প্রবৃদ্ধির সমান সুফল মেলেনি শ্রমিকের

পোশাক শ্রমিক

সংরক্ষিত ছবি

শ্রমশক্তি

পোশাক শিল্পের ন্যূনতম মজুরি

প্রবৃদ্ধির সমান সুফল মেলেনি শ্রমিকের

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৯৭০ মার্কিন ডলার। সমাপ্ত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৭৫২ ডলারে উন্নীত হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে পাঁচ বছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছে প্রায় ৮১ শতাংশ। মাথাপিছু আয় বাড়িয়ে স্বল্পোন্নত দেশের তকমা কাটিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীলদের কাতারে যুক্ত হওয়ার পথে হাঁটলেও এর প্রকৃত সুফল শ্রমিকশ্রেণি কতটা পাচ্ছে এমন প্রশ্ন বরাবরই ছিল। তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য ঘোষণা করা নতুন বেতন কাঠামো বিতর্কটি নতুন করে উসকে দিচ্ছে।

তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম ৮ হাজার টাকা মজুরি ধরে বৃহস্পতিবার নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এ খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছিল ৫ হাজার ৩০০ টাকা। সবচেয়ে বেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান করা পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য নতুন ঘোষিত মজুরি কাঠামোতে পাঁচ বছরে বেতন বাড়ছে ২ হাজার ৭০০ টাকা। শতকরা হিসাবে বেতন বাড়ার হার প্রায় ৫১ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত পাঁচ বছরে পণ্যমূল্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে। বাড়তি পণ্যমূল্যের ঘাত মোকাবেলায় চলে যাবে শ্রমিকদের বেতনের বাড়তি অর্থ। এ বেতন কাঠামো শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারবে না বলেও মনে করেন তারা।

ঘোষিত বেতন কাঠামোতে মূল বেতন ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১০০ টাকা। বাড়ি ভাড়া বাবদ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫০ টাকা। ঢাকা বা এর আশপাশে এ টাকায় বাসা ভাড়া পাওয়া অসম্ভব বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও শ্রমিকনেতারা। তারা বলছেন, ঢাকার আশপাশে পরিবার নিয়ে মাথা গুঁজে থাকার জন্য কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকার প্রয়োজন হয়। তা ছাড়া পোশাক খাতে বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি ভাড়া বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে গত পাঁচ বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৩৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। এর মধ্যে শুধু খাবারের দাম বেড়েছে ৪২ দশমিক ৩৬ ভাগ। ২০১৩ সালের শেষে সার্বিক ভোক্তামূল্যসূচক ছিল ১৮১ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট। আগস্ট মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫৩ দশমিক ০৮ পয়েন্টে। প্রজ্ঞাপন জারির পর নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হবে ডিসেম্বরে। এ সময়ের মধ্যে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন হওয়া পণ্য ও সেবার মোট মূল্য (জিডিপি) ছিল ১১ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকায়। পাঁচ বছরে চলতি মূল্যে জিডিপির আকার বেড়েছে ৮৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। এ অবস্থায় ৫১ শতাংশ বেতন বাড়িয়ে ঘোষণা করা মজুরি কাঠামোকে প্রহসন বলে মন্তব্য করছেন অনেকেই। ইতোমধ্যেই ঘোষিত বেতন কাঠামো প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন শুরু করেছে শ্রমিকদের বেশ কিছু সংগঠন।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, জাতীয় আয় বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়নি। এতে এ বিষয়টা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, উৎপাদনের সুফল প্রাপ্তিতে শ্রমিকদের অংশ কমছে। এর ফলে শ্রম বিক্রি করে খাওয়া লোকজন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে তিনি মনে করেন।

জাহিদ হোসেন আরো বলেন, প্রতি বছর যে হারে শ্রমিক বাড়ছে সে হারে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। চাহিদার চেয়ে জোগান বেশি থাকলে যেকোনো কিছুর দামই কমে। শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রেও এ সুযোগটা নিতে চাইবেন উদ্যোক্তারা। এ পরিস্থিতির অবসানে শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়াতে জোর দিতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোশরেফা মিশু বলেন, নতুন এ বেতন কাঠামো অমানবিক। মজুরি বোর্ডে শ্রমিকদের প্রতিনিধি প্রতারণা করেছেন। তারা শ্রমিকদের পক্ষ নিয়ে দক্ষতার সঙ্গে দরাদরি করতে পারেননি। ঘোষিত বেতন কাঠামো পুনর্মূল্যায়ন দাবি করে তিনি বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া না হলে অক্টোবরের শুরু থেকে দেশব্যাপী শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads