ক্যামব্রিজ অভিধানে Troll-এর সংজ্ঞা উল্লেখ করা হয়েছে :1. someone who leaves an internationally annoying message on the internet, in order to get attention or cause trouble. 2. a message that someone leaves on the internet that is intended to annoy people
প্রথম সংজ্ঞার অর্থ হচ্ছে, মানুষের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য অথবা সমস্যা সম্পর্কে অবগত করার জন্য ইন্টারনেটে যে বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় সংজ্ঞার অর্থ হচ্ছে, ইন্টারনেটে মানুষকে বিরক্ত করার উদ্দেশ্যে কোনো বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া। ইন্টারনেট সুবিধা হাতের নাগালে পাওয়ায় আমরা অধিকাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ভালো কাজ না করে অযথা কাজে জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করছি। বিশেষভাবে বিভিন্ন অযৌক্তিক বিষয় ট্রল করে নিজের এবং হাজারো মানুষের সময় নষ্ট করছি। এত এত সময় অপচয়ের হিসাব আল্লাহর কাছে কীভাবে দেব আমরা?
ট্রল নিয়ে যা বলে ইসলাম : ক্যামব্রিজের দ্বিতীয় সংজ্ঞা অনুসারে মানুষকে বিরক্ত করার জন্য কোনো কিছু ট্রল করা বৈধ নয়।
প্রথম সংজ্ঞার আলোকে কোরআন ও হাদিস : আল্লাহ বলেছেন- হে মুমিন, তোমরা বেশি বেশি অনুমান করা থেকে বেঁচে থাকো, নিশ্চয় কিছু অনুমান পাপ এবং গোয়েন্দাগিরি করো না (অন্যের দোষ খোঁজার উদ্দেশ্যে), একজন আরেকজনের গীবত করো না।... (আল হুজুরাত : ১২) এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, অনুমাননির্ভর কোনো কিছু ট্রল করা উচিত নয়। বিশেষ করে কোরআন ও হাদিসের বিষয়গুলো। কারণ কোরআনের আয়াত ও হাদিস নিশ্চিত না হয়ে বললে বা লিখলে পুণ্যের বদলে পাপ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারো মন্দ বিষয়ে নিশ্চিত হলেও তাঁকে সংশোধন করার চেষ্টা করতে হবে অথবা রাষ্ট্রীয় আইন ও ধর্মীয় বিধান মেনে তাঁর প্রতিবাদ করতে হবে। কিন্তু সে মন্দ লোককে ট্রল করে অসংখ্য মানুষের কাছে হেয় করা ইসলাম সমর্থন করে না। গোয়েন্দাগিরি করে দোষ বের করে তা ট্রল করা উচিত নয়। যে ট্রলের মাধ্যমে গীবত হয় এমন কোনো কিছু ট্রল করাও বৈধ নয়।
বিশৃঙ্খলা হত্যার চেয়েও ভয়াবহ (আল বাকারা : ১৯১) এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, এমন কিছু ট্রল করা যাবেনা যার মাধ্যমে সমাজে বা রাষ্ট্রে কিংবা নানাধর্মের ও মতের মানুষের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। হে মুমিন, তোমরা এক সম্প্রদায় আরেক সম্প্রদায়কে উপহাস করো না, হতে পারে (যাদের উপহাস করা হচ্ছে) তাঁরা (যারা উপহাস করছে) তাদের চেয়ে উত্তম; কোনো নারী যেন অন্য নারীকে উপহাস না করে, হতে পারে (যে নারীদের উপহাস করা হচ্ছে) তারা (যারা উপহাস করছে) তাদের চেয়ে উত্তম; পরস্পরকে দোষারোপ করো না... (আল হুজুরাত : ১১) যা ট্রল করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে তার অধিকাংশই অন্যকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা উদ্দেশ্য; যে বিষয়ে ইসলামের নিষেধাজ্ঞা এসেছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে বড়কে শ্রদ্ধা করে না এবং ছোটকে স্নেহ করে না, সে আমার উম্মত নয়। (আল হাদিস)
এ হাদিস অনুসারে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা অন্য কিছুর মানহানি হয় এমন বিষয় ট্রল করা বৈধ নয়। সবসময় মানুষের সম্মানের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। যার যতটুকু সম্মান প্রাপ্য তাকে তা দেওয়ার শিক্ষা ইসলাম আমাদের দেয়। তবে এমন সমস্যা যা ট্রল করলে দেশের আইন লঙ্ঘন হবে না, ইসলামী বিধানেও বাধা নেই সেসব সমস্যা ট্রল করে সাধারণ মানুষকে সমস্যামুক্ত রাখার চেষ্টা করা সওয়াবের কাজ। ট্রল না করলে যাদের ভালো লাগে না, তারা ভালো ভালো বিষয় ট্রল করুন। কীভাবে বিনয় অর্জন করতে হয়, কীভাবে কোরআন ও কোরআন সংশ্লিষ্ট জ্ঞান শিখতে ও শেখাতে হয়। কীভাবে রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়, পাবলিক প্লেসে মানুষের সম্মান বজায় রাখতে হয়, মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হয় ইত্যাদি বিষয়ের অনেক অথেনটিক রিসোর্স থাকে, সেসব অথেনটিক রিসোর্সগুলো ট্রল করলে করতে পারেন। এক হাদিসে এসেছে, লম্বা হাদিসের শেষ অংশ- ঈমানের সর্বশেষ অংশ হলো, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া। আল্লাহ বলেছেন, যে অণুপরিমাণ ভালো কাজ করবে, সে তা দেখতে পাবে। যে অণুপরিমাণ খারাপ কাজ করবে, সে তা দেখতে পাবে। (সুরা ঝিলঝাল) কোনো কিছু ট্রল করার আগে বা যে কোনো কাজ করার আগে এ দুটি আয়াত আমাদের স্মরণ করা উচিত।
লেখক : আলেম ও গবেষক