দুধের ফিডারে চালের গুঁড়া ভাতের মাড়

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

দুধের ফিডারে চালের গুঁড়া ভাতের মাড়

  • রেজাউল করিম সোহাগ, শ্রীপুর
  • প্রকাশিত ১ ডিসেম্বর, ২০২০

অগ্রহায়ণের মধ্যদুপুর। প্রকৃতিতে মৃদু ঠান্ডা বিরাজ করলেও দুপুরে খসখসে গরম অনুভূত হয়। এমনি মৃদু গরম থেকে নিজেদের আড়াল করে গাছের নিচে বসে আছেন সত্তরোর্ধ ফজলুল হক মোড়ল। তার কোলে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে আছে লিকলিকে শরীরের নাতনি আয়েশা। বয়স তিন বছরের একটু বেশি। তিনি হাতে দুধের ফিডার নিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন শিশু নাতনিকে। কিন্তু সে খেতে চাচ্ছে না। দুধের ফিডারে দুধের বদলে কিছু চালের গুঁড়া আর ভাতের মাড়, তাতেই অরুচি আয়েশার। এমনি দৃশ্য চোখে পড়ে উপজেলার দক্ষিণ ভাংনাহাটি গ্রামের হেলিম মেম্বারের বাড়ির পাশে। শ্রীপুর-মাস্টার বাড়ি আঞ্চলিক সড়কের পাশে বসে নাতনিকে নিয়ে অপেক্ষায় ফজলুল হক মোড়ল।

তিনি জানান, তার বাড়ি পাশের কাওরাইদ ইউনিয়নের মোড়ল পাড়া এলাকায়। তিনি ওই গ্রামের মৃত নবী হোসেন মোড়লের ছেলে। কোনো সম্পত্তি না থাকায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান পরিবার নিয়ে। কিছুদিন হলো মাওনা ওয়াপদা মোড়ে অল্প টাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। তিনি আরো জানান, তার এ নাতনিকে কুলে নিয়ে ঘোরেন সবার সঙ্গে। তার একটি মাত্র মেয়ে পারুল। কিছুদিন আগে তার স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। মেয়ে পারুল আবারো গর্ভবতী। ফজলুল হক মোড়ল বলেন, শুনেছি সরকার গরিবের জন্য কত কিছু করছে। আমাদের মতো নিতান্তই অসহায়ের জন্য কোনো কিছু হয় না। ভূমিহীন হিসেবে বহুবার চেষ্টা করেছি- একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে। ভাগ্যে সে সুযোগ মেলেনি।

পারুল আক্তার বলেন, স্বামী মিজানুল রিকশা চালাত। তার কামাইয়ে সংসার ভালোই চলছিল। একটি দুর্ঘটনা সব শেষ। স্বামী নাই, সুখও নাই। নিরুপায় হয়ে বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে ভিক্ষা করতে বের হয়েছি। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করছি। বাবাও বেশ অসুস্থ, তবু মেয়েটাকে বাবার কোলে দিয়ে মানুষের বাড়িতে ঢুকি ভিক্ষার জন্য। আপনার মেয়ে কি খায় এমন প্রশ্নে জানতে চাইলে তিনি কেঁদে ফেলেন।

তিনি বলেন, কিছু চালের গুঁড়া আর ভাতের মাড় মিশিয়ে খেতে দেই। কখনো কখনো বেশি ক্ষিদা পেলে খায়। অনেক সময় খেতে চায় না। তিনি বলেন, আয়েশা তো চালের গুঁড়া পাচ্ছে। কিন্তু যে আসছে সে কী খেয়ে বাঁচবে- তা ভেবেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। তিনি আরো বলেন, গর্ভের সন্তানের বয়স সাত মাস। শরীর বেশ ভারী। তবু এ ওজন শরীর নিয়ে মানুষের বাড়িতে ভিক্ষা করি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads