না পাওয়ার বেদনা শিক্ষকদের

বিশ্ব শিক্ষক দিবস আজ

সংরক্ষিত ছবি

শিক্ষা

বিশ্ব শিক্ষক দিবস আজ

না পাওয়ার বেদনা শিক্ষকদের

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ৫ অক্টোবর, ২০১৮

বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট এবং বৈশাখী ভাতার দাবি করে আসছেন। এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হলেও এই ভাতা এখনো পাননি তারা। সরকারি প্রাথমিকের সহকারী ও প্রধান শিক্ষকদের মধ্যেও রয়েছে বেতন বৈষম্য। আন্দোলনের পরও প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের মুখে হাসি ফোটেনি। পদোন্নতিপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের থেকে বেতন কম পান। শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পেতে ৩ বছরের জায়গায় ৫ বছর লাগছে।

এতসব ‘না’ পাওয়ার বেদনা নিয়ে সারা দেশে আজ শুক্রবার শিক্ষকরা পালন করছেন বিশ্ব শিক্ষক দিবস। শিক্ষক দিবসে ঢাকায় দুটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এবারের শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতে চাই শিক্ষকের অধিকার প্রতিষ্ঠা’।

গত ১০ বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সরকারি বাঙলা কলেজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্ব এবং সকলের সহযোগিতায় সীমিত সময়ে দেশে এত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ একটি অনুকরণীয় দেশ। যেসব উন্নয়নশীল দেশ শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে, তারা আজ বাংলাদেশ থেকে জানতে চায়।

নাহিদ বলেন, এ সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হয়েছে। ফলে এনরোলমেন্ট বেড়েছে। এমডিজি অর্জন হয়েছে নির্ধারিত সময়ের তিন বছর আগে। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের সমতা অর্জিত হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন দৃশ্যমান হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রীর এ বক্তব্যের পাল্টা মন্তব্যে শিক্ষক নেতারা বলেছেন, নানা কারণে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। সরকারিভাবে বাংলাদেশে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন হয় না। বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপনের জাতীয় কমিটির উদ্যোগে প্রতিবছর শিক্ষার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা দেওয়া হয়। প্রতিবারের মতো এবারো বেশকিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন সম্মিলিতভাবে দিনটি উদযাপন করবে।

জানতে চাইলে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন পরিষদের সমন্বয়ক এবং প্রবীণ শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, শিক্ষার উন্নয়নে বাংলাদেশে বহু নীতি প্রণয়ন হয়েছে। নীতি প্রণয়নে শিক্ষকের অংশগ্রহণ থাকলেও বাস্তবায়নে ‘ব্রাত্য’ করে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষকরা দাবি আদায়ে সরব থাকলেও পেশাগতভাবে শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকরা সচেতন নয়। কাজেই শিক্ষার জন্য শিক্ষকের মানোন্নয়ন দরকার। তবেই শিক্ষকরা ভালো থাকবেন।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৫ সালে অষ্টম জাতীয় পে-স্কেল বাস্তবায়ন হলেও সরকারি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতা থেকে বেসরকারি শিক্ষকদের বঞ্চিত করা হয়েছে। শিক্ষকরা চাইছিলেন, সারা দেশের সব বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ হোক। কিন্তু যেসব উপজেলায় কোনো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই সেখানে একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারি করছে সরকার। এ উদ্যোগ ভালোভাবে নেননি শিক্ষকরা। ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরাম’ নামে একটি সংগঠনের জন্ম দেন শিক্ষকরা। এই সংগঠন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট এবং জাতীয়করণের দাবিতে গত জানুয়ারিতে প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট এবং পরে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচির সময় সরকারের পক্ষ থেকে ৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতার আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এজন্য শিক্ষক সমাজে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের মুখপাত্র মো. নজরুল ইসলাম রনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ বাংলাদেশের শিক্ষকদের কাছে ম্লান হয়ে দেখা দিয়েছে। দেশব্যাপী আজ কারণে-অকারণে শিক্ষক নির্যাতন হচ্ছে। শিক্ষকদের চাকুরির নিশ্চয়তা নেই। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের দৌরাত্ম্যে শিক্ষক সমাজ আজ দিশাহারা। কথায় কথায় চাকুরিচ্যুতি। বঞ্চনা আর বেতন-বৈষম্যের কারণে মেধাবীরা আজ শিক্ষকতা পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে শিক্ষকরা যেভাবে সম্মানিত বাংলাদেশে সেটি নেই। বেতন-বৈষম্যসহ নানা কারণে শিক্ষার গুণগত মান ক্রমশ ধ্বংসের দিকে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে হাইস্কুল, দাখিল মাদরাসা, স্কুল ও কলেজ, আলিম মাদরাসা ডিগ্রি বা ডিগ্রিসহ অনার্স-মাস্টার্স কলেজ, ফাজিল বা ফাজিলসহ কামিল মাদরাসা পরিচালিত হয় পরিচালনা কমিটি দিয়ে। এসব পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা বিধি ও নীতিমালায়। সাধারণত রাজনৈতিক নেতা, এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি, সাবেক আমলা ও শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা পরিচালনা কমিটির সভাপতি-সদস্য হয়ে থাকেন। সব ধরনের প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষক প্রতিনিধি এবং অভিভাবক প্রতিনিধি রাখা হয়। শিক্ষা বোর্ডের অধীন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাব বেশি থাকে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠানে সাবেক আমলা-শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তবে যেসব ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে আসছেন তাদের বেশির ভাগের শিক্ষাগত যোগ্যতা, নৈতিক মান, সামাজিক মর্যাদা ইত্যাদি প্রশ্নবিদ্ধ। শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া বলেন, বর্তমানে একশ্রেণির অশিক্ষিত মানুষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় আছেন। তারা দলীয় রঙ মেখে শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করে থাকে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতেই আমরা চাকরি জাতীয়করণ দাবি করছি। শিক্ষকের আর্থিক সচ্ছলতা, চাকরির নিরাপত্তা এবং সামাজিক মর্যাদার জন্যই এই দাবির বাস্তবায়ন দরকার।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads