নিজের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি ও পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটানোর চিন্তা করেই ২০১৭ সালের মার্চ মাসে সৌদিআরব পাড়ি জমান গাজী সুমন। তিন বছর চাকরি করে ভালোই চলছিল তাঁর প্রবাস জীবন ও দেশে থাকা পরিবার। চলতি বছরের জুন মাসে কর্মস্থলে হঠাৎ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। সেখানে তিনি দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরিশোধ করতে পারেননি হাসপাতালের বিল। টাকার অভাবে সময়মতো দেশে ফিরতে প্রবাসী বাঙালীদের কাছে আকুতি জানিয়েও সাড়া মিলেনি। পরে একটি সংগঠনের উদ্যোগে জুলাই মাসে তাঁর বিমান ভাড়ার ব্যবস্থা করে দেশে পাঠানো হয়। বতর্মানে শারিরীক অবস্থার অবনতি ও কর্মহীন অবস্থায় আছেন গাজী সুমন। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার পশ্চিম ধনমুড়ি গ্রামে। তিনি নিজের চিকিৎসা ব্যয় ও পরিবারের সদস্যদের ভরণ-পোষণ করতে পারছেন না। এক কথায়-অর্থনৈতিকভাবে হিরো থেকে জিরো হয়ে পড়েছেন। সরকারিভাবে পায়নি কোন ধরনের অনুদান। গাজী সুমনের মতো হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশীর জীবনে ঘটছে এমন ঘটনা। আহত প্রবাসী ও তাঁদের পরিবারের পাশাপাশি নিহত প্রবাসীদের পরিবারের অবস্থা আরও করুন। সরকারি অনুদান পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহের জন্য সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে হয়রানির শিকার হন প্রবাসীর স্ত্রী ও স্বজনরা। কম সময়ে অনুদান পেতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। প্রচারণা এবং সচেতনতার অভাবে অনেক প্রবাসী-তাঁদের পরিবার নিজেদের অধিকার সম্পর্কেও অবগত নয়।
সারাবিশ্বে আজ বাংলাদেশীদের পদচারণা রয়েছে। এরমধ্যে জীবিকার তাগিদে এক বিশাল কর্মী বাহিনী মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের কলেজ-ইউনিভার্সিটি, অফিস-হাসপাতালে যেমন বাংলাদেশীরা কাজ করছেন, তেমনি দালান-ইমারতের ইটের বোঝা বইছে, শিল্প-কারখানার চাকা ঘুরাচ্ছে, ক্ষেতে-খামারে সোনার ফসল ফলাচ্ছে শ্রমজীবী বাংলাদেশীরা। বিনিময়ে দেশের অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা। শ্রমজীবি প্রবাসীরা ছেলেমেয়ের পড়াশোনা, ভাই-বোনদের বিয়ে-শাদি, বিপদে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে মনের প্রশান্তি পাচ্ছে। প্রবাসীদের জন্য এটাই বাস্তবতা।
এরমধ্যে নিহত ও আহতদের কেউ কেউ জীবিকার তাগিদে প্রবাসে ১০-২০ বছর পর্যন্ত অতিবাহিত করেছেন। তাদের পাঠানো রেমিটেন্সে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছে। স্ফীত হয়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বহির্বিশ্বে বৃদ্ধি পেয়েছে দেশের সুনাম। প্রবাসীদের ঘামের টাকায় দেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও প্রবাসী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন অবহেলিত!
বাংলাদেশ সরকার কয়েক দফায় সহায়তা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সেখানে নেই প্রবাসীরা। যে প্রবাসীরা আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি, যাঁরা বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠান, তাঁদের জন্য কোনো সহায়তা কর্মসূচি নেই-এমনটি ভাবতেই অবাক লাগে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) হিসেব মতে, এখনও ৫১ শতাংশ শ্রমিক প্রতারণা শিকার হচ্ছেন। এরমধ্যে ১৯ শতাংশ মানুষ টাকা দেওয়ার পরও বিদেশে যেতে ব্যর্থ হয়েছে। বাকি ৩২ শতাংশ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বিদেশে যাওয়ার পর। দালালরা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অবৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশে শ্রমিক নিয়ে যায়। অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে বিভিন্ন সময় পরিকল্পনা নিয়েছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। কিন্তু অবস্থার এখনও পুরোপুরি পরিবর্তন হয়নি। দেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো অদক্ষ শ্রমিক পাঠিয়ে বেশি টাকা হাতিয়ে নেয়। অদক্ষ শ্রমিকের প্রতি তাদের আগ্রহ দক্ষ শ্রমিকের চেয়ে বেশি। এজন্যই নানা হয়রানীর শিকার হন অবৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়ার প্রবাসী ও তাদের পরিবার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মরণঘাতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে চলতি বছরের মার্চ মাসে সারাবিশে^ আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে ফ্লাইট বন্ধের আগে ছুটিতে আসা প্রবাসীরা সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি। প্রতিদিন নয়, প্রতি মুহূর্তে প্রবাস থেকে থেকে দুঃসংবাদ আসছে। তছনছ হয়ে পড়েছে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জীবন। অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। অনেকে হারানোর পথে। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের মালিক বেতন অর্ধেক করে দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের সহায়তা কর্মসূচিতে সেই রেমিটেন্সযোদ্ধাদের জায়গা হয়নি। প্রবাসী কল্যাণ তহবিল থেকে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সেবা নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। গত ২৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ঢাকায় ‘অভিবাসন মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী ইমরান আহমদ প্রবাসীদের নানাবিধ সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে বলেও জানান।
বৈদেশিক জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকদের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ। প্রতি বছর বাংলাদেশের শ্রমবাজারে ২২-২৩ লাখ মানুষ যুক্ত হচ্ছেন। দেশে তাঁদের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। এ কারণে জমিজমা বিক্রি কিংবা ধার-দেনা করে তাঁরা বিদেশে যান। পদে পদে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হয়েও দেশে থাকা স্বজনদের কথা ভেবে প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতি করছেন। দেশে ২০ বছর চাকরি করে পেনশন পেলেও প্রবাসে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে রেমিটেন্স পাঠিয়ে কোন ধরনের পেনশন বা ভাতা পাচ্ছে না তাদের পরিবার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রবাসী কর্মীরা মারা গেলে মৃতদেহ দেশে আনার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় সরকার। বিমানবন্দরে লাশ হস্তান্তরের সময় সেটি পরিবহন ও দাফনের খরচ হিসেবে দেওয়া হয় সরকারি অনুদান। এছাড়া মৃত প্রবাসী কর্মীর পরিবারের জন্য আর্থিক অনুদান আর মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থাও করে থাকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী বাংলাদেশী কর্মীর লাশ পরিবারের মতামত নিয়ে দেশে আনে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। কোনও মৃতের পরিবার সংশ্লিষ্ট দেশে লাশ দাফনের ইচ্ছা প্রকাশ করলে সেই ব্যবস্থাও করা হয়। মৃতের লাশ দেশে প্রেরণে নিয়োগকর্তা খরচ বহন করতে অপারগতা প্রকাশ করলে ও মৃতের পরিবার লাশ দেশে আনার জন্য খরচ বহনে সক্ষম না হলে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হয়।
মৃতদেহ দেশে আনার জন্য সহযোগিতা পেতে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে আবেদন করতে হয়। আবেদন ফরমের নমুনা কপি পাওয়া যায় এই সংস্থার ওয়েবসাইটে। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস অথবা সরাসরি বোর্ডেও আবেদন করা যায়। প্রবাসে বাংলাদেশি কর্মী মৃত্যুবরণ করলে বিমানবন্দর থেকে লাশ গ্রহণের সময় মৃতের পরিবারকে লাশ পরিবহন ও দাফন হিসেবে ৩৫ হাজার টাকার চেকের মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে এই চেক প্রদান করা হয়। এ জন্য মৃত প্রবাসী শ্রমিকের স্বজনকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র, পরিবারের সদস্য সনদ, লাশ পরিবহন ও দাফন খরচের অর্থ গ্রহণের জন্য ক্ষমতা অর্পণপত্র সঙ্গে আনতে হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের নমুনা কপি পাওয়া যায় ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড’ এর ওয়েবসাইটে।
বিদেশে বৈধভাবে যাওয়া মৃত কর্মীর পরিবারকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে প্রবাসে মারা যাওয়া কর্মীর প্রত্যেক পরিবার আর্থিক অনুদান হিসেবে পাচ্ছে ৩ লাখ টাকা। এই অনুদান পেতে মৃত প্রবাসী কর্মীর স্বজনকে দাখিল করতে হয় বেশকিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। এর মধ্যে রয়েছে-১. ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, সিটি করপোরেশন কাউন্সিলরের কাছ থেকে দাফতরিক প্যাডে মৃতের পরিবারের সদস্য সনদ। এই সনদ সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রতিস্বাক্ষরিত হতে হবে। ২. চারশ’ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে দায়মুক্তি সনদ, অঙ্গীকারনামা ও ক্ষমতা অর্পণপত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর কর্তৃক স্বাক্ষরিত ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রতিস্বাক্ষরিত হতে হবে। ৩. মৃতের পাসপোর্টের ফটোকপি, বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রত্যয়নপত্র, মৃত্যু সনদের সত্যায়িত ফটোকপি। ৪. অর্থ গ্রহণকারীর ব্যাংক হিসাব নম্বরের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রত্যয়নপত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্টের মূল কপি। নাবালক সন্তান থাকলে নাবালক সন্তানের নামে খোলা ব্যাংক হিসাব নম্বর ও প্রত্যয়নপত্র (ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ)। ৫. পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর কর্তৃক সত্যায়িত ১ কপি ছবি এবং সহকারী পরিচালক, জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস কর্তৃক ১ কপি সত্যায়িত রঙিন ছবি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের নমুনা কপি পাওয়া যায় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ওয়েবসাইটে।
অপরদিকে প্রবাসী কর্মী মারা গেলে বিদেশে নিয়োগকর্তা, সংস্থা, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান থেকে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা নেয় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। এছাড়া প্রবাসী কর্মীর বকেয়া বেতন, সার্ভিস বেনিফিট ও ইন্স্যুরেন্স সুবিধা পাওনা থাকলে আদায় করে স্বজনকে তা পাওয়ার উদ্যোগও নিয়ে থাকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। এজন্য মৃত প্রবাসীর কর্মীর স্বজনকে একই রকম প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়।
এছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ভবনে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় প্রবাসী কর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সেবা প্রদানের জন্য চালু করা হয় ডিজিটাল হেল্প ডেস্ক। এটি সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চালু থাকে। হেল্প ডেস্কের নম্বরগুলো হলো ০১৭৯৪৩৩৩৩৩৩, ০১৭৮৪৩৩৩৩৩৩, ৯৩৩৪৮৮৮। এসব নম্বরে ফোন করে প্রবাসী কর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা সমস্যা ও সাহায্যের কথা জানাতে পারেন। এগুলো লিপিবদ্ধ করে সংশ্লিষ্ট শাখা, মন্ত্রণালয়, অন্যান্য দফতর ও বিদেশে অবস্থিত শ্রম উইংয়ে জানানো হয়। পরবর্তী সময়ে সেবা প্রার্থীকে এ বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়।
প্রবাসীদের পক্ষে আবেদন নিয়ে স্বজনরা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস অথবা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের কার্যালয়ে যেতে পারেন। ঠিকানা: প্রবাসী কল্যাণ ভবন, ৭১-৭২ পুরাতন এলিফ্যান্ট রোড, ইস্কাটন গার্ডেন, রমনা, ঢাকা। যে কোনও অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির জন্য বোর্ডের উপ-পরিচালক (কল্যাণ) শরিফুল ইসলামকে ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁর মোবাইল নম্বর ০১৯৭১৪৩০২০৩, ফোন নম্বর ৯৩৫৮৯৭৬। এ দুটি নম্বরে অভিযোগ জানাতে পারেন স্বজনরা।
মূলকথা হলো-প্রবাসী ও তাঁদের পরিবারের সুরক্ষায় সরকারকে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রবাসীদেরকে ‘অর্থনৈতিক যোদ্ধা’ হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পাশাপাশি তাদের জন্য অবসর ভাতা/পেনশান স্কীম/বিশেষ ভাতা এবং ‘চিকিৎসা-বীমা’ জরুরী। এটি প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি। প্রবাসীদের এ দাবি বাস্তবায়িত হলে তারা বৈধ পথে প্রবাসে পাড়ি জমাবে এবং স্বাচ্ছন্দে শ্রম বিনিয়োগ করবে।
এ ব্যাপারে সৌদিআরব প্রবাসী সাংবাদিক মোঃ মোবারক হোসেন ভুঁইয়া বলেন, ‘স্বদেশে সরকারি চাকরিজীবিদের অবসরকালীন ভাতা বা পেনশনের ব্যবস্থা রয়েছে। তারা দেশে অবস্থান করে পরিবার-পরিজন নিয়ে থেকেও সরকারি সব সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। অন্যদিকে প্রবাসীরা পরিবারের মায়া ত্যাগ করে বছরের পর বছর প্রবাসে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে। তাঁরা রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা স্বচল করলেও তাদের উন্নয়নের জন্য সরকারীভাবে কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া প্রবাসে নিহত ও আহতদের পরিবারের খোঁজ কেউ রাখে না। সরকারের উচিত-অন্তত প্রবাসে নিহত ও আহত প্রবাসীদের পরিবারের জন্য পেনশন স্কীম/অবসর ভাতা/দুর্ঘটনাজনিত ভাতা চালু করা। কারণ-কোন কোন পরিবারের নিহত বা আহত ওই প্রবাসী ছাড়া পরিবারের উপার্জনক্ষম আর কোন ব্যক্তি নেই। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি যদি প্রবাসে দুর্ঘটনায় নিহত বা আহত হন তাহলে তার পরিবার চলে কি করে?-এমন চিন্তা সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়নি। করলেও দুর্ঘটনাকবলিত প্রবাসী ও তাদের পরিবারের জন্য উন্নয়নে কার্যকর কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি’।
‘চৌদ্দগ্রাম প্রবাসী সূর্য সন্তান’ নামের সংগঠনের সভাপতি প্রবাসী রেমিটেন্সযোদ্ধা মোঃ জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রবাসী ও তাঁদের পরিবারের নিরাপত্তা নাই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সামাজিকভাবে প্রবাসীদের পরিবার জায়গা সংক্রান্ত হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। এছাড়া নিহত ও আহত প্রবাসীদের পরিবারের খবর কেউ রাখে না। দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত প্রবাসীদের সহায়তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের যে নির্দেশনা তা প্রসেসিং করে সহায়তা পেতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। এ সময় অসুস্থ্য একজন প্রবাসী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকে। সরকারি অনুদান পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহের জন্য সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রবাসীর স্ত্রী ও স্বজনরা। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এগিয়ে আসলে প্রবাসীদের আরও কল্যাণ হবে’।