নতুন চ্যালেঞ্জ উচ্চ তাপমাত্রা

সংগৃহীত ছবি

কৃষি অর্থনীতি

নতুন চ্যালেঞ্জ উচ্চ তাপমাত্রা

  • ফিচার ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১৯ মে, ২০২১

গত ৪ এপ্রিল হাওরাঞ্চলে প্রবাহিত গরম হাওয়া (লু হাওয়া) বা ‘হিটশক’ কিছুটা নতুন ধরনের অভিঘাত। দীর্ঘদিনের বৃষ্টিহীন উচ্চ তাপপ্রবাহ এই হিটশকের কারণ। এ হিটশকে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকা এবং গোপালগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও ময়মনসিংহসহ বেশ কিছু অঞ্চলে বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দীর্ঘ অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর এ সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে হিটশকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ৪৮ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আবাদের পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে হিসাবে ১০ থেকে ১২ হাজার হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। কোনো কোনো জমি ৮০ ভাগ, কোনো জমি ৫-১০ ভাগ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার আশেপাশে অনেক জমি ভালোও রয়েছে। যেসব জমির ধান ফুল ফোটা পর্যায়ে ছিল না, সেগুলো খুবই ভালো রয়েছে, যেখানে ফুল-ফোটা পর্যায়ে ছিল সেটাতে অধিকাংশ (প্রায় ৭০-৮০%) ক্ষতি হয়েছে। করোনাকালে জনস্বাস্থ্য সংকটের মাঝেই নতুন এই সংকটকে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে অবহিত করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ধানের বৃদ্ধি পর্যায়ে উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাব

ধানগাছ বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে উচ্চ তাপমাত্রা বিভিন্ন মাত্রায় প্রভাব বিস্তার করে। অঙ্গজ বৃদ্ধি পর্যায়ে উচ্চ তাপমাত্রার (>৩৭-৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) প্রভাবে ধানের পাতার অগ্রভাগ সাদা হয়ে যাওয়া, পাতায় ক্লোরোটিক ও সাদাটে ব্যান্ড বা ব্লচ দেখা যাওয়া এবং গোছায় কুশির সংখ্যা কম হওয়া ও গাছের উচ্চতা কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়। অঙ্গজ বৃদ্ধি পর্যায়ে উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাবে ফলনে তেমন ক্ষতিকর প্রভাব না ফেললেও প্রজনন পর্যায়ে উচ্চ তাপমাত্রার (>৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) প্রভাবে ধানের ফলনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ধানের প্রজনন পর্যায়ে শিষ বের হওয়ার ৯ দিন পূর্বে ৩৫-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং ফুল ফোটা ও পরাগায়নের সময় ১-২ ঘণ্টা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও বেশি তাপমাত্রার প্রভাবে সাদা শিষ, সাদা স্পাইকলেট, শিষে স্পাইকলেটের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং চিটা সমস্যা ধানের ফলনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সংকট নিরসনে সরকারের জরুরি পদক্ষেপ

হিটশকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং উদ্ভূত সংকট নিরসনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মেসবাহুল ইসলামের নেতৃত্বে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গত ৭ এপ্রিল ও নেত্রকোনা, মদন, খালিয়াজুড়ি, কেন্দুয়া, কিশোরগঞ্জের নিকলী, করিমগঞ্জ, সদরসহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। গত ১২ এপ্রিল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও কোটালিপাড়ায় সম্প্রতি দাবদাহে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে দেখা যায়, শুরুতে যে ক্ষতির ধারণা করা হয়েছিল ক্ষতির পরিমাণ তার চেয়ে অনেক কম হবে। যেমন যেসব জমি ধরা হয়েছিল শতভাগ ক্ষতি হবে, এখন দেখা যাচ্ছে ৩০-৪০ ভাগ ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ যাই হোক না কেন নিশ্চয়ই সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়াবে।             

- ফিচার ডেস্ক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads