নেত্রকোণায় ট্রলার ডুবি: চার শিশুসহ ১০ জনের লাশ উদ্ধার, এখনও নিখোঁজ ২

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

দুর্ঘটনা

নেত্রকোণায় ট্রলার ডুবি: চার শিশুসহ ১০ জনের লাশ উদ্ধার, এখনও নিখোঁজ ২

  • কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০

নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়নের রাজনগর হলদিয়া গ্রামের সামনে গুমাই নদীতে বুলডোজার নৌকার ধাক্কায় যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

কলমাকান্দা থানার ওসি মোঃ মাজহারুল  করিম ও স্থানীয় বড়খাপন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম হাদিছুজ্জামান বেচেঁ যাওয়া যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানান, সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর থেকে ৩০/৩৫ জন যাত্রী নিয়ে একটি ট্রলার নেত্রকোনা জেলার ঠাকুরাকোনায় আসার পথে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজনগর হলদিয়া গ্রামের সামনে গুমাই নদীতে বালু বুঝাই একটি ষ্টিল বডির নৌকার সাথে ধাক্কা লাগে। এতে যাত্রীবাহী ট্রলরটি কাৎ হয়ে ডুবে যায়। ট্রলারের বেশীর ভাগ যাত্রী সাঁতরিয়ে নদীর তীরে উঠতে সক্ষম হলেও অনেকেই নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি দেখতে পেয়ে দ্রæত উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরে ময়মনসিংহ হতে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলোকজনও উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

এদের মধ্যে চার জন শিশু এবং ৬ জন মহিলা রয়েছে। যাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে তাদের মধ্যে ৯ জনের বাড়ী সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর আর এক জনের বাড়ী নেত্রকোনা জেলা সদরের মেদনী গ্রামে। উদ্ধারকৃত লাশের মধ্যে রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর ইনতানগর গ্রামের ওয়াহাব মিয়ার স্ত্রী লুৎফুন্নাহার (২৬), ছেলে রাকিবুল হাসান (৩), একই গ্রামের হাবিকুল মিয়ার স্ত্রী লাকী আক্তার (৩০), মেয়ে টুম্পা আক্তার (৭), ছেলে জাহিদ হাসান (২), একই গ্রামের আব্দুল ছায়েদের স্ত্রী মাজিদা আক্তার জাবেদা (৫৫), তাঁর নাতী অনিক আহমেদ (৬), ধর্মপাশা উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে সুলতান, জুবায়ের হোসেনের ছেলে মোজাহিদ (৫) ও নেত্রকোনার সদর উপজেলার মেদনী গ্রামের হামিদা আক্তার (৫০)। স্বজনদের দাবী এখনও ৪ জন নিখোঁজ রয়েছে। তারা হলেন - রতন মিয়া (৩৫) ও মনিরা আক্তার (৫)। স্বজনদের আহাজারীতে এলাকার বাতাস ক্রমশ ভারী হয়ে উঠেছে।

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  মো. সোহেল রানা জানান, নিখোঁজ যাত্রীদের উদ্ধারে ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জের হতে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে। বুলডোজার ও যাত্রীবাহী নৌকা দুটি জব্দ এবং মাঝি সহ পাঁচজন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলছে বলে তিনি জানান।

খবর পেয়ে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো.আবদুর রহমান ও পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী এবং সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা সার্কেলের পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী  সাংবাদিকদের জানান, ১০টি মৃতদেহ পাওয়া গেছে তার মধ্যে  চার শিশু ও ৫ নারী ও ১ পুরুষ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ট্রলারে কতজন ছিল সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারেনি। ট্রলারটি বিভিন্ন ঘাট থেকে যাত্রী তুলেছিল। প্রাথমিকভাবে যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় এতে করে ৩০ থেকে ৩৫ জন যাত্রী ছিল। ট্রলার ডুবির ঘটনায় মৃতদের লাশ ময়না তদন্ত ছাড়াই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। 

জেলা প্রশাসক কাজি মোঃ আবদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, মৃতদের লাশ বাড়ীতে নিয়ে যাওয়া ও দাফন কাপনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিক মধ্যনগরের নিহত ৯টি পরিবারের প্রত্যেককে দশ হাজার টাকা করে এবং নেত্রকোনা সদরের মেদনী গ্রামের নিহত একটি পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। দুর্ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রদান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads