দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইন নির্মাণ কাজে ধীর গতি

সংরক্ষিত ছবি

যোগাযোগ

দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইন নির্মাণ কাজে ধীর গতি

  • চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৪ নভেম্বর, ২০১৯

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারের ঘুমধুম পর্যন্ত ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২৮ কিলোমিটার রেল লাইন প্রকল্পের কাজ চলছে ধীর গতিতে। আজ থেকে অর্ধশত বছর আগে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার অর্ধকোটি মানুষ স্বপ্ন দেখছিল এ রেল লাইন নির্মাণের। সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলেও কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অবহেলার কারণে যথাসময়ে রেল লাইন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ পোষণ করছেন তারা।

চট্টগ্রামের দোহাজারী হতে কক্সবাজারের ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের জন্য এডিবি ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে জমি মালিকদেরকে ক্ষতিপুরণ প্রদানের জন্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি হকুম দখল কর্মকর্তার বরাবরে ২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখনো পর্যন্ত অনেক ভূমি মালিক তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অবহেলার কারণে এখনো ৪০ শতাংশ কাজও সম্পন্ন হয়নি। প্রথমে ২০১০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে এ কাজ সম্পন্œ করার তারিখ ধার্য্য থাকলেও পরবর্তীতে নতুন মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২২ সাল পর্যন্ত।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, এ মেঘা প্রকল্পের আওতায় ১২৮ কিলোমিটার রেল লাইনের মধ্যে ৯টি রেল ষ্টেশন নির্মিত হবে ঝিনুকের আদলে দৃষ্ঠি নন্দন রেল স্টেশন। এ রেল লাইনের আশপাশ এলাকায় গড়ে উঠবে আকর্ষনীয় হোটেল, বাণিজ্যিক ভবন,বিপণিবিতান ও বহুতল বিশিষ্ট আবাসিক ভবন।

এলাকাবাসী শংকা প্রকাশ করেছেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রেল লাইন নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন সম্ভব না হলে প্রকল্প ব্যয় বহুগুণে বাড়তে পারে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এ প্রকল্পে অর্থের জোগান দিচ্ছে।

রেলের প্রকৌশলীরা জানান, প্রকল্পের আওতাধীন ১২৮ কিলোমিটার এলাকায় চারটি বড় সেতুসহ ৩৯টি সেতু নির্মাণ হবে। এর মধ্যে ২৮টি সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। তৎমধ্যে বড় ৪টি সেতু হচ্ছে মাতামুহুরী নদী, মাতামুহুরী শাখানদী, খর¯্রােতা শঙ্খ এবং বাঁকখালী নদীর ওপর।

সরেজমিন গেলে দেখা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া এলাকায় রেল পথের নির্ধারনের স্থানের মধ্যে শঙ্খ ও মাতামুহুরী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পরিবেশ আইন অমান্য করে এক শ্রেনীর ক্ষমতাসীন দলের অর্থ লিপসু নেতা ড্রেজার ও সেলু মেশিন বসিয়ে দিন রাত লাখ লাখ ঘনফুট বালি উত্তোলন করে রেল লাইন নির্মাণ কাজে সরবরাহ দিচ্ছে। এতে সরকার এক কানা কড়িও রাজস্ব পাচ্ছেনা।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১২৮ কিলোমিটার রেল লাইনের মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মিত হবে।

দীর্ঘ এ রেলপথের মধ্যে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া, কক্সবাজারের চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাহ, রামু, সদর ও উখিয়া এবং নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে ৯টি রেল স্টেশন নির্মিত হবে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, এই প্রকল্পকে পৃথক দুটি লটে ভাগ করা হয়েছে। একটি হচ্ছে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের চকরিয়া পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয় লট হচ্ছে চকরিয়া থেকে কক্সবাজার সদর পর্যন্ত। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করর্পোরেশন (সিআরইসি) ও দেশীয় তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করর্পোরেশন (সিসিইসিসি) ও দেশীয় ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড পৃথক দুই লটের কার্যাদেশ পায়।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকার প্রকল্পটি প্রথম অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই প্রকল্পে সিঙ্গেল লাইন মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু ট্রান্স এশীয় রেলপথের সঙ্গে সংযুক্ত হতে ব্রডগেজ রেলপথ লাগবে। তাই প্রকল্প সংশোধন করে ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল পাস করা হয়।

জমি অধিগ্রহণসহ প্রকল্পের বিভিন্ন অনুষঙ্গে ব্যয় বেড়েছে ১৬ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। চট্টগ্রামে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এবং রামু হতে মিয়ানমারের নিকট গুনদুম সীমান্ত পর্যন্ত আরও ২৮ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এ রেলপথে মিটারগেজ ও ব্রডগেজ দুই ধরনে ট্রেন চলতে পারবে।

প্রভাবশালী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গুলো যেন তেন ভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ায় নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। তাই তারা এ কাজ সরেজমিনে সার্বিক তদারকির জন্য উচ্চ পর্যায়ের একটি অভিজ্ঞ তদন্ত টিম গঠন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads