যুক্তরাষ্ট্র

ট্রাম্পের অসম্মানজনক বিদায়!

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৫ জানুয়ারি, ২০২১

ক্যাপিটল ভবনে কলঙ্কজনক হামলার পর প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অসম্মানজনকভাবে বিদায় করতে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা। গত বুধবার (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার ভোররাত) যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পকে অভিশংসনের (ইমপিচমেন্ট) প্রস্তাব পাস হয়। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা ও দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের। 

ডেমোক্রেটিক পার্টির আনা এ প্রস্তাবে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টিও সমর্থন দেয়। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির মেয়ে লিজ চেনিসহ ১০ জন রিপাবলিকান নেতা ভোট দেন এই প্রস্তাবের পক্ষে। ৪৩৫ সদস্যের প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাবটি ২৩২-১৯৭ ভোটে পাস হয়। সহিংস বিদ্রোহে উসকানি দেওয়ার জন্য দায়ী করে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রস্তাবটি আনা হয়।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যাওয়া ট্রাম্প আর মাত্র এক সপ্তাহ হোয়াইট হাউসে রয়েছেন। তবে এই ভোটের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অসম্মানের নতুন এক অধ্যায় যুক্ত হলো। ট্রাম্পই প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি দুবার প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হলেন। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদ্রোহ, ঘুষ নেওয়া কিংবা অপরাধমূলক কোনো কাজে জড়িত হলে তাকে সরানোর অস্ত্র এই অভিশংসন। প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া এই প্রস্তাব যাবে এখন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে শুনানিতে।

১০০ সদস্যের সিনেটে এখন ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সমান সমান। সেখানে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য সম্মতি দিলে তবেই ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়তে বাধ্য হবেন। কিন্তু হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প আছেনই মাত্র এক সপ্তাহ। এই সময়ের মধ্যে জটিল প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা অসম্ভব হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। ক্ষমতা অপব্যবহারের দায়ে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতেও নিম্নকক্ষে অভিশংসিত হয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু সিনেটে প্রস্তাবটি তোলা হলেও পার পেয়ে যান তিনি। প্রক্রিয়াটি শেষ হতে সময় লেগে গিয়েছিল এক বছরের বেশি সময়।

কিন্তু এবার সিনেটে ট্রাম্পের বিপক্ষে অভিশংসন প্রস্তাব তোলার জন্য সময়ই পাওয়া যাচ্ছে সাত দিন। ২০ জানুয়ারি স্থানীয় সময় দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন। নিয়মানুযায়ী এমনিতেই বিদায় হবেন ট্রাম্প। তা ছাড়া বর্তমানে অবকাশে রয়েছে সিনেট। অধিবেশন বসার কথা ১৯ জানুয়ারি। সে হিসেবে নির্ধারিত সময়ের আগে ট্রাম্পকে অভিশংসিত করার প্রস্তাব তোলার আগে সময় পাওয়া যাচ্ছে মাত্র এক দিন। তবে সিনেটে ডেমোক্রেটিক মাইনরিটি নেতা চাক শুমার বলছেন, উচ্চকক্ষে রিপাবলিকান মেজরিটি লিডার মিচ ম্যাককনেল চাইলে আগেভাগেই জরুরি অধিবেশন ডাকতে পারেন। তবে এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন ম্যাককনেল।

এক বিবৃতিতে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে তাড়াহুড়ো করলেও বাইডেনের ক্ষমতাগ্রহণ এবং ট্রাম্পের বিদায়ের আগে এই অভিশংসনের প্রক্রিয়া শেষ করা যাবে না। ম্যাককনেল বলেন, প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনে যেসব বিধান, পদ্ধতি ও সিনেটের যেসব নজির রয়েছে তাতে আগামী সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শপথ গ্রহণের আগে সুষ্ঠু বা জটিল বিচার সম্পন্নের কোনো সুযোগ নেই। ম্যাককনেল আরো জানান, এর আগে তিনজন প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করা হয়েছে। এতে সময় লেগেছিল যথাক্রমে ৮৩, ৩৭ ও ২১ দিন। এই প্রক্রিয়া সারতে যদি ২০ জানুয়ারি পেরিয়ে যায়, তবে এবার কিছু না হলেও ভবিষ্যতে আর কখনো প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না ট্রাম্প। এক মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের পর এবারের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে হারেন এই ধনকুবের। ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন বাইডেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ২০১৯ সালে একবার প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছিলেন। তবে সে দফায় সিনেটে ভোটাভুটিতে তিনি রক্ষা পান। এবার গত নভেম্বরে ভোটের পর হার স্বীকার না করে উল্টো কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার দৃষ্টিকটু প্রয়াস চালান ট্রাম্প। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসে জো বাইডেনের বিজয়ের স্বীকৃতি দেওয়ার দিনে বিক্ষুব্ধ ট্রাম্প সমর্থকরা ক্যাপিটল ভবনে নজিরবিহীন হামলা চালায়। তাতে নিহত হয় পাঁচজন।

ওই হামলার ঠিক আগেই ট্রাম্প তার সমর্থকদের উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তাতে উগ্রতার প্ররোচনা ছিল বলে সব মহল থেকে সমালোচনা ওঠে। রিপাবলিকান পার্টির অনেক নেতাও এর সমালোচনায় ‍মুখর হন। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালনের অযোগ্য ঘোষণা করে ট্রাম্পের হাত থেকে ক্ষমতা নিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের প্রতি আহ্বান জানায় কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট সদস্যরা। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্সকে।

২৫তম সংশোধনীতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট যদি শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে অপারগ হন, তাহলে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভাইস প্রেসিডেন্ট ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন। ওই সংশোধনীর ৪ নম্বর ধারায় বলা আছে, প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা হস্তান্তর করতে না পারলে ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য তাকে দায়িত্ব পালনে অপারগ ঘোষণা করতে পারেন। কিন্তু পেন্স সেই আবেদনে সাড়া না দিলে প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসনের প্রস্তাব আনার পথে হাঁটেন ডেমোক্র্যাট নেতারা।

এদিকে ক্যাপিটল ভবনে উগ্র সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলার পরও ট্রাম্পের মধ্যে কোনো অনুশোচনা দেখা যায়নি। ইতোমধ্যে তাকে দ্বিতীয়বার অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করায় তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, অভিশংসন ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। ক্যাপিটলে হামলার পর গত ১২ জানুয়ারি প্রথম জনসমক্ষে দেওয়া বক্তৃতায় এসব কথা বলেন ট্রাম্প। 

অন্যদিকে ক্যাপিটলে হামলার ঘটনার পর একের পর এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিদায়ী প্রেসিডেন্টের অ্যাকাউন্ট। মাল্টিমিডিয়া মেসেজ প্ল্যাটফর্ম স্ন্যাপচ্যাট গত সপ্তাহে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছিল। বুধবার তা স্থায়ী রূপ দিল প্রতিষ্ঠানটি। স্ন্যাপচ্যাটের এক মুখপাত্র বিবৃতিতে বলেছেন, গত সপ্তাহে আমরা ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিলাম। স্ন্যাপচ্যাট কমিউনিটির মঙ্গলের স্বার্থে আর কী দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছিলাম। মিথ্যা তথ্য ও ঘৃণা ছড়ানো এবং সহিংসতায় উসকানি দেওয়া আমাদের নীতিমালার পরিষ্কার লঙ্ঘন। তাই এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বার্থে আমরা তার অ্যাকাউন্টটি স্থায়ীভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads