মনির আহমেদ শুভ্র, চরফ্যাশন (ভোলা)
আমেরিকার স্ট্যাচু অব লিবার্টি, প্যারিসের আইফেল টাওয়ার, লন্ডনের বিগ বেন, মালয়েশিয়ার টুইন টাওয়ার কিংবা দিল্লির ইন্ডিয়া গেট। একেকটি স্থাপনা একেকটি শহর বা দেশকে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি। তেমনি দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশনে নির্মিত হয়েছে আইকনিক ‘জ্যাকব টাওয়ার’। উপমহাদেশের সর্বোচ্চ এই ওয়াচ টাওয়ার ইতোমধ্যেই বাংলার আইফেল টাওয়ার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের উদ্যোগে নির্মিত এই ‘জ্যাকব টাওয়ার’ গত ২৪ জানুয়ারি উদ্বোধন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। উদ্বোধন-পরবর্তী এক সুধী সমাবেশে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আশা প্রকাশ করেছেন, এই টাওয়ার পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব শুধু এই টাওয়ারই নির্মাণ করেননি, পুরো চরফ্যাশন ও মনপুরাকে গড়ে তুলেছেন আধুনিক বাংলাদেশের উন্নয়নের মডেল হিসেবে। বঙ্গোপসাগরের মধ্যে দ্বীপ কুইন অব আইল্যান্ড চর কুকরিমুকরিতে গড়ে তুলেছেন সর্বাধুনিক রেস্ট হাউজ। দেশের ১৮টি জেলার চেয়ে বড় চরফ্যাশনে তিনটি নতুন থানা স্থাপন ছাড়াও আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পর্যটন উপযোগী পরিবেশ তৈরি করেছেন। যার ফলে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে যোগ হচ্ছে নতুন মাত্রা। বলা হচ্ছে, এই চরফ্যাশনের চর কুকরিমুকরি, তারুয়া, ঢালচরসহ নতুন বাংলাদেশ হিসেবে জেগে ওঠা শিবচর পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়ার পর্যটনসমৃদ্ধ বালির মতোই ‘বাংলার বালিদ্বীপ’ হয়ে উঠবে।
পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাময় চরফ্যাশন সদরে যুক্ত হয়েছে ২২৫ ফুট উচ্চতার এই ‘ওয়াচ টাওয়ার’। প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক একর জমিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের উদ্যোগে ও পরিকল্পনায় নির্মিত হয়েছে এই টাওয়ার
১৯ তলাবিশিষ্ট টাওয়ারটির ডিজাইন করেছেন কামরুজ্জামান লিটন। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। মাটির ৭৫ ফুট নিচ থেকে ঢালাই-পাইলিং ফাউন্ডেশনের ওপর সম্পূর্ণ ইস্পাত দিয়ে নির্মিত টাওয়ারটি ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয়। চারপাশে অ্যালুমিনিয়ামের ওপর রয়েছে ৫ মিলিমিটার ব্যাসের স্বচ্ছ গ্লাস। চূড়ায় ওঠার জন্য সিঁড়ির সঙ্গে থাকবে ১৩ জন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক ক্যাপসুল লিফট। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বিশেষভাবে ডিজাইন করে আনা হয়েছে এই ট্রান্সপারেন্ট লিফটটি। ওয়াচ টাওয়ারটিতে স্থাপন করা হয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাইনোকুলার। যার সাহায্যে পর্যটকরা চর কুকরিমুকরি, তারুয়া সৈকত এবং বঙ্গোপসাগরের একটি অংশসহ চারপাশে অবস্থিত ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা পর্যবেক্ষণ ও উপভোগ করতে পারবেন। এ ছাড়া বিশ্রামাগার, প্রাথমিক চিকিৎসাসহ রয়েছে খাবারের সুব্যবস্থা। টাওয়ারে উঠতে জনপ্রতি প্রবেশ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। চরফ্যাশন পৌরসভা এটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে টাওয়ার সংলগ্ন এলাকায় আরো ২০ কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছে বৃহত্তম সুইমিংপুল, বিশ হাজার লোক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ফ্যাশন স্কয়ার ও অত্যাধুনিক মানসম্পন্ন শেখ রাসেল শিশু ও বিনোদন পার্ক। ওয়াচ টাওয়ারের উদ্যোক্তা পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আকর্ষণীয় ও সর্বাধুনিক এই ওয়াচ টাওয়ারটি রাষ্ট্রপতির উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। উদ্বোধনের পর গত ৯ মাসে প্রায় দেড় লাখ পর্যটক ওয়াচ টাওয়ারটি পরিদর্শন করে। এ টাওয়ারটিকে দেশের পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করার পাশাপাশি চরফ্যাশনকে দেশে ও বহির্বিশ্বে আলাদা পরিচিতি এনে দেবে।