ফিচার

ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে অক্সিজেন

পজিটিভ ঢাকার অনন্য উদ্যোগ

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

করোনা মহামারি আবির্ভূত হওয়ার আগ পর্যন্ত অক্সিজেনের অপরিহার্যতা সম্পর্কে জানা থাকলেও উপলব্ধি করতে পারিনি আমরা কেউই।

করোনায় আক্রান্ত রোগীর জন্য অক্সিজেন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে গেলে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। তখনই প্রয়োজন পড়ে অক্সিজেনের। রোগীর অক্সিজেন সিচুরেশন নেমে গেলে দ্রুততার সঙ্গে অক্সিজেন দিতে হয়। করোনা মহামারির এই সময়ে চাহিদার তুলনায় অক্সিজেনের সরকারি সরবরাহ অপ্রতুল। সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অক্সিজেনের যোগান দিচ্ছে বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাদের স্বেচ্ছাসেবীরা  খবর পাওয়া মাত্র অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাজির হয়ে যাচ্ছেন করোনা আক্রান্ত মানুষের ঘরে ঘরে। সম্পূর্ণ বিনা খরচে। পজিটিভ ঢাকা তেমনই একটি অনলাইন ভিত্তিক মানবিক সংগঠন। সৃষ্টির সেবার উদ্দ্যেশ্যে গঠিত সংগঠন টি অল্প দিনেই তাদের কর্মকাণ্ডের দ্বারা জিতে নিয়েছে মানুষের হূদয়।

‘হ্যালো পজিটিভ ঢাকা? আমার ৩ মাসের বাচ্চার অবস্থা সংকটাপন্ন। অক্সিজেন দেওয়া লাগবে। আপনাদের অক্সিজেন সেবা নিতে কত টাকা লাগে?’ অন্য প্রান্ত থেকে পজিটিভ ঢাকার স্বেচ্ছাসেবী রায়হাতের উত্তর, ‘আমরা ফ্রি অক্সিজেন সেবা দিয়ে থাকি। আপনার বাসার ঠিকানা দিন। আমরা পৌঁছে যাবো অক্সিজেনসহ।’

একজন অসুস্থ রোগীর হঠাৎ অক্সিজেন লেভেল কমে যাওয়ায় ফ্রি অক্সিজেন সেবা দেওয়ার জন্য ছুটে যান পজিটিভ ঢাকার স্বেচ্ছাসেবীরা।

 করোনা মহামারিতে পৃথিবী যখন স্তব্ধ, হাসপাতালগুলোতে মৃত্যুর মিছিল, অসহায় মানুষের আর্তনাদে ভারি আশপাশের পরিবেশ, রক্ত কিংবা অক্সিজেনের জন্য হাহাকার-ঠিক তখনই পজিটিভ ঢাকার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। তবে পজিটিভ ঢাকার শুরুটা হয়েছিল বিনামূল্যে রক্ত দেওয়ার মাধ্যমে। ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে পরিচালিত সংগঠনটি এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪০০ মানুষকে রক্তের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রায় পনেরো শত রক্তদাতার ডাটাবেজও তৈরি করেছে। যাতে করে যে কোনো সময় রক্ত সংগ্রহ করা যায়।

করোনা পরিস্থিতি যখন আরো কঠিন হতে থাকে, অক্সিজেন সংকটে অনেকেই ঠিকমতো সেবা পাচ্ছিল না, তখন পজিটিভ ঢাকা উদ্যোগ নেয় ফ্রি অক্সিজেন সেবা দেওয়ার। যখনই গ্রুপে কেউ অক্সিজেন সেবা চেয়ে থাকে, তখনই সংগঠনটির নিবেদিতপ্রাণ  স্বেচ্ছাসেবীরা মোটরসাইকেলে অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ পৌঁছে যান রোগীর বাসায়। বিনামূল্যে দিয়ে থাকেন অক্সিজেন সেবা। বিনিময়ে সেবা গ্রহণকারীর থেকে চেয়ে নেন অপর একটি অসহায়ের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি।

 সংগঠনটির উদ্যোক্তা এমএম আরিফুল ইসলাম বলেন, একটি অরাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক সংগঠন ‘পজিটিভ ঢাকা’। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, প্রত্যেক শ্রেণি-পেশার মানুষেরই স্ব স্ব অবস্থান থেকে দেশ, সমাজ ও মানুষের জন্য ইতিবাচক অবদান রাখার যথেষ্ট  সুযোগ রয়েছে। এজন্য শুধু প্রয়োজন সুচিন্তা, সদিচ্ছা ও পারস্পরিক সহযোগিতা। মূলত এজন্যই পজিটিভ ঢাকার গড়ে ওঠা। আমরা বেশ কয়েকজন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ-তরুণী স্বেচ্ছাসেবী পেয়েছি। যারা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেও মানুষের পাশে থাকার প্রত্যয় রাখে। মানবতার কল্যাণে জেগে উঠুক প্রতিটি প্রাণ-এটিই আমাদের আহ্বান। সমাজের বিত্তবানদের অসহায়-গরিবদের পাশে দাঁড়ানোর উদাত্ত আহ্বান  জানাই।

 শুরুতে পাঁচটি  সিলিন্ডার দিয়ে ফ্রি অক্সিজেন সেবার কার্যক্রম শুরু করলেও  এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে  ১০টি। এখন পর্যন্ত প্রায় ১২০ রোগীকে অক্সিজেন সেবা দিতে পেরেছেন সংগঠনটির নিবেদিতপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবীরা। সেসব রোগীর বেশিরভাগই করোনা পজিটিভ এবং আর্থিকভাবে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। এ ছাড়া পথ শিশুদের জন্য রয়েছে পজিটিভ ঢাকা পথের স্কুল,পজিটিভ ঢাকা ব্লাড ব্যাংক, পজিটিভ ঢাকা স্বাবলম্বীকরণ। প্রজেক্ট, পজিটিভ ঢাকা পুষ্প আহার, পজিটিভ ঢাকা ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি,পজিটিভ ঢাকা ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্পিং (সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য), পজিটিভ ঢাকা পরিচ্ছন্নতা অভিযান। 

এভাবেই সৃষ্টির সেবাকে মূলমন্ত্র করে পজিটিভ ঢাকা পরিচালনা করে চলেছে তাদের মানবিক কার্যক্রমসমূহ। মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে পজিটিভ বার্তা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads