূতি। অনেকেই হয়তো এখন তোমাদের বলবে, যা হওয়ার তা তো হয়ে গেছে। এখন আর হতাশ হয়ো না। তবে তোমাদের প্রতি পরামর্শ থাকবে কোনোভাবেই এই হতাশাকে ভুলে যেও না। হতাশা মোটেই কোনো খারাপ কিছু নয়। বরং হতাশ হয়ে নিজের পথচলাকে থামিয়ে দেওয়াই অত্যন্ত খারাপ একটি কাজ।
তুমি হয়তোবা আজ মন খারাপ করে তোমার স্বপ্ন পূরণের পথচলায় থমকে দাঁড়িয়েছ; কিন্তু একবারের জন্যও ভেবে দেখেছ কি তোমার বাবা-মা কিন্তু তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা এখনো থামাননি। সারাদিন সংসার-অফিসের কাজ শেষে রাতে ক্লান্ত দেহটা বিছানায় এলিয়ে তারা কিন্তু তোমার ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই কাটিয়ে দেন। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজের বাবা-মায়ের কথা আরেকবার ভাবো।
এইচএসসি পরীক্ষার ফল নিঃসন্দেহে একজন শিক্ষার্থীর জীবনের অনেক বড় একটি অর্জন। কিন্তু তার চেয়েও অনেক অনেক গুণ বড় অর্জন হলো নিজের স্বপ্নকে সত্যি করা। তোমাদের অনেকেই স্বপ্ন দেখেছ সাদা অ্যাপ্রোন পরে অসুস্থ মানুষের সেবা করার, তাদের মুখে হাসি ফোটানোর। কেউ কেউ আবার স্বপ্ন দেখেছ একজন দক্ষ প্রকৌশলী হয়ে মানুষের জীবনের প্রতিটি কাজকে আরো সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলার। এ ধরনের আরো শতসহস্র স্বপ্ন লালন করেই তোমরা আজ উপস্থিত হয়েছ প্রতিযোগিতার এই মঞ্চে। কিন্তু এখন যদি এইচএসসির ফলাফলে তোমরা ভেঙে পড়, তাহলে স্বপ্ন পূরণের এই বাকি পথটায় হাঁটবে কে?
তোমাদের জন্য সামনে অপেক্ষা করছে জীবনের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা। আর এই মুহূর্তে যদি তোমরা ভেঙে পড়, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেল, তাহলে তোমাদের স্বপ্নগুলো চিরকালই অধরা থেকে যাবে। তখন কী জবাব দেবে নিজেকে? কী জবাব দেবে বাবা-মাকে, যারা তোমায় এতটা ভালোবাসেন, তোমাকে নিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত চিন্তা করেন?
মনে রেখো, এই মুহূর্তে তুমি একজন যুদ্ধরত আহত সৈনিক। তার মানে এটা নয় যে তুমি পরাজিত। তোমার পরাজয় সেদিন ঘটবে, যেদিন তুমি এই হতাশা, রাগ ও ক্ষোভকে শক্তিতে পরিণত করতে ব্যর্থ হবে। তার আগমুহূর্ত পর্যন্ত তুমি একজন লড়াকু যোদ্ধা।
তাই বলছি কী, যে হতাশা আজ তোমার বুকের ঠিক মাঝখানটায় চিনচিনে ব্যথার সৃষ্টি করেছে, নিজের ওপর রাগের জন্ম দিচ্ছে, সেই হতাশাকে এত সহজে ভুলে যেও না। বরং এই হতাশাকে শক্তিতে পরিণত করে নতুন উদ্যমে নিজেকে তৈরি কর। দেখবে তখন আর কেউই তোমাকে আটকাতে পারবে না। সেদিন স্বপ্ন পূরণের এই দৌড়ে তুমিই হবে চ্যাম্পিয়ন। ততদিন পর্যন্ত হাল ধরে রেখো শক্তভাবে। প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকো নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে। তোমাদের সবার জন্য রইল অনেক অনেক শুভ কামনা ও ভালোবাসা!
লেখক : শিক্ষার্থী, প্রথম বর্ষ, পুরকৌশল বিভাগ রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়