যুক্তরাষ্ট্র

জয়ের পথে বাইডেন

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ৬ নভেম্বর, ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সর্বশেষ ফলাফলে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন এগিয়ে রয়েছেন। কেবল ফলাফলে নয়, ব্যাটলগ্রাউন্ড কিংবা সুইংস্টেটগুলোতেও তার অবস্থান তুলনামূলক ভালো। তবে পাঁচ অঙ্গরাজ্যের ৬০টি ইলেকটোরাল কলেজের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে হোয়াইট হাউসের চাবি কার হাতে যাচ্ছে। ফলে কাগজে-কলমে খানিকটা আশা জিইয়ে রইল ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও। 

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলের জন্য সারা বিশ্বের মানুষ উদ্বিগ্ন। চূড়ান্ত ফলের অপেক্ষায় আছেন সবাই। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ক্ষমতাধর দেশটির ৪৫টি অঙ্গরাজ্য থেকে পাওয়া ৪৭৮টি ইলেকটোরাল কলেজের মধ্যে ২৬৪টি গেছে বাইডেনের ঘরে। প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৪টি।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজের মধ্যে লড়াই চলছে দুই প্রার্থীর। ছয়টি ইলেকটোরাল পেলেও জয়ের ‘ম্যাজিক ফিগার’ ২৭০টি ইলেকটোরাল পেয়ে যাবেন বাইডেন। সেজন্য বাকি পাঁচ অঙ্গরাজ্যের ফলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে তাকে। এর মধ্যে যে কোনো একটিতে জয় পেলেই চলবে তার।

ভোটের ফলাফল ঘোষণা করতে না পারা পাঁচ অঙ্গরাজ্য হলো- জর্জিয়া, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া ও আলাস্কা। রাজ্যগুলোতে মোট ইলেকটোরাল কলেজ রয়েছে ৬০টি। তবে বার্তা সংস্থা এপি থেকে প্রাপ্ত তথ্য তুলে ধরে আল-জাজিরার হিসাবে বলা হয়েছে, অঙ্গরাজ্য পাঁচটির চারটিতেই এগিয়ে ট্রাম্প। একটিতে এগিয়ে বাইডেন।

এপির তথ্যমতে, জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যটিতে রয়েছে ১৬টি ইলেকটোরাল। সেখানে শতভাগ ভোটগণনা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ৪৯.৬২ শতাংশ ভোট নিয়ে এগিয়ে ট্রাম্প, আর বাইডেন পেয়েছেন ৪৯.১৫ শতাংশ।

নেভাদায় ইলেকটোরাল ৬টি। ৭৪.৭৬ শতাংশ ভোটগণনায় দেখা যাচ্ছে ৪৯.৩৩ শতাংশ নিয়ে এগিয়ে বাইডেন। ৪৮.৬৯ শতাংশ নিয়ে খুব কাছাকাছি রয়েছেন ট্রাম্প।

নর্থ ক্যারোলাইনায় ১৫ ইলেকটোরালের ভোটগণনা শতভাগ হয়েছে। এর মধ্যে ৫০.০৯ শতাংশ নিয়ে এগিয়ে ট্রাম্প; বাইডেন পেয়েছেন ৪৮.৬৯ শতাংশ ভোট।

গুরুত্বপূর্ণ পেনসিলভানিয়ায় ইলেকটোরাল ২০টি। এখানে ৮৬.৭২ শতাংশ ভোটগণনা শেষে দেখা যাচ্ছে, ৫০.৭২ শতাংশ ভোট নিয়ে এগিয়ে ট্রাম্প, বাইডেন পেয়েছেন ৪৮.১৩ শতাংশ ভোট।

আলাস্কায় মাত্র তিনটি ইলেকটোরাল। অর্ধেকের কিছু বেশি ভোটগণনায় দেখা যাচ্ছে, ৬৫.১১ শতাংশ নিয়ে অনেক এগিয়ে ট্রাম্প। বাইডেন পেয়েছেন মাত্র ৩৩.৫১ শতাংশ ভোট।

এক নেভাদার ভোটেই বদলে যেতে পারে সব সমীকরণ। পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া ও আলাস্কায় এগিয়ে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ চারটি অঙ্গরাজ্যের সম্মিলিত ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে ৫৪টি। এগিয়ে থাকা এই চারটি রাজ্যে জিতলে ট্রাম্পের মোট ইলেকটোরাল ভোট হবে ২৬৮টি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে প্রয়োজন হয় ন্যূনতম ২৭০ ভোট। বিপরীতে, শুধু নেভাদায় এগিয়ে রয়েছেন জো বাইডেন। এ অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে ৬টি। সুতরাং এই একটি রাজ্যের জয়ই তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট।

তবে নেভাদায় বিজয় এত সহজ হচ্ছে না বাইডেনের। ৭৫ শতাংশ ভোটগণনা শেষে প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে মাত্র আট হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। এখনো ৩ লাখ ৯৮ হাজার ভোটগণনা বাকি। ফলে যেকোনো সময় পাল্টে যেতে পারে সব হিসাব-নিকাশ।

নেভাদায় এখন পর্যন্ত ৫ লাখ ৮৮ হাজার ২৫২টি (৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ) ভোট পেয়েছেন বাইডেন। সেখানে ট্রাম্প পেয়েছেন ৫ লাখ ৮০ হাজার ৬০৫টি (৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ) ভোট। বাকি চারটি অঙ্গরাজ্যের পাশাপাশি নেভাদায় জিততে পারলে ট্রাম্পও হতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।

আরিজোনা ও নেভাদায় বাইডেনই জিতবেন এমনটা ধারণা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া ও মেইনের সেকেন্ড কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্টে এগিয়ে থাকতে হবে ট্রাম্পকে। আলাস্কার ভোট ট্রাম্পের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

হোয়াইট হাউসের দৌড়ে টিকে থাকতে পেনসিলভানিয়ায় জেতাও ট্রাম্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আরিজোনাতেও বাইডেনকে পেছনে ফেলতে হবে বর্তমান প্রেসিডেন্টকে।

নাটকীয় নির্বাচন শেষে ২৬৪টি ইলেকটোরাল ভোট বা আসন জিতে হোয়াইট হাউস দখলের পথে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেন বলেছেন, বহু লড়াইয়ের পর অর্জন করা মার্কিন গণতন্ত্র কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার নিজ রাজ্য ডেলাওয়ারে কমলা হ্যারিসকে সঙ্গে নিয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি একথা বলেন।

জো বাইডেন আরো বলেছেন, এটা পরিষ্কার যে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেকটোরাল ভোটের জন্য আমি পর্যাপ্তসংখ্যক রাজ্যে জয় পেয়েছি। তবে আমি জয়ের ঘোষণা দিতে আসিনি। এটা জানাতে এসেছি যে, যখন গণনা শেষ হবে আমাদের বিশ্বাস আমরা বিজয়ী হব।

এদিকে ট্রাম্প শিবিরের পক্ষ থেকে কোনো প্রমাণ ছাড়াই ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন, জর্জিয়া ও মিশিগান অঙ্গরাজ্যে ভোটগণনা বন্ধ করতে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে ট্রাম্প শিবির। শেষ পর্যন্ত এর ফলাফল কী হতে পারে? আদালতেই কী মীমাংসা হবে এবারের মার্কিন নির্বাচনের?

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প চাইলেও এবারের নির্বাচনে আদালত হয়তো চূড়ান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিকারী হতে পারবে না। তারা বলছেন, ভোটের দিনের আগে গৃহীত ভোটগণনা বন্ধের নির্দেশ দিয়ে ট্রাম্পকে খুশি করার মতো কোনো সিদ্ধান্ত হয়তো আদালত নেবে না। কিংবা মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ার মতো হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের অঙ্গরাজ্যগুলোতে আদালতে অভিযোগ জানানোর পর সেগুলোর ফল বদলে যাওয়া নিয়ে সংশয়ী তারা।

নির্বাচনি প্রচারের সময় থেকেই ডাক ভোটের বিরোধিতা করে আসছেন ট্রাম্প। কোনো প্রমাণ ছাড়াই তিনি দাবি করেছেন, এতে জালিয়াতি হবে, যা মার্কিন ইতিহাসে বিরল কিন্তু ট্রাম্প অটল। তিনি বলে চলেছেন, আমাদের জাতির জন্য এটি বড় ধরনের জালিয়াতি। আমরা চাই আইন সঠিকভাবে কাজে লাগানো হোক। তাই আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাব। আমরা চাই সব ভোট বন্ধ হোক।

জালিয়াতির অভিযোগের পক্ষে ট্রাম্প কোনো প্রমাণ হাজির করেননি কিংবা সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে মামলার বিস্তারিতও জানাননি। গত বুধবারই তার প্রচার শিবিরের পক্ষ থেকে পেনসিলভানিয়ায় দেরিতে আসা ডাক ভোটগণনা বন্ধের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। এই বিষয়ে আগে থেকেই একটি মামলা রয়েছে।  রিপাবলিকানরা আরো কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছেন আদালতে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মিশিগানের ভোটগণনা বন্ধ করার আবেদন।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প শিবিরের পক্ষ থেকে হয়তো কোনো নির্দিষ্ট ব্যালট বা ভোট এবং গণনা প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ করা হয়ে থাকতে পারে। এমনটি হলে চূড়ান্ত ফলাফলে এসব অভিযোগের প্রভাব নিয়ে তাদের সংশয় রয়েছে।

ওহাইয়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির নির্বাচনি আইন বিশেষজ্ঞ নেড ফলে জানান, ২০০০ সালের নির্বাচনের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার উপাদান নেই এবারের নির্বাচনে। ওই সময় সুপ্রিম কোর্ট ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোরের বিরুদ্ধে জর্জ ডব্লিউ বুশের পক্ষে ভোট পুনরায় গণনা বন্ধ করেছিল।

তিনি বলেন, ভোটের ফলাফল নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্ত নির্ধারক হবে কিংবা কীভাবে এটির সমাধান হবে তা বলার মতো সময় এখনো আসেনি।

ট্রাম্পের অ্যাটনি জেনা এলিস ভোটগণনাকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানানোর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের যদি আইনি চ্যালেঞ্জে যেতে হয় তা একেবারে অপ্রত্যাশিত হয়। ট্রাম্প নিশ্চিত করতে চান যেন ভোট চুরি না হয়।

সুপ্রিম কোর্ট সবার আগে যে বিরোধ নিষ্পত্তি করেছে তাহলো সেপ্টেম্বরে পেনসিলভানিয়ার শীর্ষ আদালতের দেওয়া একটি রায় নিয়ে। ওই রায়ে ভোটের দিন পর্যন্ত ডাকে পাঠানো ভোটগুলো পরদিনও গণনা করা যাবে।

ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের অস্টিন স্কুল অব ল’র অধ্যাপক স্টিভ ভ্লাডেক বলেন, সাধারণ প্রক্রিয়া ব্যতিরেকে প্রেসিডেন্ট বা তার প্রচার শিবির দ্রুততর উপায়ে কিছু করতে চাইলে আদালত এমন উদ্যোগ খারিজ করে দেবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads