ভারতের তামিলনাড়ুর সিলভেরপুরাম গ্রামের প্রতিটি পরিবারে একজন করে ক্যানসার আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। শুধু গ্রামটাই নয়, সেখানকার আশপাশের এলাকায়ও ক্যানসারের প্রকোপ বেশ ভয়াবহ। জনবহুল এই এলাকা থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে ‘সেটেরলাইট’ তামা কারখানার কারণেই অঞ্চলটি আরেকটি ‘ক্যানসার বেল্ট’ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হতে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন পরিবেশবিদরা।
গত দুই দশক ধরে সেখানকার লোকজন ভয়াবহ এ রোগের শিকার হতে থাকলেও সম্প্রতি সেটেরলাইট কারখানাটি বন্ধে ছয় দিনব্যাপী বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। এতে সরকারের নির্দেশে গুলি চালায় পুলিশ; নিহত হয় ১৩ জন। এরপরই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতেও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করা হয়।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, সিলভেরপুরামে দুই হাজার লোকের বাস। এর মধ্যে ৬০টি পরিবারের একাধিক ব্যক্তি ক্যানসারে আক্রান্ত। তামিলনাড়ু পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (টিএনপিসি) গবেষকরা ওই অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেন। তারা জানান, সেখানকার পানিতে সিসার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৯ থেকে ৫৫ গুণ বেশি। এরপর সেখানকার মানুষ সরকারিভাবে সরবরাহকৃত পানি সংগ্রহ করলেও ক্যানসারে আক্রান্তের পরিমাণ খুব বেশি কমেনি। এ বিষয়ে গবেষকদের বক্তব্য, শুধু পানি নয়, এই সিসা ও অন্যান্য ক্ষতিকর বর্জ্য মাটি থেকে শস্যের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, সেখানকার বাতাসেও সিসার পরিমাণ রীতিমতো ভয়াবহ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জনবসতির এত কাছে তামার মতো ক্ষতিকর পদার্থের কারখানা করার অনুমতি সাধারণত কোনো দেশই দেয় না। অথচ সেটেরলাইট থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে টুটিকোরিন জেলা। এছাড়া তামা কারখানার ২৫ ফুট এলাকা পর্যন্ত ঘন বনায়নের নিয়ম থাকলেও সেটা মানেনি সেটেরলাইট। ১৯৯৬ সালে চালু করা এই তামা কারখানাটি শুরুতে ৪০ হাজার টন তামা উৎপাদন করলেও এখন এর চেয়ে দশ গুণ বেশি অর্থাৎ ৪ লাখ টন তামা উৎপাদন করে। কিন্তু উৎপাদন বাড়ালেও চিমনির উচ্চতা ৬০ মিটার থেকে বাড়িয়ে ১২৩ মিটারে উন্নীত করার প্রক্রিয়া মানেনি সেটেরলাইট।
কারখানাটির বিরুদ্ধে এর আগে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ করে ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এনইইআরআই)। এর মধ্যে গত ২২ মে সেটেরলাইটের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালালে ১৩ জন নিহত হয়। এরপর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ই পালানিস্বামী বলেন, তার সরকার বিষয়টি আইনানুগভাবে সমাধানের চেস্টা করছে। প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা এই তামা কারখানা প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিয়েছিলেন। তারপরও আমরা জনসাধারণের উদ্বেগকে মাথায় রেখে আইনের মাধ্যমে এর সুরাহা করব।
কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি আসলেই কতটা কার্যকর হবে সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দিহান সেখানকার জনগণ।





