পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর আশপাশের এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ ও পরবর্তী সময়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। তাই গভীর সমুদ্র থেকে মাছ ধরার সব নৌকা ও ট্রলারকে আজ রোববারের মধ্যে ফিরে আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
লঘুচাপটি নিম্নচাপের পর ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে ‘ইয়াশ’। এটি একটি পার্সিয়ান শব্দ, যার ইংরেজি হচ্ছে জেসমিন। বাংলায় যাকে বলা হয় জুঁই ফুল। এই নামটি দিয়েছে ওমান। বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখানোর নির্দেশনা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আন্দামান সাগর ও পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিতে গতকাল শনিবারই বৈঠকে বসে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন। প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, উত্তর আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে যে লঘুচাপ সৃষ্টির আভাস দেওয়া হচ্ছে, সেটি যদি ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াশ’-এ রূপান্তর হয়, তবে তা এক পর্যায়ে শক্তিশালী ‘সুপার সাইক্লোনে’ পরিণত হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পুরো উপকূলকে সতর্ক থাকতে হবে।
সভার শুরুতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, এটি এখনো হাজার কিলোমিটার দূরে রয়েছে। ১ নম্বর দূরবর্তী সংকেত দেওয়া হয়েছে। নিম্নচাপ হওয়ার পর ধীরে ধীরে উপকূলের দিকে এলে পরবর্তীতে সঙ্কেত বাড়ানো হবে।
দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার মধ্যে আন্দামান সাগরে একটি ঘূর্ণিঝড়ের অঙ্কুরোদ্গমনের খবর দেন আবহাওয়াবিদরা। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলেই তবে এর নাম হবে ‘ইয়াশ’।
আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, শনিবার বেলা ২টার পরে লঘুচাপটি সৃষ্টি হয়েছে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলকায়। এটি পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে এবং ২৬ মে নাগাদ উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে পৌঁছতে পারে।
আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আন্দামান ও পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। এর প্রভাবে আগামী ২৪, ২৫ ও ২৬ মে সারা দেশেই বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায়। তিনি বলেন, লঘুচাপটি যদি শক্তিশালী হয়ে উঠে তাহলে আগামী ২৬ মে বাংলাদেশ ও ভারতের উড়িষ্যার উপকূলে আঘাত হানার শঙ্কা রয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের আগে বাংলাদেশে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শনিবার বিকাল নাগাদ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাঙ্গামাটিতে ৩৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও পাবনা জেলাসহ ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
