মতামত

নতুন বছর ও সরকারের কাছে প্রত্যাশা

  • মো. এমদাদ উল্যাহ
  • প্রকাশিত ৬ জানুয়ারি, ২০১৯

সোমবার শেষ হয়েছে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ। আগের দিন শেষ হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে মহাজোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয় লাভ করেছে। বিজয়ের মাসে আরেকটি বিজয় পেয়ে খুশিতে আত্মহারা নেতাকর্মীরা। নির্বাচনের একদিন পরই শুরু হয়েছে নতুন বছর ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ। নববর্ষে সবার উচিত হিংসা-বিদ্বেষসহ সব ভেদাভেদ ভুলে দেশের উন্নয়নে কাজ করা। দুর্নীতিকে চিরতরে বিদায় জানানো। আর এতে পুরনো দিনের শোক-অপ্রাপ্তি-আক্ষেপ ভুলে অপার সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। অন্ধকার ঠেলে, সকল ভয় জয় করার মানসে নতুন করে জেগে উঠবে তরুণ সমাজ। এজন্য তাদেরকে সমাজের সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে শপথ নিতে হবে। কারণ তরুণরাই একটি দেশের শক্তি।

একটি আত্মমর্যাদাশীল, গণতান্ত্রিক ও উন্নত দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েই মঙ্গলবার ইংরেজি নতুন বছরে পদার্পণ করে সারা বিশ্ব। তবে কবে থেকে নতুন বছরের উৎসব পালন শুরু হয়েছে, তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। আগেকার দিনে নববর্ষ উদযাপন ছিল অত্যন্ত অনাড়ম্বরপূর্ণ ও জৌলুসহীন। ঘরোয়া পরিবেশে পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজনের মাঝেই নতুন বছরের প্রথম দিনে ভালো খাবার আয়োজন-আপ্যায়ন এবং নতুন পোশাক পরার মধ্যে বর্ষবরণ উদযাপন সীমাবদ্ধ ছিল। কালের পরিক্রমায় সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়েই নববর্ষ উদযাপনের সুবিধার্থে দিনটিতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়।

ইংরেজি নববর্ষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে পালিত হয়েছে। আমেরিকায় হয় সবচেয়ে বড় নিউ ইয়ার পার্টি, যেখানে ৩০ লাখ লোক অংশগ্রহণ করে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে প্রায় ১৫ লাখ লোকের উপস্থিতিতে ৮০ হাজারের মতো আতশবাজি ফোটানো হয়। মেক্সিকোয় ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে ১২টি ঘণ্টাধ্বনি বাজানো হয়। প্রতি ঘণ্টাধ্বনিতে ১টি করে আঙুর খাওয়া হয়, আর মনে করা হয়, যে উদ্দেশ্যে আঙুর খাওয়া হবে সে উদ্দেশ্য পূরণ হবে। ডেনিশরা (ডেনমার্ক) প্রতিবেশীর দরজায় কাচের জিনিসপত্র ছুড়তে থাকে। যার দরজায় যত বেশি কাচ জমা হবে, নতুন বছর তার তত ভালো যাবে। আর কোরিয়ানরা যৌবন হারানোর ভয়ে রাতে ঘুম থেকে বিরত থাকে। তাদের বিশ্বাস বছর শুরুর সময় ঘুমালে চোখের ভ্রূ সাদা হয়ে যায়। বাংলাদেশে রাত বারোটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে আতশবাজি, নাচ-গান, হৈ-হুল্লোড়, উন্মত্ততা শুরু হয়। নতুন পোশাক, ভালো খাবার, বিভিন্ন স্পটে ঘুরতে যাওয়া, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ইত্যাদির মধ্য দিয়ে পালিত হয় ইংরেজি নববর্ষ। আর এই ইংরেজি নতুন বছরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট আবারো নতুন সরকার গঠন করতে চলেছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী ইশতেহারে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ‘গ্রাম হবে শহর’ উল্লেখ করে ভোটারদের কাছে ২১টি অঙ্গীকার করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতাও পেয়েছে। ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকাশিত ইশতেহারে অঙ্গীকারগুলো হচ্ছে— প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ। তরুণ যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা এবং কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ। নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা ও শিশুকল্যাণ। পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও মাদক নির্মূল। মেগা প্রকল্পগুলোর দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা। দারিদ্র্য নির্মূল ও সব স্তরে শিক্ষার মানবৃদ্ধি। সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা। সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার লক্ষ্যে যান্ত্রিকীকরণ। দক্ষ ও জনসেবামুখী প্রশাসন। জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা গড়ে তোলা। ব্লু-ইকোনমি— সমুদ্র সম্পদ উন্নয়ন। নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা। প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণ। টেকসই উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি।

ইশতেহারে থাকা অঙ্গীকারগুলোকে বাংলাদেশের মানুষ মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছে। নতুন বছরে সরকার যেন জনগণের সঙ্গে দেওয়া অঙ্গীকারগুলো ভুলে না যায়। বিরোধী জোটের নেতাকর্মী দমন-নিপীড়ন নয়। ‘ক্ষমতা নয় মমতা’ দেখিয়ে দেশ চালাবেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা— এমন প্রত্যাশা সবার। এতে করে এগিয়ে যাবে সোনার বাংলাদেশ।

 

লেখক : সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads