ফণীর ছোবলে নিহত ১৭

ছবি : সংগৃহীত

প্রাকৃতিক দুর্যোগ

ফণীর ছোবলে নিহত ১৭

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ৫ মে, ২০১৯

ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ গত শুক্রবার সকালে ভারতের ওড়িশ্যায় আঘাত হানার পর তাণ্ডব চালিয়ে যায়। গতকাল শনিবার সকালে ঝড়টি বাংলাদেশে আঘাত হানে। অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী বাংলাদেশে দুর্বল হয়ে ঢোকার পরও বজ্রাঘাত, ঝড়ো হাওয়ায়, আশ্রয়কেন্দ্রে ও স্পিডবোট ডুবে অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

ভোলায় ঘর ভেঙে নারী নিহত: সদরে গতকাল শনিবার সকালে দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নে ঘর ভেঙে চাপা পড়ে রানী বেগম (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামাল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। নিহত রানী বেগম ওই এলাকার সামসুল হকের স্ত্রী। এছাড়া সকালে লালমোহনের কচুয়াখালী চর থেকে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে একটি ট্রলার ডুবে যায়। এতে চার থেকে পাঁচজন আহত হন।

কচুয়াখালীর চর থেকে জেলে নাছির উদ্দিন জানান, শনিবার সকালে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে মাইনুদ্দিনে ট্রলারটি ডুবে যায়। এতে ৪-৫ জন আহত হন।

ভোলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) উপ-পরিচালক সাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ভোলায় ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৭০-৮০ কিলোমিটার। এখনো ৭ নম্বর বিপদ সংকেত বহাল রয়েছে।

চরফ্যাশনের ইউএনও নূরুল আমিন জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ফসল ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম সিদ্দিক জানান, আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজ নিচ্ছি। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

সাতক্ষীরায় বৃদ্ধার মৃত্যু: সাতক্ষীরায় গাবুরা উপজেলায় গাইনবাড়ি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে আয়না বিবি (৯২) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে বার্ধক্যজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়।

শ্যামনগরের ইউএনও মোহাম্মদ কামরুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, গাইনবাড়ি আশ্রয়কেন্দ্রে গভীর রাতে আয়না বিবি নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। ওই বৃদ্ধা বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। শারীরিক অবস্থা খুব দুর্বল থাকায় তিনি চিকিৎসা নিতে সক্ষম ছিলেন না বলে ইউএনও জানান।

লক্ষ্মীপুরে বৃদ্ধা নিহত: ফণীর আঘাতে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আলগী গ্রামে আনোয়ারা বেগম (৭০) নামে এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন। গতকাল সকালে ঝড়ে নিজ ঘরের কাঠ গায়ের ওপর পড়লে তিনি মারা যান। ইউএনও রফিকুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

নোয়াখালীতে দুই শিশু নিহত: কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নে আম কুড়াতে গিয়ে ঝুমুর (১২) নামে ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিশু মারা গেছে। গতকাল সকাল ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঝুমুর ওই এলাকার আবদুল হামিদের মেয়ে। জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এদিকে, সুবর্ণচরে ফণীর প্রভাবে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় চরওয়াপদা ইউনিয়নের চর আমিনুল হক গ্রামে ঘরের মধ্যে চাপা পড়ে এক শিশু নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩০ জন। গত শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইসমাইল (২) একই ইউনিয়নের চর আমিনুল হক গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে।

সুবর্ণচর উপজেলার কন্ট্রোলরুমে দায়িত্ব পালনরত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইকবাল হাসান জানান, চরওয়াপদা ইউনিয়নের চর আমিনুল হক গ্রামে ঘরের মধ্যে চাপা পড়ে একজন নিহত ও চরওয়াপদা এবং চরজব্বার ইউনিয়নে ৩০ জন আহত হন। আহতদের সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া ফণীর প্রভাবে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়।

বাগেরহাটে গৃহবধূ নিহত: জেলার রণ‌জিৎপুরে দমকা হাওয়ায় গাছের ডাল ভে‌ঙে পড়ে এক গৃহবধূ মারা গেছেন। তার নাম শাহারুন বেগন (৫০)। গত শুক্রবার দুপুরে বাড়িতে ধা‌নের কাজ করার সময় এ ঘটনা ঘটে।

নিহ‌তের আত্মীয় যুবলীগ নেতা শেখ আলফাজ জানান, শাহারুন বেগম ঘ‌রের সাম‌নে বসে ধা‌নের কাজ কর‌ছি‌লেন। তখন তার মাথার ওপর চম্বল গা‌ছের মোটা ডাল ভে‌ঙে পড়লে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার ক‌রে খুলনা মেডি‌কেল ক‌লেজ হাসপাতা‌লে নেওয়ার প‌থে তিনি মারা যান।

খানপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফকির ফহম উদ্দীন জানান, দমকা হাওয়ায় হঠাৎ গাছের ডাল ভেঙে পড়ে শাহারুন বেগম মারা যান। ঘটনার খবর পেয়ে তিনিসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ওই বাড়িতে ছুটে যান।

কিশোরগঞ্জে বজ্রাঘাতে শিশুসহ নিহত ৬: জেলার মিঠামইন, ইটনা ও পাকুন্দিয়ায় বজ্রাঘাতে শিশুসহ ছয়জন মারা গেছেন। গত শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বজ্রপাত হয়। এতে ওই ছয়জন মারা যান।

মিঠামইনে ঝড়-বৃষ্টির সময় বাড়ির সামনের হাওর থেকে গরু আনতে গিয়ে বজ্রাঘাতে সুমন মিয়া নামে সাত বছরের শিশু নিহত হয়। এ সময় গরুটিও মারা যায়। উপজেলার বৈরাটি ইউনিয়নের বিরামচর গ্রামের সামনের হাওরে বোরো ধান কাটতে গিয়ে বজ্রাঘাতে মারা যান মোহাম্মদ মহিউদ্দিন (২২)। ইটনায় ধান কাটার কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রাঘাতে রুবেল দাস (২৬) নামে এক যুবক মারা যান।

স্থানীয়রা জানান, ধান কেটে বাড়ি ফিরছিলেন রুবেল। পথিমধ্যে বজ্রাঘাতে তিনি গুরুতর আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ইটনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলায় গরুর ঘাস কাটতে গিয়ে আসাদ মিয়া (৪৫) নামে এক কৃষক নিহত হন। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের কোষাকান্দা গ্রামে বজ্রাঘাতে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। চর ফরহাদি ইউনিয়নের চর আলগীর মৃত হালিম উদ্দিনের মেয়ে নূরুন নাহার ও ইন্নস আলীর ছেলে মজিবুর রহমান (১৭) মারা যান। তারা গাছের নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, দুপুরে বাড়ির সামনের জমিতে ঘাস কাটছিলেন আসাদ মিয়া। তখন ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বজ্রপাত হয়। পাকুন্দিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ ইলিয়াস এ তথ্য জানান।

নেত্রকোনায় বজ্রাঘাতে কৃষক নিহত: নেত্রকোনার মদন উপজেলার হাওরে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রাঘাতে আবদুল বারেক (৩৫) নামে এক কৃষক মারা গেছেন। শুক্রবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। মদন থানার ওসি রমিজুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের মনিকা পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত রুমালীর ছেলে বারেক শুক্রবার দুপুরে বাড়ির সামনের হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রাঘাতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বজ্রাঘাতে যুবক নিহত: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে বজ্রাঘাতে আপেল মিয়া (২০) নামে এক কৃষক নিহত হন। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার বগডহর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আপেল মিয়া বগডহর গ্রামের উরমুজ আলী মিয়ার ছেলে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সকাল থেকে থেমে থেমে মৃদু হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছিল। এরই মধ্যে সন্ধ্যা ৭টার দিকে বগডহর গ্রামের জমি থেকে ধান কেটে ফেরার সময় আকস্মিক বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই আপেল মিয়া প্রাণ হারান। নবীনগর থানার ওসি রণজিত রায় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

পটুয়াখালীতে গাছের ডাল ভেঙে যুবক নিহত: পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় তীব্র বাতাসে গাছের ডাল ভেঙে শুক্রবার আহত মোটরসাইকেল চালক হাবিবুর রহমান (২৫) রাতে বরিশাল সেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। শুক্রবার সন্ধ্যায় পৌর শহরের মনসাতলী এলাকায় গাছের ডাল ভেঙে পড়লে তিনি আহত হন। তিনি পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ওরকা পল্লী এলাকার বাসিন্দা। এ ঘটনায় আরো দুজন আহত হন। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বরগুনায় গাছচাপায় নিহত ২: বরগুনার পাথরঘাটার উপকূলীয় এলাকায় শুক্রবার রাতে ঝড়ে গাছচাপা পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন। নিহতের প্রত্যেকের পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার রামচন্দ্র দাস বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, বরিশালে ফণীর বিপদ কেটে গেছে এবং ক্রমেই আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

মাদারীপুরে স্পিডবোট ডুবে নিহত ৩: মাদারীপুর জেলার শিবচরের কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে স্পিডবোট ডুবে এক শিশুসহ ৩ জন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় নিখোঁজ শিশু আমির হামজা (৬) ও ২১ বছর বয়সী এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে কাঁঠালবাড়ী ঘাটসংলগ্ন পদ্মা নদী থেকে শিশু আমির হামজা ও এর কিছুক্ষণ পর আরেক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে ওই যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতে চলাচল করতে গিয়ে কাঁঠালবাড়ী ঘাটের কাছে একটি ট্রলারের সঙ্গে সংঘর্ষে যাত্রীবাহী স্পিডবোটটি ডুবে যায়। এতে মোহাম্মদ মুরাদ নামের এক যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। এ সময় শিশু আমির হামজাসহ আরো এক ব্যক্তি নিখোঁজ হন।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত আমির হামজা উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের খাড়াকান্দি গ্রামের ইমরান ফরাজীর ছেলে। দুর্ঘটনায় নিহত শিশুটির বাবা, মা ও ভাই আহত অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

শিবচর থানার এএসআই মোহাম্মদ মজিবর বলেন, কাঁঠালবাড়ী ঘাটের অপর পাড়ে পানিতে শিশুটির মরদেহ ভাসছিল। খবর পেয়ে আমরা গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করি। এর পরেই ঘাটের একটু দূরে আরেক স্থান থেকে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads