ড. মদন গোপাল সাহা
আমরা জানি গাছ হচ্ছে কার্বন ডাই অক্সাইডের অন্যতম গ্রহীতা। ফলদ গাছের অধিক চারা রোপণে পরিবেশের শক্তি সঞ্চয় ও কার্বন উৎপাদন হ্রাসে ভূমিকা রাখে। তাই যখন কোনো ফল গাছ রোপণ করা হয় তখন শুধু সম্পদ অর্জিত হয় না সেই সঙ্গে পরিবেশে কার্বনের পরিমাণও হ্রাস পায়। কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে বৃক্ষ বিশেষত ফলদ বৃক্ষের চারা রোপণ অত্যন্ত অপরিহার্য। কারণ, ফলদ বৃক্ষ মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ফল বিভাগ, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, গাজীপুর উষ্ণ এবং অবউষ্ণ মণ্ডলীয় ফলের ওপর নিবিড় গবেষণা কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে অদ্যাবধি ৩৩টি বিভিন্ন ফল প্রজাতির ৮০টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে। প্রতি বছর বারি উদ্ভাবিত উন্নত প্রতিশ্রুতিশীল জাতসমূহের উন্নত গুণাগুণসম্পন্ন মাতৃকলম/চারা তৈরিপূর্বক বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বিতরণ করা হয়ে থাকে। ফলে বারি উদ্ভাবিত ফলের উন্নত জাতসমূহের চাষাবাদ সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাংলাদেশে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনের পাশাপাশি, ফলের উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ এবং রফতানি শক্তিশালী করা সম্ভব হচ্ছে। যা আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইতোমধ্যে, বিএআরআই কর্তৃক উদ্ভাবিত কিছু জাত যেমন বারি মাল্টা-১, বারি আম-৩, বারি আম-৪, বারি আম-৮ এবং বারি পেয়ারা-২ দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত ও কৃষক কর্তৃক সমাদৃত হয়েছে। যার ফলে দেশে ফলের উৎপাদন বাড়ছে এবং সার্বিকভাবে দেশের সবুজ অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
আমি মনে করি, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উন্নত পদ্ধতিতে ফল চাষ সম্পর্কিত প্রযুক্তি কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর মাধ্যমে দেশে ফল চাষ সম্প্রসারণ তথা ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করা সম্ভব। কৃষকদের মধ্যে অধিক সচেতনতা তৈরির জন্য ফল চাষ সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে উদ্ভাবিত ফলের উন্নত জাতসমূহ ও ফল উৎপাদন কলাকৌশল মাঠ পর্যায়ে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কৃষকদের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী বাগান স্থাপন, প্রদর্শনী বাগানে এবং গবেষণা কেন্দ্রে মাঠ দিবসের ব্যবস্থা ও আগ্রহী ফল চাষিদের জন্য শিক্ষা সফরের ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি ফল উৎপাদনের উন্নত কলাকৌশল সম্পর্কিত লিফলেট/ফোল্ডার/বুকলেট ফল চাষিদের মধ্যে বিতরণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
লেখক : মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, গাজীপুর