ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটির নতুন ৩৬ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচনী প্রচার শেষ হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এসব নির্বাচনী এলাকায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও দুই সিটির সম্প্রসারিত ওয়ার্ডে নির্বাচন উপলক্ষে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনী সরঞ্জামসহ সব ধরনের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) পরিচালনায় ৫০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা নির্বাচনী এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। সাধারণ কেন্দ্রে ২২ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবেন। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, ভোটের ৩২ ঘণ্টা আগে প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করতে হয়। সে অনুযায়ী গতকাল মধ্যরাতে শেষ হয়েছে প্রচার-প্রচারণা। নিরাপত্তার স্বার্থে গতকাল মধ্যরাত থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এসব নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আজ বুধবার মধ্যরাত থেকে আগামীকাল মধ্যরাত পর্যন্ত বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, জিপ, টেম্পো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, পরিচয়পত্রসহ দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক, পরিচয়পত্রসহ দেশি-বিদেশি সাংবাদিক, নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক এবং কিছু জরুরি কাজ যেমন অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক ও টেলিযোগাযোগ কাজে নিয়োজিতদের জন্য যানবাহনে নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে।
ইসি সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং দুই সিটির নতুন ৩৬ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে ইসির পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার সবই করা হয়েছে। নির্বাচনে যে কোনো ধরনের সহিংসতা ও অনিয়ম বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দলীয় প্রতীকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনে লড়ছেন পাঁচ প্রার্থী। এর মধ্যে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাফিন আহমেদ লড়ছেন লাঙল প্রতীক নিয়ে। স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রহিম টেবিল ঘড়ি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আনিসুর রহমান দেওয়ান আম ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টির শাহীন খান বাঘ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এ ছাড়া কাউন্সিলর পদে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে লড়ছেন ১২৪ জন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১২৫ জন প্রার্থী।
ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ডিএনসিসির নতুন মেয়র এবং দুই সিটির ৩৬টি নতুন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মেয়াদ হবে দুটি সিটি করপোরেশনের মেয়াদ থাকা পর্যন্ত। উপনির্বাচনে জয়ীরা এক বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন। ডিএনসিসির মেয়াদ ২০২০ সালের ১৩ মে পর্যন্ত। মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে উত্তর সিটির মেয়র পদ শূন্য হয়।
নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা উত্তরের বেশ কয়েকটি এলাকায় জনসংযোগ ও পথসভা করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম।
পথসভায় সবাইকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে সবাইকে নিয়ে সুস্থ ও সচল আধুনিক ঢাকা গড়বেন। উত্তরের ভোটারদের নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আতিকুল ইসলাম আরো বলেন, আমি মনে করি আমরা একসঙ্গে কাজ করব। নগরপিতা নয়, নগরের সেবক হিসেবে আপনাদের পাশে থাকব। আপনারাও থাকবেন আমার পাশে। এই অনুরোধ আপনাদের কাছে।
প্রচারের শেষ দিনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে শোডাউন করেন কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী সব প্রার্থীই।