যমুনার ভাঙন ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বিলীন হয়ে গেছে শতাধিক বসতভিটা-ফসলি জমি। এছাড়া মুন্সীগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের অব্যাহত ভাঙনের ফলে হুমকিতে পড়েছে শহররক্ষা বাঁধ। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সিরাজগঞ্জ : যমুনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে পড়েছে শহররক্ষা বাঁধ। এ ছাড়া কাওয়াকোলা ইউনিয়নের চরাঞ্চলে ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন করায় নদীতে আবারো ভাঙন শুরু হয়েছে। গত ২০ দিনে হাটবয়ড়া ও কাওয়াকোলা গ্রামের দেড় শতাধিক বসতভিটা ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে, বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযোগ দেওয়া হলেও নিশ্চুপ রয়েছে প্রশাসন।
কাওয়াকোলা গ্রামের বাসিন্দারা জানান, নদীতীর ঘেঁষে বড় বড় ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা। ফলে নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিলীন হয়েছে দেড় শতাধিক বসতভিটা ও ফসলি জমি। নদী থেকে ড্রেজার অপসারণ করা না হলে বেশ কয়েকটি গ্রাম বিলীন হয়ে যাবে।
কাওয়াকোলা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল আলীম জানান, নদীতীর ঘেঁষে বালু উত্তোলন করায় ভাঙনের মুখে পড়েছে আমার ইউনিয়ন।
অন্যদিকে, শহররক্ষা বাঁধ রক্ষায় অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে হার্ডপয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন এলাকাবাসী। বক্তারা বলেন, বালু ব্যবসায়ীরা সরকারিভাবে লিজ নিয়েছে দোরতা, চাণ্ডাল বয়ড়া ও জিয়ার পাড়া, কিন্তু তারা বালু উত্তোলন করছে হার্ডপয়েন্টের কাছ থেকে। এভাবে বালু উত্তোলন করলে শহররক্ষা বাঁধ বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, হার্ডপয়েন্টে ড্রেজিং করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু একটি মহল ওই এলাকায় বালু উত্তোলন করছে। গত শুক্রবার একটি ড্রেজার মেশিন জব্দ করা হলেও প্রভাবশালীরা সেটি ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং একজন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করে। এ নিয়ে ৭-৮ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। তারপরেও বালু উত্তোলন থামছে না।
সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আনিসুর রহমান জানান, শহররক্ষা বাঁধ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বালু ব্যবসায়ীরা সরকার ঘোষিত বালুমহালের বাইরে গিয়ে বালু উত্তোলন করায় শহর-চরাঞ্চল হুমকির মুখে পড়ছে। ইতোমধ্যে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকবার ড্রেজার মেশিন জব্দসহ জরিমানাও করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহমেদ বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুন্সীগঞ্জ : পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেছেন, নদী ভাঙনকবলিত এলাকা রক্ষার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের কাছে টাকা কোনো সমস্যা না। মানুষকে রক্ষা করার জন্য যা দরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেবেন। মুন্সীগঞ্জের লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার ভাঙনকবলিত এলাকায় কাজ চলছে। চলতি বছরের মধ্যে কাজ শেষ হবে। এজন্য বাড়তি বরাদ্দ প্রয়োজন, আরো বরাদ্দ দেওয়া হবে।
গতকাল সোমবার সকালে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে লৌহজংয়ের শামুরবাড়িতে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন মুন্সীগঞ্জ ২ নং আসনের সংসদ সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রশীদ শিকদার, লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবিরুল ইসলাম প্রমুখ।
ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) : যমুনায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভূঞাপুর অংশে শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়ী থেকে ভালকুটিয়া পর্যন্ত প্রায় অর্ধকিলোমিটার এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে ভাঙন। এতে প্রায় কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে চারটি বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
জানা গেছে, বিগত কয়েক বছরে শত শত একর ফসলি জমি ও বসতভিটা চলে গেছে নদীতে।
হুমকির মুখে রয়েছে গোবিন্দাসী বাজার, ৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি উচ্চ বিদ্যালয়, ১টি মাদরাসা, মসজিদ ও ১টি মন্দিরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এদিকে গত শুক্রবার সকালে নদীভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ছোট মনির, উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ আবদুল হালিম অ্যাডভোকেট, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঝোটন চন্দসহ অন্যরা।