জেলা পরিষদকে নতুন আদলে রূপ দেওয়া হচ্ছে
প্রশান্ত কুমার রায়
চেয়ারম্যান, নেত্রকোনা জেলা পরিষদ
বর্তমান জেলা পরিষদকে রূপ দেওয়া হয়েছে নতুন আদলে। বছর খানেক আগেও এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হতো প্রশাসক পদমর্যাদার একজনকে দিয়ে। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রতিষ্ঠানটির সেবা আরো বেশি জনমুখী করতে এখানে প্রতিষ্ঠা করেছেন জনপ্রতিনিধিদের প্রতিনিধিত্ব। ইতঃপূর্বে এখানে নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন না। আমিই প্রথমবারের মতো নেত্রকোনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি।
প্রতিবছর জেলা পরিষদের জন্য সরকারি বরাদ্দ আসে সাড়ে ৫ কোটি টাকা। অল্পসংখ্যক এ টাকায় জেলার উন্নয়ন কাজ চাহিদার তুলনায় খুব বেশি করা হয় না। বিগত দেড় বছরে এ জেলা পরিষদের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য কাজ হয়েছে- কেন্দুয়া উপজেলায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০০ আসনের অডিটরিয়াম নির্মাণ, কলমাকান্দা উপজেলায় সাত শহীদের কবরের পাশে ডাকবাংলো স্থাপন, খালিয়াজুরী ডাকবাংলোকে পুনঃসংস্কারের মাধ্যমে অত্যাধুনিক করা। চলমান রয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দের দুর্গাপুরের বিজয়পুর ডাকবাংলোর কাজ।
এ জেলার জনগণ তুলনামূলক শান্তিপ্রিয়
জয়দেব চৌধুরী
পুলিশ সুপার, নেত্রকোনা
নেত্রকোনার জনসাধারণ অন্য অনেক জেলার চেয়ে তুলনামূলক বেশি শান্তিপ্রিয়। এখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই নিয়ন্ত্রিত। বিচ্ছিন্নভাবে যদি কখনো কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেও থাকে, তা সহজেই মোকাবেলা করতে নেত্রকোনা পুলিশ প্রশাসন সক্ষম। কোনো অপরাধী এখানে অপরাধ করে ছাড় পায় না। এ জেলায় পুলিশ সুপার হিসেবে ২০১৫ সালের ১৮ জুন আমার যোগদানের পর নেত্রকোনার বহুল আলোচিত জুয়াখেলা বন্ধ করেছি। এখানে বন্ধ হয়েছে বাজি ধরে ষাঁড়ের লড়াইয়ের আসর। মাদকমুক্ত নেত্রকোনা গড়তে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। কিছুদিন আগে ২৩৫ মাদকাসক্তকে সুপথে ফিরিয়ে আনা হয়েছে এবং পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের দেওয়া হয়েছে নগদ অর্থ সহায়তা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পর মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে ইতোমধ্যে এখানে বন্দুকযুদ্ধে তিনজন মাদক ব্যাবসায়ী নিহত হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ৫৮০ জন। প্রত্যেকেই যেন তাদের নিজ নিজ সন্তানের খেয়াল রাখেন।
পৌর এলাকার অধিকাংশ রাস্তাঘাট উন্নত হয়েছে
মো. নজরুল ইসলাম খান
মেয়র, নেত্রকোনা পৌরসভা
প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছে নেত্রকোনা পৌর শহরের অধিকাংশ রাস্তাঘাট। এসব রাস্তায় যানবাহন চলা তো দূরের কথা হেঁটে চলাই ছিল মুশকিল। শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থাও আগের মতো এখন আর নাজুক নয়। সারা শহরের অলিগলিতে নির্মাণ করা হয়েছে প্রশস্ত ড্রেন। এর ওপর দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে হাঁটার রাস্তা। শহরে সম্প্রসারণ করা হয়েছে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের সংযোগ। নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক পৌর ভবনও।
এসব কথা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন নেত্রকোনা পৌর মেয়র আলহাজ নজরুল ইসলাম খান। তিনি আরো বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মধ্যে এ পৌর শহরে হবে প্রায় ১৩৮ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ। এসব কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মগড়া নদীর পাড় সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্প। ৪১ কোটি টাকায় রাস্তা, ব্রিজ ও ড্রেন নির্মাণ। ৫ কোটি টাকায় অডিটরিয়াম নির্মাণ। ৪ কোটি টাকায় দুটি মার্কেট নির্মাণ। দেড় কোটি টাকায় মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য নির্মাণ।
জেলার উন্নয়ন কাজগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন হোক
শ্যামলেন্দু পাল
সভাপতি, সুশাসনের জন্য নাগরিক, নেত্রকোনা
স্বাধীনতার পর থেকেই এ জেলায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। রাজনৈতিক দলের অনৈক্য, ক্ষমতাসীনদের সদিচ্ছার অভাব, সামাজিক সংগঠনগুলোর বিভাজনই এর অন্যতম কারণ। নেত্রকোনায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপন, বাইপাস সড়ক নির্মাণ, পাহাড়ি এলাকা দুর্গাপুর ও হাওর জনপদ খালিয়াজুরীতে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে, কিন্তু তা এখনো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। জেলার স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে অনেকটাই অবহেলিত।
নেত্রকোনার উন্নয়নে কয়েকটি সামাজিক সংগঠন ও জনসাধারণের আন্দোলন এবং দাবির প্রেক্ষিতে এখানে অবশ্য শেখ হাসিনার নামে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তা ছাড়া, এখানে অর্থনৈতিক জোন করতে সরকারি সংশ্লিষ্ট দফতরের তৎপরতা শুরু হয়েছে ২৬৬ একর জমি চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে। নেত্রকোনার উন্নয়ন কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন হবে- এমনটিই প্রত্যাশা করছি।