আরাফাত রহমান
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আবহমান কাল ধরে বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হয়ে আসছে। এসব ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, কালবৈশাখী ঝড়, টর্নেডো, নদীভাঙন, উপকূলভাঙন, খরা, শৈত্যপ্রবাহ ইত্যাদি। এছাড়া সিসমিক জোন অর্থাৎ ইউরেশিয়ান প্লেট, ইন্ডিয়ান প্লেট ও বার্মা প্লেটের মাঝামাঝি অবস্থানে থাকার কারণে বাংলাদেশ ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বাংলাদেশ নাজুক অবস্থানে রয়েছে। পাশাপাশি, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বাস্তবতা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা ও তীব্রতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। দারিদ্র্য ও ঘনবসতির কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় ও নদীতীরবর্তী এলাকার জনসাধারণের জীবন ও জীবিকা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, প্রকৃতিতে মানুষের অপরিকল্পিত হস্তক্ষেপ, নদীশাসন ইত্যাদির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানা প্রভাবজনিত কারণে দুর্যোগে বাংলাদেশের বিপদাপন্নতা কয়েকগুণ বেড়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি দেশের দীর্ঘদিনের অর্জিত অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি দুর্যোগের কারণে বিলীন হয়ে যেতে পারে। দুর্যোগ মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতিসহ জনগণের সার্বিক দুর্যোগ লাঘব করা, দুর্দশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা, পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসন কর্মসূচি অধিকতর দক্ষতার সাথে পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২ প্রণীত হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২-এর ১৯ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালার মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সুশাসন আনয়ন এবং সম্পৃক্ত সকল স্তরের স্টেকহোল্ডারদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি দেশের দীর্ঘদিনের অর্জিত অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি দুর্যোগের কারণে বিলীন হয়ে যেতে পারে। একটি মাত্র দুর্যোগ দেশকে কয়েক দশক পেছনে ঠেলে দিতে পারে। তাই দুর্যোগ-পরবর্তী বিভিন্ন উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম সম্পাদনের পাশাপাশি দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে কার্যকর পদক্ষেপ এবং দক্ষ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গড়ে তোলা সকল মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড রিস্ক রিপোর্ট ২০১১’ অনুযায়ী দুর্যোগের ঝুঁকি এবং বিপদাপন্নতার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান যথাক্রমে ষষ্ঠ ও ১৫তম। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, প্রকৃতিতে মানুষের অপরিকল্পিত হস্তক্ষেপ, নদীশাসন ইত্যাদির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানা প্রভাবজনিত কারণে দুর্যোগে বাংলাদেশের বিপদাপন্নতা কয়েকগুণ বেড়েছে। বিভিন্ন সময়ের প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোতে যেমন জানমালের ক্ষতি হয়েছে তেমনি অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণও অনেক বেড়ে গেছে যা বাংলাদেশকে তার উন্নয়ন অগ্রযাত্রা থেকে পিছিয়ে দিচ্ছে।
দুর্যোগের ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতি মানুষের জীবন ও সম্মানজনক জীবিকা অর্জনের পথে এক বিশাল অন্তরায়। বিশেষ করে দরিদ্র সম্প্রদায়ের জন্য, যারা অত্যন্ত কষ্টার্জিত উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। দুর্যোগের ফলে কেবল দুর্যোগকবলিত দেশ বা জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন নয়, বরং এর ফলে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। পরিবর্তিত প্রযুক্তি, আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পরিবেশ ও ভৌগোলিক বিপর্যয়, জলবায়ুর পরিবর্তন, এইচআইভি-এইডসের প্রকোপ, ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয় ও ক্রমবর্ধমান হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী দুর্যোগের ঝুঁকি তীব্রতর করে তুলেছে। পরিবর্তনের এ অব্যাহত ধারা বিশ্ব অর্থনীতি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর টেকসই উন্নয়নের পথে বিরাট বাধাস্বরূপ।
বিগত দুই দশকে, গড়ে প্রতি বছর বিশ্বে ২০০ মিলিয়ন মানুষ দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে। পরিবেশ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপদাপন্নতা দুর্যোগের ঝুঁকিকে ত্বরান্বিত করে। বিশ্বে দুর্যোগে সাড়া প্রদান সক্ষমতা ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রমের গ্রহণযোগ্যতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেলেও কার্যকর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন নীতি, পরিকল্পনা ও কর্মসূচিতে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মহলেও এ কার্যক্রমকে স্বাগত জানানো হচ্ছে যা বিগত কয়েক বছরে দেশসমূহের মধ্যে স্বাক্ষরিত বিভিন্ন চুক্তি ও প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ দুর্যোগ প্রশমনের ওপর ২০০৫ সালের জানুয়ারি মাসে, জাপানের কোবে নগরীতে ১৬৮টি দেশের সরকারের প্রতিনিধিদের নিয়ে বিশ্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ও দুর্যোগজনিত ঝুঁকি কমাতে অধিকতর সামর্থ্য ও সক্ষম করার লক্ষ্যে একটি বিশ্ব সম্মেলনের আয়োজন করে যা ‘হিউগো ফ্রেমওয়ার্ক ফর অ্যাকশন’ নামে পরিচিত। মূলত দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এটি আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত স্বয়ংসম্পূর্ণ মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত। এ কর্ম-কাঠামোতে যে দিকনির্দেশনা আছে তা হলো- টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি বিভিন্নমুখী আপদ মোকাবিলার কৌশল গ্রহণ করা এবং দুর্যোগের ভয়াবহতা ও প্রাদুর্ভাব বা প্রকোপ হ্রাস করা, জাতীয় রাজনীতির অগ্রাধিকারে দুর্যোগ ঝুঁকিকে স্থান দেওয়া, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকে জাতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করা, ঝুঁকি মোকাবিলায় দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর জাতীয় সামর্থ্যকে শক্তিশালী করা, দুর্যোগ প্রস্তুতিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিনিয়োগ করা, আক্রান্ত জনগোষ্ঠীকে দ্রুত দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম করে গড়ে তোলার জন্য সুশীল সমাজকে সম্পৃক্ত করা এবং কর্ম-কাঠামোর বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে এই বিশ্ব সম্মেলনকে গতিশীল করে তোলা।
প্রত্যাশিত ফলাফল এবং কৌশলগত লক্ষ্যকে সামনে রেখে হিউগো ফ্রেমওয়ার্কে নিম্নবর্ণিত পাঁচটি অগ্রাধিকারকে বিবেচনায় নেওয়া হয়- ১. বাস্তবায়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকে জাতীয় ও স্থানীয় অগ্রাধিকার হিসেবে নিশ্চিত করা; ২. দুর্যোগ ঝুঁকিসমূহ চিহ্নিত, পর্যালোচনা এবং পরিবীক্ষণ এবং আগাম সতর্ক বার্তাকে শক্তিশালী করা; ৩. জ্ঞান, উদ্ভাবন ও শিক্ষার মাধ্যমে দুর্যোগসহিষ্ণু ও নিরাপদ সংস্কৃতি গড়ে তোলা; ৪. ঝুঁকির অন্তর্নিহিত উপাদানগুলোকে কমিয়ে আনা; এবং ৫. সকল স্তরে কার্যকর সাড়া প্রদানের লক্ষ্যে দুর্যোগ প্রস্তুতিকে শক্তিশালী করা।
দুর্যোগে প্রত্যেক মানুষেরই সমান সুযোগ এবং সহযোগিতা পাওয়ার অধিকার বাংলাদেশের সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত। বাংলাদেশের সংবিধানে সকল পর্যায়ে সকল মানুষের সমান অধিকার পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। যেহেতু দুর্যোগে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র জনগোষ্ঠী সম্পদ হারায়, সেহেতু বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে আক্রান্ত জনগোষ্ঠী তার জীবন ধারণের মৌলিক উপকরণ ফিরে পাওয়ার অধিকার রাখে। জনগণের সার্বিক দুর্যোগ লাঘব করা, দুর্দশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা, পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসন কর্মসূচি অধিকতর দক্ষতার সাথে পরিচালনা করার লক্ষ্যে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২’ প্রণীত হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশে বিদ্যমান বিভিন্ন আইনে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশের প্রধান প্রধান উন্নয়ন কার্যক্রমগুলো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরকার ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাড়া প্রদান ও জরুরি মানবিক সহায়তায় অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে। জরুরি পরিস্থিতিতে মানবিক সেবা নিশ্চিতের জন্য তহবিল প্রায় কয়েক গুণ বেড়ে গেছে, যেখানে দুর্যোগ-পরবর্তী উদ্ধার প্রস্তুতিও অন্তর্ভুক্ত। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে মূলধারা হিসেবে গুরুত্ব প্রদান করছে যাতে করে দুর্যোগ প্রস্তুতি ও ঝুঁকি হ্রাসের মাধ্যমে ত্রাণনির্ভর কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে এসে সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম গুরুত্ব পায়।
২০১০ সালে প্রণীত বাংলাদেশ সরকারের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১-তে মোট দশটি উন্নয়ন অগ্রাধিকারের মধ্যে অন্যতম হলো : পরিবেশ রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সমস্যা কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা এবং পরিবেশ দূষণ করে এমন সকল বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এতে আরো বলা হয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিধায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে একটি সমন্বিত দুর্যোগ প্রশমন, প্রস্তুতি, সাড়াদান, পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১-এ জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে সৃষ্ট ঝুঁকি প্রশমন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা বায়ু ও শিল্প দূষণ প্রতিরোধ, বনভূমি ও জলাধার সংরক্ষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং নদীভাঙন রোধে নানাবিধ প্রস্তাবনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপদাপন্ন দেশ হিসেবে স্বীকৃত। জলবায়ু পরিবর্তনের ঊর্ধ্বহার এবং এর প্রভাবে বিপদাপন্নতা আরো অনেকাংশে বেড়ে যাচ্ছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, শৈত্যপ্রবাহ এবং খরার মতো আপদগুলো নানা মাত্রা নিয়ে এদেশে আঘাত হানতে পারে। ফলে গত দশকগুলোতে বাংলাদেশ সরকারের আয় বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনের মতো পদক্ষেপগুলো হুমকির মুখে পড়বে এবং সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ২০০৮ সালে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্ম পরিকল্পনা ২০০৯’ প্রণয়ন করে। এ পরিকল্পনায় মোট ছয়টি বিষয়কে স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, যেমন- খাদ্য, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দারিদ্র্য ও বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব থেকে রক্ষা করা, ক্রমবর্ধমান ও বার বার সংগঠিত হওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলায় সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রতি জোর দেওয়া, উপকূলীয় ও বন্যাপ্রবণ এলাকায় অবকাঠামো, যেমন- ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ও বাঁধ নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, গবেষণা ও জ্ঞান ব্যবস্থাপনা, কার্বন নিঃসরণ ও প্রশমন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ।
১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের ব্যাপক বন্যা এবং ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পর সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সনাতনী ধারণার পরিবর্তে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসমূলক ধারণার প্রয়োগ ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এ সার্বিক ধারণার মধ্যে রয়েছে- আপদ ও ঝুঁকি শনাক্তকরণ, জনগণের প্রস্তুতি এবং সার্বিকভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণকে সমান গুরুত্ব প্রদান করা। আগের ত্রাণ ও পুনর্বাসন ধারণার পরিবর্তে জনগণের অংশগ্রহণে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার একটি কাঠামোগত রূপরেখা প্রণীত হয়। সার্বিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার এই কাঠামোর কেন্দ্রমূলে রয়েছে ঝুঁকি কবলিত জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি মোকাবিলার সামর্থ্য বৃদ্ধি এবং সুনির্দিষ্ট ঝুঁকির মধ্যে তাদের বিপদাপন্নতা হ্রাস করা। ত্রাণ ও পুনর্বাসন কৌশলের পরিবর্তে একটি সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নানামুখী সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় কৌশলগত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, যেমন- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে পেশাদারিত্ব আনয়ন করা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কর্মসূচিগুলোকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মূলধারায় সম্পৃক্ত করা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালীকরণ ও ক্ষমতায়ন করা, প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ডগুলোর পরিসর বৃদ্ধি করা, জরুরিভিত্তিতে দুর্যোগ পূর্বাভাস পদ্ধতি শক্তিশালী করা এবং খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা।
লেখক : কর্মকর্তা, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়