যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলের প্রথম মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামীকাল মঙ্গলবার। এ অবস্থায় সর্বশেষ নির্বাচনী জরিপগুলো বলছে, সিনেটে রিপাবলিকান আধিপত্য বজায় থাকলেও প্রতিনিধি পরিষদে ভরাডুবি হতে যাচ্ছে ট্রাম্প শিবিরের। তবে বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের এই মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন তার প্রভাব পড়বে পুরো বিশ্বে।
আলজাজিরার খবরে বলা হয়, প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫টি অর্থাৎ সবগুলো আসন, সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ একশ আসনের ৩৫টিতে ও গভর্নর পদে ৩৯ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ট্রাম্পের শাসনামলের দ্বিতীয় বছরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ নির্বাচন। এদিকে দেশটির প্রায় ১৭টি রাজ্যে আগাম ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে জর্জিয়ায় ৫৬ শতাংশ আগাম ভোট পড়েছে। এ ছাড়া টেক্সাস, ফ্লোরিডা ও টেনেসিতে ৫৪ শতাংশ এবং নেভাদায় ৫৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। আরিজোনা ও মিনেসোটায় ভোট পড়েছে ৫২ শতাংশ।
এবারের নির্বাচনে বিশেষ দিক হলো- এতে অংশ নিচ্ছেন রেকর্ডসংখ্যক নারী, নেটিভ আমেরিকান ও মুসলিম প্রার্থী। মনে করা হচ্ছে, ট্রাম্পের ‘শ্বেতাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ’ জাতীয়তাবাদী ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাতেই এবার সংখ্যালঘু জনগণের মধ্য থেকে নির্বাচনের লড়াই করার হার বেড়েছে। এর মধ্যে কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে ২৩৫, সিনেটে ২২ ও গভর্নর পদে লড়ছেন ১৬ নারী।
এ নির্বাচনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আসন জর্জিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে পুরো যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে গভর্নর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসী আইন ও আগ্নেয়াস্ত্র বহনের সমর্থক রক্ষণশীল ব্রায়ান কেম্প। তার বিপরীতে লড়বেন প্রগতিশীল আফ্রিকান আমেরিকান নারী স্টেসি আব্রামস। সামাজিকভাবে রক্ষণশীল জর্জিয়া রিপাবলিকানদের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত হলেও এবার ভালো অবস্থানে আছেন স্টেসি। আর এই পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে এবং তিনি জয়ী হন তাহলে তার প্রভাব পড়বে সামনের জাতীয় নির্বাচনেও। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ আলাবামা থেকে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী হয়ে লড়বেন আরেক কৃষ্ণাঙ্গ নারী সুজানান কোলম্যান। এই প্রদেশের ১৫ ভাগ আসন দখলে রেখেছেন নারীরা যাদের অর্ধেকের বেশিই আফ্রিকান হওয়ায় তার অবস্থা বেশ ভালে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সব মিলিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফল কি হবে তার ওপর নির্ভর করছে খোদ প্রেসিডেন্টের ভাগ্যও। বর্তমানে সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান পার্টি। সম্প্রতি সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টেও প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ট্রাম্পের পছন্দের ব্রেট কাভানাকে। কিন্তু যদি এবারের নির্বাচনে যদি প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ডেমোক্র্যাটদের হাতে যায় তাহলে ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বেন খোদ প্রেসিডেন্টই। ট্রাম্প পরিবারের আয়কর বিবরণী ও গত জাতীয় নির্বাচনে রাশিয়ার যোগসাজশ নিয়ে তদন্তের মুখে পড়তে পারেন তিনি। তবে রিপাবলিকানরা যদি এ যাত্রায় নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে পারে তাহলে অবশ্য শুধু যুক্তরাষ্ট্রই না পুরো বিশ্বের ওপর ট্রাম্পের দমননীতি আরো প্রকট আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আর সেজন্য নির্বাচনের একেবারে আগে আগেই অভিবাসীদের আটকাতে সীমান্তে সেনা টহল ও ইরানের ওপর অবরোধ ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিয়ে ভোট টানার চেষ্টা করেন ট্রাম্প।
তবে এত কিছু সত্ত্বেও সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রিপাবলিকানদের হাতছাড়া হতে যাচ্ছে। নির্বাচনী বিশ্লেষক নেট সিলভার ও তার ওয়েবসাইট ফাইভ থার্টি এইটের জরিপ অনুসারে প্রতিনিধি পরিষদ ডেমোক্র্যাটদের হাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা ৮০ শতাংশের বেশি। বিপরীতে রিপাবলিকানরা সিনেটে তাদের নিয়ন্ত্রণ শুধু বজায়ই রাখবেন না, সম্ভবত দুটি বা তিনটি অতিরিক্ত আসন দখল করবেন।