পিতামাতার প্রত্যাশা এবং বর্তমান সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থা

পিতামাতা আশা-আকাঙ্ক্ষার বোঝা চাপান সন্তানের কাঁধে

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

পিতামাতার প্রত্যাশা এবং বর্তমান সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থা

  • প্রকাশিত ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

রোকসানা জাহান ইপা

বর্তমান সমাজে বিশেষ করে নগর জীবনে আমাদের শিশুরা যেন অসহায়। ভোর থেকে রাত অবধি অর্পিত কর্মভারে তারা ক্লান্ত। ছোট মস্তিষ্কে কত যত্ন আর ভালোবাসা দিয়ে আমরা সচেতনভাবে এটা ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত যে, জীবন একটা প্রতিযোগিতা মাত্র। অনেক মা-বাবা নিজের পছন্দ অনুযায়ী সন্তানের ভবিষ্যৎ চলার পথ নির্ধারণ করেন। নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষার বোঝা চাপান সন্তানের কাঁধে। তুলনা চলে অন্য মেধাবী একটি শিশুর সঙ্গে। এটি যে শিশুর মানসিক চাপ বাড়িয়ে মনোবল নষ্ট করে দিচ্ছে তা আর ভেবে দেখেন না। তাদের কাছে পরীক্ষার নাম্বারই হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ। জন্মগতভাবে প্রতিটি শিশুর মেধা, প্রতিভা এবং আগ্রহ ভিন্ন ভিন্ন। পরিবার এবং রাষ্ট্রই পারে সঠিক পরিচর্যা ও যথাযথ শিক্ষা পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে সেই প্রতিভাকে বিকশিত করতে। বাবা-মা যদি সন্তানকে এটা বলেন যে, তুমি তোমার সর্বোচ্চ মনোযোগ, মেধা ও অধ্যবসায় দিয়ে জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করতে থাক, সেই সঙ্গে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনব্যবস্থা যদি ইতিবাচক হয়, তবে সেটাই শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য যথেষ্ট। এই ডিজিটাল যুগে শিশুর পরিচর্যার জন্য যা কিছু প্রয়োজন সবই আছে। আমাদের শুধু শিশুর প্রতি মনোযোগী হতে হবে, তাদের কথা শুনতে হবে, তাকে বুঝতে হবে।

একটি আদর্শ শৈশব বা কৈশোরে শিশুরা স্কুলে যাবে, উন্মুক্ত মাঠে খেলাধুলা করবে, প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকবে- এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু বর্তমান নগর জীবনে এর চিত্র ভিন্ন। এখানে নীল আকাশ আর সবুজ প্রকৃতি দেখার সুযোগ নেই, নেই পর্যাপ্ত খেলার মাঠ। এখানে পড়াশোনার চাপ যেমন বেশি তেমনি শারীরিক পরিশ্রম এবং খেলাধুলার সুযোগ, সময় ও জায়গা অনেক কম।

এ অবস্থায় শিশু-কিশোরদের মানবিক ও সামাজিক  মূল্যবোধ বিকাশের দায়ভার আসলে কার? পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নাকি রাষ্ট্রের? পরিবারই হলো নৈতিক ও  মানবিক গুণাবলি অর্জনের প্রথম ও প্রধান পাঠশালা। এরপরই রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের অবস্থান। প্লেটোর মতে, শরীর ও আত্মার পরিপূর্ণ বিকাশ এবং উন্নতির জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তা সবই শিক্ষার উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে এই শিক্ষাব্যবস্থা যেন প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়, সেই দিকে লক্ষ্য রেখে প্রয়োজনীয় ও যুগোপযোগী শিক্ষা  পদ্ধতি গড়ে তোলা।

প্রযুক্তি বিদ্যা ও কন্যাশিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। প্রযুক্তি বিদ্যা মেধা ও জ্ঞান শক্তিকে আরও সমৃদ্ধিশালী করছে। বিশ্বকে আরও বেশি জানার সুযোগ করে দিচ্ছে। এ ছাড়া কন্যাশিশুদের উচ্চ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সহজতর হবে বলে মনে করেন শিশু অধিকার কর্মীরা। এসব উন্নয়নমূলক উদ্যোগ আমাদের প্রত্যাশা বাড়াবে- এটাই স্বাভাবিক। আর এই প্রত্যাশার রেশ ধরে আমরা যদি আমাদের শিক্ষা পদ্ধতিকে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করি, তবে কিছু পার্থক্য দেখতে পাই। যেমন-British national school curriculum অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক Aptitude test ছাড়া কোনো পরীক্ষা নেই। একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষার্থীর দক্ষতা বা দুর্বলতা যাচাই করা এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়াটাই এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য। এর সঙ্গে শিক্ষার্থীর পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়া বা না হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এতে করে ওই শিক্ষার্থীর কোনো মানসিক চাপ ছাড়াই পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ থাকে। আমাদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা পদ্ধতিকে আরো বেশি সহজ, সাবলীল ও উন্নত করার ক্ষেত্রে  এ বিষয়গুলো ভেবে দেখা যেতে পারে। সেই সঙ্গে মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গন এই আয়োজনকে আরো বেশি সমৃদ্ধিশালী করে তুলবে বলে আমরা আশা রাখি।

এ ছাড়াও পরিবারের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে শিশু-কিশোরদের নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ বিকাশের ক্ষেত্রে। এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, আজকের শিশু আগামীতে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ।

লেখক : কলামিস্ট ও সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads