রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো নির্যাতনে দায়ীদের বিচারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোটের (আসিয়ান) পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে মন্ত্রীরা এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেন বলে জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণ। গতকাল মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্টে তিনি এ কথা বলেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরের পার্লামেন্টে দেওয়া এক বক্তব্যে বালাকৃষ্ণ বলেন, ‘আমরা সেখানে (রাখাইন) সহিংসতার অভিযোগের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এটা একটি মানবসৃষ্ট বিপর্যয়, যা এই যুগে এসে কখনোই ঘটা কাম্য নয়।’ তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা (আসিয়ানভুক্ত) মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন, একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করুন। তাদের তদন্তের পূর্ণ অধিকার দিন এবং দায়ীদের বিচারের ব্যবস্থা করুন।’
বালাকৃষ্ণ আরো বলেন, ‘রাখাইনের পরিস্থিতির সমাধান না হলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আশপাশের অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ অবস্থায় অরক্ষিত, অনিরাপদ ও নির্দোষ ভুক্তভোগীদের জন্য তাদের (মিয়ানমার সরকার) সঠিক কাজটিই করা উচিত।’
আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এই আহ্বানের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবারই রয়টার্সের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ তাইয়ের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি ফোনে গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এদিকে আগামী মাসেই সিঙ্গাপুর সিটিতে আসিয়ানের পরবর্তী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। মিয়ানমারও আসিয়ানের সদস্য। বর্তমানে আসিয়ানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছে সিঙ্গাপুর।
প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও আঞ্চলিক সমস্যা মোকাবেলায় তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনি আসিয়ান। জোটটির নিয়ম অনুযায়ী তারা কোনো সদস্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বা আলোচনা করতে পারে না। তারপরও সম্প্রতি রোহিঙ্গা ইস্যুতে জোটটির বৈঠকে ও ব্যক্তিগতভাবে অনেক নেতা এ নিয়ে মন্তব্য করেছেন। সম্প্রতি মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। গত বছরের আগস্টের শেষে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তাদের চালানো গণহত্যা, গণধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও, লুটপাটকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতিসংঘ। এ অভিযানে নিপীড়িত ও বাস্তুচ্যুত হয়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।