দুই মালিকের ৭ দিনের রিমান্ড মামলা ডিবিতে হস্তান্তর

এফআর টাওয়ারের দুই মালিক তাসভির উল ইসলাম ও এসএমএইচআই ফারুক

ছবি : সংগৃহীত

আইন-আদালত

এফআর টাওয়ারে আগুন

দুই মালিকের ৭ দিনের রিমান্ড মামলা ডিবিতে হস্তান্তর

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১ এপ্রিল, ২০১৯

রাজধানীর বনানীতে এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় জমির মালিক এসএমএইচআই ফারুক ও ভবনের বর্ধিত অংশের মালিক তাসভিরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল রোববার  দুপুরে ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের বিচারক সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক জালাল উদ্দিন বেলা পৌনে ৩টার দিকে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।

গত বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে। ভয়াবহ এ আগুন ছড়িয়ে পড়ে ২২ তলাবিশিষ্ট ওই ভবনের কয়েকটি তলায়। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও বিমানবাহিনীর পাঁচটি হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়। এ আগুনে এখন পর্যন্ত ২৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে পুলিশ। এতে আহত ও দগ্ধ হয়েছেন অন্তত ৭৩ জন।

এ ঘটনায় গত শনিবার রাতে বনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মিল্টন দত্ত বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে এসএমএইচআই ফারুক ও তাসভিরুল ইসলামসহ তিনজনকে আসামি করা হয়। ওই দিন রাতেই ফারুককে তার বারিধারার বাসা থেকে এবং তাসভিরুল ইসলামকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।

এফআর টাওয়ারে আগুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলা হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিবির (উত্তর) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শাহজাহান সাজু গণমাধ্যমকে জানান, এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বনানী থানায় দায়ের হওয়া মামলাটি ইতোমধ্যে ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, অগ্নিকাণ্ডের এমন ঘটনা প্রকৃত অর্থে কে ঘটাল, কারা দায়ী বা কাদের গাফিলতি ছিল- এগুলোর বিশ্লেষণ কখনো হয় না। এসব বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে কী কী ব্যবস্থা ও উপকরণ থাকা উচিত- এ প্র্যাকটিস অনেক ক্ষেত্রেই নেই।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, রাজউক, মালিকপক্ষ এবং ডেভেলপার কোম্পানিদের মধ্যে কার কী ভূমিকা ছিল দেখা হবে। সকল অপরাধ পর্যালোচনা করে তদন্ত শেষে তাদের গাফিলতি ও অপরাধ চিহ্নিত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

আবদুল বাতেন আরো বলেন, ভবন নির্মাণের আগে ও পরে কার কী ভূমিকা ছিল সেসব আমরা তুলে ধরব। প্রত্যেকটা বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা হবে যেন কেউ পার পেয়ে না যেতে পারে। একটি ভবন নির্মাণে কী কী নীতিমালা রয়েছে সেগুলো রাজউকের পক্ষ থেকে নজরদারি করে। যে এই ইন্সপেকশন করে তার দায়-দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি, যে নিয়ম মেনে সেটি করা হয়েছিল কি না। এ ছাড়া, ফায়ার সেফটির বিষয়গুলোতে ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। এ ভবনে কী কী ব্যত্যয় ছিল, সেসব শনাক্ত করা হবে।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, সাধারণত একটি ভবন ব্যবহার উপযোগী করে ডেভেলপার কোম্পানি হস্তান্তর করে থাকে। এফআর টাওয়ারের ক্ষেত্রে ডেভেলপার কোম্পানি অন্য মালিকদের রেজিস্ট্রেশন করে বুঝিয়ে দেয়নি। এক্ষেত্রে ভবনে ডেভলপারেরও মালিকানা রয়েছে।

অনুমোদন ও নজরদারিতে রাজউকের গাফিলতি থাকতে পারে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ না আনার বিষয়ে তিনি বলেন, রাজউকের কার্যক্রমটি তার অথরিটি নিশ্চিত করবে। কেউ নিয়মবহির্ভূত কোনো কাজ করলে তাদের বিরুদ্ধে দাফতরিক ব্যবস্থা নেবে। তবে কেউ সরাসরি ক্রিমিনাল অফেন্সে জড়িত থাকলে তদন্তে যদি তাদের নাম আসে, তাহলে তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।

মামলার তদন্তে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে ডিবির ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা বলেন, তদন্তে অপরাধ অনুযায়ী সবাইকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এখানে ভবন ভেঙে পড়েনি, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তাই ভবনে অগ্নিকাণ্ড ব্যবস্থাপনায় কী কী ঘাটতি ছিল, সেসব বিষয় বিবেচনায় আনা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads