দেশের প্রথম ভিক্ষুকমুক্ত জেলা

প্রাপ্যতার ভিত্তিতে ২৭৫ জনকে বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও মাতৃত্বকালীন ভাতা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

দেশের প্রথম ভিক্ষুকমুক্ত জেলা

  • প্রকাশিত ১৪ অগাস্ট, ২০১৮

এস.এম. হালিম মন্টু, নড়াইল

নড়াইল জেলায় ৩৯ প্রতিবন্ধীসহ ৭৯৮ ভিক্ষুক ভিক্ষার জন্য এখন আর কারো কাছে হাত পাতে না। তারা কেউ বাদাম, কেউ সবজি বিক্রি করছে। কেউ ওজন পরিমাপক যন্ত্র দিয়ে অর্থ আয় করছে। আবার কেউ চা, রুটি বিক্রির দোকান দিয়ে অর্থ উপার্জন করছে। কেউ  ছাগল-ভেড়া-গরু, হাঁস-মুরগি পালন করছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুনর্বাসিত এসব ভিক্ষুকের খোঁজখবর এবং সাহায্য অব্যাহত রয়েছে। ২০১৭ সালের ৭ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) শেখ ইউসুফ হারুন নড়াইল সার্কিট হাউজ মিলনায়তন ও আউড়িয়া এবিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এক অনুষ্ঠানে ৮০ জন পুনর্বাসিত পুরুষ ভিক্ষুকের মধ্যে একটি করে লুঙ্গি, মহিলাদের জন্য একটি করে শাড়ি, একটি ওজন মাপক মেশিন তুলে দেন। তিনি নড়াইলের পুনর্বাসিত ৭৯৮ ভিক্ষুকের জন্য বিশেষ জিআর হিসেবে বছরে একশ’ টন চাল বরাদ্দপ্রাপ্তির জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করবেন বলে জানান এবং নড়াইল জেলা প্রশাসককে বরাদ্দপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া শুরু করতে বলেছেন। এর আগে ২০১৭ সালের ২৮ মে জেলা প্রশাসক মো. এমদাদুল হক চৌধুরী পুনর্বাসিত ভিক্ষুকের মধ্যে দুটি করে ভেড়া বিতরণ করেন। নড়াইলে ভিক্ষুকমুক্ত বিভিন্ন কার্যক্রম দেখতে ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল ঢাকা ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে ২৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নড়াইলে আসে এবং যারা ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের কীভাবে পুনর্বাসনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তোলা হয়েছে, সে বিষয়ে এ প্রতিনিধি দল তথ্য সংগ্রহ করে। দেশে প্রথম ভিক্ষুকমুক্ত জেলা হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষায় এখন নড়াইল।

নড়াইল স্থানীয় সরকার অধিদফতরের উপপরিচালক মো. সিদ্দিকুর রহমান ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভিক্ষুকমুক্তকরণের উদ্যোগ নেন এবং জেলার তিনটি উপজেলা ও ৩৯টি ইউনিয়নে ৭৯৮ ভিক্ষুককে চিহ্নিত করেন। এরপর শুরু হয় পুনর্বাসন কার্যক্রম। ভিক্ষুকদের কর্মমুখী ও পুনর্বাসন করতে এ পর্যন্ত পাঁচটি গরু, ছয়টি ওজন পরিমাপক যন্ত্র, ছয়টি সেলাই মেশিন, ৩০৭টি ছাগল, ৮টি ভেড়া, ৯১০টি হাঁস, ২৯০টি মুরগি, ১৩টি ভ্যান, ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য ২৫৩টি দোকান, দুই বান্ডিল টিন ও ছয় হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৪৭ লাখ টাকার পুঁজি গঠনে সমিতির মাধ্যমে ঋণ সৃষ্টি করে ভিক্ষুকদের মধ্যে বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। প্রাপ্যতার ভিত্তিতে ২৭৫ জনকে বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও মাতৃত্বকালীন ভাতা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে জিআর চাল প্রদানসহ ইজিপিপি ও ১০ টাকা কেজি দরের চালের সুবিধাও তাদের দেওয়া হয়। আট নারীকে মহিলাবিষয়ক অধিদফতরে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষকর্মী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। পুনর্বাসিত ৭৯৮ ভিক্ষুক পুনরায় যেন ভিক্ষাবৃত্তিতে ফিরে না আসে সেজন্য তাদের দেখভালের জন্য ৭৯৮ ট্যাগ কর্মকর্তা নিয়োজিত রয়েছেন।    

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads