চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় পাহাড়ে ঘুমানো ক্যামপাস। পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে দাঁড়িয়ে আছে বড় বড় অনুষদ ভবন । ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর ৭ জন শিক্ষক ও চারটি বিভাগে ২০০ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এখন ৯০৬ জন শিক্ষক, ৪৮টি বিভাগ, ৬টি ইনস্টিটিউট ও ২৭ হাজার ৫৫০ শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির কথা জানিয়েছেন—কামরুল হাসান
গবেষণাবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় চাই
প্রত্যাশার কথা বলতে গেলে প্রথম সারির উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে হারে গবেষক তৈরি হওয়ার কথা ছিল তার থেকে নিতান্ত কম শিক্ষার্থী গবেষণা করার সুযোগ পাচ্ছে। যারা আবার গবেষণা করছে তাদের অনেক প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবরের মতোই গবেষণার বড় একটি খাতকে অবহেলা করে আসছে। যার প্রমাণ এবারের বাজেটেও রয়েছে। সাড়ে তিন শ কোটি টাকার অধিক বাজেটে মাত্র দেড় শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে গবেষণার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে। আমাদের জন্য গবেষণার দরজা উন্মুক্ত করে দিবে সেটাই চাই। শ্রেণিকক্ষ বা পরীক্ষা কেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয় না হয়ে গবেষণাবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠার ব্যাপারে প্রশাসন ভাববে বলে আশা রাখি।
জুবায়ের উদ্দিন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
সেশনজটমুক্ত বিদ্যাপীঠ হোক
বলতে গেলে এখন আমি ক্যামপাসের প্রকৃতির মাঝে যেন ডুবে আছি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যামপাস আমার ধ্যান-জ্ঞান সবকিছু। দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যাশাটা অনেক বেশি। জ্ঞান অর্জনের প্রতিযোগিতায় সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করছে চবি। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেছে এখানে। তবে এখনো কিছু কিছু বিভাগের শিক্ষার্থীরা শিক্ষার গতিধারা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন শুধু সেশন জটের কারণে। আমি আশা রাখবো বিশ্ববিদ্যালয় অতি দ্রুত সেশনজট মুক্ত হবে। নতুন শিক্ষার্থীদের নিকট প্রত্যাশা বিশ্ববিদ্যালয় এসে গতানুগতিক পাঠ্যপুস্তককেন্দ্রিক পড়াশোনা না করে বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাকটিভিটির সাথে যেন জড়িত হয়।
মুহিউদ্দীন মুহাম্মাদ, ইংরেজি বিভাগ
টেকসই শিক্ষা প্রয়োজন
নিজের বলার মতো একটি গল্প পেয়েছি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। স্বপ্ন ছোঁয়ার উদ্যোগ নিয়ে সেদিন থেকে শুরু হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমার পদচারণা। এটি আমার দ্বিতীয় পরিবার। যদি আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কোন দিক উন্নতির কথা জানতে চায় তাহলে বলব গুণগত এবং টেকসই শিক্ষার কথা। গুণগত শিক্ষার জন্য যেসব উপাদান সমন্বয় প্রয়োজন, সেগুলো হচ্ছে আধুনিক ও যুগোপযোগী পাঠ্যক্রম, পর্যাপ্ত সংখ্যক যোগ্যতাসমপন্ন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক, প্রয়োজনীয় শিক্ষাসামগ্রী ও ভৌত অবকাঠামো, যথাযথ শিক্ষণ পদ্ধতি, উপযুক্ত মূল্যায়ন পদ্ধতি। শিক্ষিত হয়ে কাউকে যাতে বেকার না থাকতে হয় তা নিশ্চিত করতে কর্মসংস্থানের সাথে মিল রেখে পাঠ্যসূচি সংযোজন প্রয়োজন।
আব্দুল মোনায়েম, সমাজতত্ত্ব বিভাগ
শিক্ষাবান্ধব প্রশাসন দরকার
গৌরব আর ঐতিহ্যের ৫৫ বছর পেরিয়ে ৫৬ বছরে পা দিলো চিরসবুজ চবি। শিক্ষা, গবেষণা, বিতর্ক, সংস্কৃতি চর্চা ও খেলাধুলায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করছে চবি শিক্ষার্থীরা। শুধু দেশেই নয়, বিশ্বজুড়ে শিক্ষা ও সাহিত্যের আলো ছড়াচ্ছেন তারা। ২১০০ একরের এই বিশালতার মাঝে আমিও একটি অংশ হতে পেরে অনেকাংশেই গর্ববোধ করি। শিক্ষা ও গবেষণায় চবি এগিয়ে যাবে বলে স্বপ্ন দেখি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমার পরিচয় খুব বেশিদিনের না হলেও, চবি আমার প্রাণের ক্যামপাস। এখানে আসার প্রথম দিনেই আমি ক্যামপাসের অপূর্ব সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েছি। চারদিকে সবুজে ঘেরা, মনোরম পরিবেশ। শুধু সৌন্দর্যেই নয় জ্ঞান-গবেষণায়ও পিছিয়ে নেই এই বিদ্যাপীঠ।
নুরুন্নবী সোহান, আইইআর বিভাগ